ওসমানী হাসপাতালে কর্মীদের কাছে জিম্মি রোগী ও স্বজন!
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। নিয়োগদাতা কোম্পানি বেতন না দেওয়ায় এসব কর্মচারীরা হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করে ‘বখশিশ’। এসব কর্মচারীদের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও যেন অসহায়। তাদের দাবি, হাসপাতালে স্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সিলেট বিভাগের কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসা নিতে এসেই রোগী ও তাদের স্বজনদের উৎকোচ দিতে হচ্ছে হাসপাতালের বিভিন্ন ফটকে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ড ও ওয়ার্ডের কর্মচারীদের। টাকা না পেলে দুর্ব্যবহার করে ফটক থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হয় রোগীর স্বজনদের। অনেক সময় হাসপাতালের কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হন রোগীর স্বজনরা।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসমানী হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ১৮০ জন কর্মী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। যমুনা স্টার সেভ গার্ড সার্ভিসেস লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি দরপত্রে সর্বনি¤œ দরদাতা হয়ে কর্মচারী সরবরাহের দায়িত্ব পায়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ কোম্পানি ১৮০ জন কর্মচারীকে মাসিক মাত্র ১৪শ’ টাকা বেতন ধরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। এতো কম টাকায় কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে ওই সময়ই প্রশ্ন ওঠেছিল। দিনে মাত্র ৪৬ টাকা বেতনে নিয়োগপ্রাপ্তরা অনিয়মে জড়িয়ে পড়বে, এরকমটাই ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর গত ১১ মাস ধরে এসব কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করছে না যমুনা স্টার। এ কোম্পানি হাসপাতাল থেকে বেতন উত্তোলন করলেও সেটা কর্মচারীদের হাতে পৌঁছায় না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী সিলেটভিউ২৪ডটকমকে জানান, গত ১১ মাস ধরে তারা যমুনা স্টার কোম্পানির কাছ থেকে বেতন পাচ্ছেন না। উপরন্তু প্রতি সপ্তাহেই কোম্পানিকে টাকা দিতে হয়। বিভিন্ন বিভাগ ভেদে টাকার অঙ্কও কম-বেশি হয়ে থাকে। টাকা না দিলে কিংবা কোম্পানির বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয় দেখানো হয়। কর্মচারীরা জানান, বেতন না পাওয়ায় এবং উল্টো কোম্পানীকে টাকা দেয়ার কারণে তারা বাধ্য হয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। হাসপাতালে প্রত্যেক ফটকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা ভেতরে ঢুকতে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। প্রতিবার ঢুকতে নতুন করে টাকা দিতে হয়। এক্ষেত্রে রোগীর সাথে থাকা কোন স্বজনকে দিনে অন্তত ৮-১০ বার হাসপাতালের বাইরে বেরোতে হয় এবং প্রতিবার ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দিনে তাদের দেড় শ’ থেকে দুই শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। যেসব কর্মচারী হাসপাতালের ভেতরে কাজ করেন, তারা নানাভাবে রোগীদের হয়রানি করে টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় রোগীর সাথে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র চুরিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা মৌলভীবাজারের রাজনগরের কলিম উদ্দিন বলেন, ‘ঢুকতে গেলেই কর্মচারীরা গেইটে টাকা নেয়। টাকা না দিলে ভেতরে ঢুকতে তো দেয়ইনা, উল্টো চরম খারাপ ব্যবহার করে।’রাবেয়া খাতুন নামের এক মহিলা বলেন, ‘রোগী দেখতে আসা আমার দুই স্বজনকে ৫০ টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকাতে হয়েছে।’
এ ব্যাপারে যমুনা স্টার সেভ গার্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘১৮০ জন কর্মচারীর মধ্যে ১৪০ জনকে আমরা বেতন দেই। বাকিদের নিয়োগের সময়ই বলে দেয়া হয়েছিল, তারা বেতন পাবে না। এরা রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে ‘বখশিশ’ নিয়ে চলে।’ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক সিলেটভিউ২৪ডটকমকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আমরা নিয়োগদাতা কোম্পানির কাছে কর্মচারীদের বেতন সরবরাহ করি। তারা বেতন পরিশোধ করে কিনা, তা তাদের ব্যাপার। এ নিয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’তিনি বলেন, ‘রোগী ও তাদের স্বজনদের হয়রানি বন্ধে স্থায়ী জনবল নিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমানে ৯শ’ শয্যার এ হাসপাতালে ৭৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। এগুলো পূরণ করা গেলে সবধরণের হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।’