বার্তা ডেক্সঃঃপৃথিবীর আলোর মুখ দেখতেই নির্মম এক নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে সদ্য জন্মানো এক শিশু। মা-বাবার ভালোবাসা-আবেগ-অনুভূতি কোনকিছুই স্পর্শ করতে পারেনি শিশুটিকে। কন্যা হয়ে জন্ম নেয়াই ছিল তার বড় অপরাধ। শীতের রাতে অন্ধকারে শিশুটিকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায় তার নিষ্ঠুর মা-বাবা। বুধবার মধ্যরাতে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান হাসপাতালের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। খবর পেয়ে অনেক নিঃসন্তান দম্পত্তি শিশুটি দত্তক নেয়ার জন্য ছুটে যান হাসপাতালে। বর্তমানে শিশুটি বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নতাকর্মী জোবেদার বেগমের বাড়িতে রয়েছে।
এলাকাকাবাসী ও হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধোপাকল গ্রামের নিরাপদ বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস তার গর্ভবতী স্ত্রী পল্লবীকে নিয়ে বুধবার বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। রাতে স্বাভাবিকভাবে পল্লবী একটি ফুটফুটে সন্তান জন্ম দেন। যখন তারা জানতে পারেন সন্তানটি ছেলে নয় মেয়ে হয়েছে, তখনই চিন্তার ভাজ পড়ে পাষ- মা-বাবার কপালে। আনন্দের পরিবর্তে নেমে আসে বিষাদ। তাদের ঘরে পপি রানী (৯) ও দীপা (৫) নামে আরও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রাতেই স্বামী-স্ত্রী ছাড়পত্র না নিয়ে শিশুটি হাসপাতালের বিছানায় ফেলে পালিয়ে যায়।
বুধবার শিশুটিকে দত্তক নিতে আসা জোবেদা বেগম বলেন, শিশুটিকে নিজের সন্তান মনে করে নিয়েছি। ইতিমধ্যে ওর জন্য আমরা শীতের অনেক জামা কাপড় কিনেছি। আমার ছোট বোন মোমেনার বুকের দুধ খাচ্ছে শিশুটি। এখন অনেকেই আমার কাছ থেকে দত্তক নিতে বাড়িতে ভিড় করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়, শিশুটির পিতা প্রদীপ বিশ্বাসকে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি পথে-ঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করে অতিকষ্টে সংসার চালাই। আমার আগের আরও দু’টি মেয়ে আছে। তাদের ভরণ-পোষণ দিতে পারছি না। এবার আশা ছিল ছেলে হবে। কিন্তু সেই আশা পুরণ হলো না। এ কারণে একজন হিন্দু পরিবারকে শিশুটিকে দত্তক দিতে চেয়েছি। কিন্তু হাসপাতালের স্টাফ শিশুটি নিতে চাইলে রাতে তাকে দিয়ে চলে যাই। এখন শুনছি দত্তক দেয়া-নেয়া নিয়ে নাকি অনেক ঝামেলা। এ কারণে শিশুটি বাড়ি নিয়ে যাবো।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হোসাইন বলেন, আমার জানা মতে- আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া দত্তক নেয়া যায় না। আমরা শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবার কাছে ফেরত দেয়ার চেষ্টা করছি। বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরশাদ হোসেন বলেন, স্বাভাবিকভাবে শিশুটির জন্ম হয়েছে। সকালের দিকে দেখা যায় হাসপাতালে শিশু ও তার মা নেই। রাতের কোন এক সময় প্রসূতি ওই মা পালিয়ে গেছে। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৫৬ বার