বার্তা ডেস্ক :: করোনাকালে বাংলাদেশে বিয়ে কমে গেছে। রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকার বিবাহ নিবন্ধকের ধারণা, অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, সেটার প্রভাব সেই এলাকায়ও পড়েছে। করোনাকালে সমাজের সব স্তরেই বিয়ে কমেছে। সাথে বেড়েছে ডিভোর্স। অন্যদিকে বাল্যবিবাহ বাড়ার ইঙ্গিতও দেখা গেছে কোনো কোনো গ্রামাঞ্চলে।
বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধনের কাজটি নানা ব্যবস্থাপনায় হয়ে থাকে। এর মধ্যে মুসলিম বিবাহ নিবন্ধকরা স্থানীয়ভাবে কাজী হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশ কাজী সমিতির দেয়া তথ্য অনুসারে, দেশে ১০ হাজারের মতো কাজী রয়েছে। সব বিবাহের ডেটা কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। কাজীরা তাদের বালাম বইয়ে তথ্য সংরক্ষণ করেন। বাংলাদেশ কাজী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জলিল মিয়াজী গুলশান এলাকার কাজী। তার যাতায়াত উচ্চবিত্তদের বিয়েতে।
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘গুলশান-বনানীতে সাধারণ কোনো বিবাহ হয় না। অনেক বড় বড় আয়োজন থাকে, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বাইরের সংস্কৃতি থাকে। এসব আয়োজনের মাঝে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাও যত্নের সাথে করা হয়।” তিনি জানান, গুলশানের অনেক বিয়েতে অনেকে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্য অনেক বড় বড় আলেম-পীর-মাশায়েখদেরও নিয়ে আসেন। আবদুল জলিল মিয়াজী বলেন, ‘‘গত বছর করোনার প্রথম ধাপে সরকার যেমন সচেতন ছিল, আমরাও সচেতন ছিলাম। লকডাউনের পুরোটাই আমাদের অফিস বন্ধ ছিল। কিছুদিন পর পরিস্থিতির উন্নতি হলে টেলিফোনে বা স্কাইপে কিছু বিয়ে শুরু হয়।”
বাংলাদেশে টেলিফোনে বিয়ের চল হয় প্রবাসীদের কারণে। পাত্র প্রবাসে থাকে, সেখান থেকে টেলিফোনে বিয়ে আর রেজিস্ট্রি ডাকে নিবন্ধন- এমন চিত্র বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় দেখা যায়।গত কয়েক বছরে বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রেও টেলিফোনের বিয়ে উঠে এসেছে। করোনাভাইরাসের এই সময়ে একাধিক স্থানে বসে একত্রে বিয়ের এই আনুষ্ঠানিকতা একেবারে পাল্টে গেছে। টেলিফোনে বিয়েতে বর-কনে প্রবাসে থাকলেও কাজীসহ বাকিরা সবাই একই জায়গায় থাকতেন। আবদুল জলিল মিয়াজী করোনাভাইরাসের সময়ে এমন অনেক বিয়ের কাজ করে দিয়েছেন, যেগুলো হয়েছে স্কাইপ/জুমের মতো প্ল্যাটফর্মে। সেখানে কাজী-বর-কনে সবাই ছিলেন যার যার বাসায়/অফিসে।ভিডিও কলে সম্পাদন করা হয় বিয়ের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে বা পরে সময়-সুযোগ মতো সাবধানতার সাথে নিয়ে আসা হতো বিবাহ নিবন্ধনের স্বাক্ষর। করোনা মহামারির মাঝে গুলশানের মতো এলাকায়ও কমে গেছে বিবাহের সংখ্যা। সেই এলাকার বিবাহ নিবন্ধক বলছেন, বিয়ের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। আগে যেখানে মাসে ২৫টা বিয়ে হতো, এখন সেখানে বিয়ে হয় ৫টা। তিনি বলেন, ‘‘২০২০ সালে ডকডাউন শুরুর পর টানা অনেকদিন বন্ধ ছিল অফিস। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ধীরে ধীরে অফিস খোলা হয়।” তার মতে, ‘‘পাসপোর্ট করানো বা বিদেশ যাত্রার পূর্বে অনেকে বিবাহ বা কাবিন করে। এগুলো জরুরিভিত্তিতে করতে হয়। এরকম কিছু কাজ তখন আসতো। এরপর আস্তে আস্তে বিবাহ বেড়েছে। তবে সেটাও আগের তুলনায় প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ।”
বাংলাদেশ কাজী সমিতির এই সভাপতি বলেন, ‘‘কেবল গুলশান নয়, বিবাহ কমার এই চিত্র সারা দেশের। গ্রামে গঞ্জে অনেক এলাকায় মাসেও একটা বিয়ে হয় না।” বিয়ে মানেই নানা আয়োজন, নানা উৎসব। এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকের জীবন-জীবিকা। নিবন্ধনে বাধ্যবাধকতা থাকায় বিবাহ কমলেও কাজীরা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারছে। কিন্তু একেবারেই যেন পথে বসতে শুরু করেছেন ঢাকাসহ সারাদেশের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেটরের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ডেকোরেটর সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সারা দেশে দুই-তিন হাজার ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আছে। এক সময় এদের বেশ বড় আকারের ব্যবসা ছিল।”
তিনি বলেন, ‘‘এরপর আসে করোনাভাইরাস। এসে সব বন্ধ করে দেয়। গত ১৪ মাস ধরে যে সেক্টরে কোনো কাজ নেই, সেটা হচ্ছে এই সেক্টর।” এর সমাধান কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সমাধান তো নাই। করোনাভাইরাস বলছে, একত্রিত হওয়া যাবে না। আর একত্রিত না হলে আমাদেরকে মানুষ ডাকবে কেন?”
বিয়ে কোয়ারান্টাইনে
করোনার মাঝে বিয়ে করতে গিয়ে অনেক বর-কনেকে যেতে হয়েছে বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে। বিশেষ করে, বিদেশ থেকে এসে দুই সপ্তাহের আগেই বিয়ে করতে যাওয়ার কারণে অনেক প্রবাসীকে পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছে কোয়েরান্টাইনে। সংক্রমণের প্রথম দিকে সংবাদপত্রে প্রায়ই দেখা গেছে এমন খবর। তবে অনেক ছোট আয়োজনে বিয়ে করেও নিজেদের ইচ্ছায় কোয়ারান্টাইনে যাওয়ার একটি ঘটনা পাওয়া গেছে। সৌজন্যে : বিডি-প্রতিদিন
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৬৪ বার