করোনা কালের অযাচিত ভাবনা
ভাবতে বেশ লাগে, ব্রিটিশ লাইব্রেরি আমার সাক্ষাৎকার ও কবিতা আর্কাইভ করেছে, গুগল সার্চ দিলে বা এ্যালেক্সাকে জিজ্ঞেস করলে বৃটেনে বাংলাদেশি বাইলিংগুয়াল কবি হিসেবে শীর্ষেই আসে আমার নাম। গত বছর এথেন্সের এ পোয়েটস আগোরা’র আবাসিক কবির মর্যাদা অর্জন করেছি। আগামী বছর রূমানিয়া যাচ্ছি আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলনে। এ যাবত যা পেয়েছি তা কঠোর শিল্প সাধনায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পেয়েছি। শিক্ষক ও প্রশিক্ষক পেছি প্রখ্যাত ও প্রিয় মাইকেল রোজেন, বেঞ্জামিন জাফানায়া, ওয়েন্ডি কোপ ও জন হোগলির মত কবিগন। জ্ঞানের মতই সাহিত্যের জগতেও কোন শর্টকাট রাস্তা নেই। তবু একখানা উপন্যাস লিখে নিমেষে যে অর্জন সম্ভব একখানা কবিতায় হয় না। কয়েক খানায় ও না। সে জন্য পূর্ণাঙ্গ একখানা কাব্য গ্রন্থ হতে হয়। এবং তা যেন তেন নয়, তা হতে হয় বাছাই বা নির্বাচিত কবিতায় পরিপূর্ণ। আমার এ ক্ষুদ্র জীবণে বাংলাদেশে কবি হিসেবে একটি অবস্থান অর্জিত হলেও, পঞ্চাশ বছর ধরে কবিতা লিখলেও বাংলা ভাষায় ও আমার তা নেই।
ত্রিশ বছর ধরে অনেক বার একটি প্রশ্ন শুনতে হয়েছে, আমি কেন দেশে থাকলাম না, থাকলে আজ আমি ঐ ঐখানে থাকতাম। অমুক লেখক তমুক লেখক এদের চাইতে ছোটতো না আমি। দেশের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি পুরস্কার তো পেতে পারতাম। তখন আমার নিরোদ সি চৌধুরীর কথা মনে পড়ে। ‘আমার বাঙালি জীবন অবস্থা চক্রে বিদেশে- নির্বাসনেও বলা চলে শেষ হইতে চলিয়াছে। কিন্তু সেটাও আমার জীবনে ব্যর্থতা না আনিয়া সার্থকতাই আনিয়াছে। বিলাতে বাস করিয়া আমি যে ভাবে কাজ করিতে পারিতেছি(আমার ক্ষেত্রে যা যা করিতেছি) দেশে থাকিলে তাহা কখনই সম্ভব হইতো না। ইহাই যদি যথেষ্ট না হয় আমি এটাও বলিতে পারি যে, বেশি ই পাইয়াছি। …… তারপর খ্যাতি বা সমাদর লাভ ও কম হয় নাই।… অবশ্য আমি একথা কখনই বলিব না যে, আমি আমার দেশবাসীর কাছ সমাদর পাই নাই, কিন্তু তাহা গোপনে অপ্রকাশিতভাবে। বিদেশে সে বিষয়ে আমার অনুমানের শরণ নিতে হয় নাই।’ তবে দেশে যে অবস্থান আছে তা প্রিয় পাঠক আপনাদেরই দান। আপনারাই আমার পাথর!! করোনা কালের অযাচিত ভাবনা (লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)