কানাডায় বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে হস্তান্তরের দাবিতে মানববন্ধন
সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকে থেকে।। বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহিস্কার করে বাংলাদেশ সরকারের হাতে হস্তান্তরের দাবিতে কানাডা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে এক মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা এবং গণ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ২০ মে দুপুর ১২টায় মন্ট্রিয়লের পার্ক এক্সটেনশন এলাকার মেট্রোর পাশে এই মানববন্ধন ও গণ স্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে বলে আয়োজকরা বলেছেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নূর চৌধুরী ১৯৯৬ সাল থেকে কানাডায় বসবাস করছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল অব. নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহিষ্কার করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করার দাবি নিয়ে দু’দেশের প্রধান মন্ত্রী, পররাস্ট্র মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রকমের চেষ্টা চললেও দু’দেশের কিছু আইনগত কারণে সম্ভব হয়ে উঠছে না। বহিস্কার প্রক্রিয়া চেষ্টার ধারাবাহিকতায় কানাডা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মন্ট্রিয়লের এ মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে বিভিন্ন রকমের ব্যানার ফেস্টুন প্লেকার্ড নিয়ে াবপুল সংখ্যাক প্রবাসীরা উপস্থিত শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন। মানববন্ধনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, আওয়ামীলীগ নেতা শ্যামল দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান, ফনিভূষণ ভট্টাচার্য, ইতরাদ জুবেরী সেলিম, অমলেন্দু ধর, বাবলা দেব, জিয়াউল হক জিয়া প্রমুখ। বক্তারা কানাডা একটি মানবাধিকারের দেশ, এ দেশে আত্মস্বীকৃত খুনির আশ্রয়স্থল হতে পারেনা বলে মন্তব্য করে অনতিবিলম্বে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরৎ দেওয়ার জন্য কানাডার প্রধান মন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানান। মানববন্ধন চলাকালে মূলধারার মানুষরা গাড়ীর হর্ণ বাজিয়ে সমর্থণ জানান। কানাডাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বেশ ক’জন কর্মকর্তাকেও মানববন্ধনের পাশে পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। মানববন্ধন শেষে মন্ট্রিয়লর একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তাসহ স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতৃবৃন্দ এক সভায় মিলিত হয়ে আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে মত বিনিময় করেন। জানাযায়, কানাডার বিভিন্ন প্রবিন্স ও শহর থেকে বাংলাদেশী প্রবাসীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে কানাডার প্রধান মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অপরদিকে কানাডায় পালিয়ে থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে লেখা বাংলাদেশি কানাডিয়ান কিশোরী মাশকুরা তাবাসসুম তাথৈ গত মার্চে লেখা চিঠির ইতিবাচক জবাব দিয়েছে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সম্প্রতি তাথৈকে লেখা পাল্টা চিঠিতে জাস্টিন ট্রুডোর দপ্তর থেকে তার বিশেষ সহকারি জীবন সিং স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘জনাব’ নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি সম্বলিত চিঠিটি জননিরাপত্তা ও জরুরী অবস্থা প্রস্তুতি মন্ত্রী রালফ গুডেল এবং, আইন মন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল জুডি উইলসন রেনোল্ড এর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। কানাডা থেকে কাউকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার জননিরাপত্তা ও জরুরী অবস্থা প্রস্তুতি মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় ও এটর্নি জেনারেলের দপ্তরের বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, চিঠির বিষয়বস্তু যথাযথ বিবেচনা পাবে’।
গত মার্চ ৮ তারিখে বাংলাদেশি কিশোরী তাথৈ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক চিঠি প্রেরণ করে। সেখানে তাথৈ লিখেছিল যে, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আত্মস্বীকৃত খুনি নুর চৌধুরী কানাডাকে তার নিরাপদ আশ্রয় বানিয়ে ফেলেছে। গত ২১ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নুর চৌধুরী টরেন্টোতে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করছে। কানাডার মতো একটি দেশ নুর চৌধুরীর মতো আত্মস্বীকৃত খুনির নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে না।
কানাডায় ‘রিফিউজি স্ট্যাটাস’ আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত, এমনকি ডিপোর্টেশন আদেশ মোকাবেলা করার পরেও কানাডা থেকে নুর চৌধুরীকে আইনি কারণে বহিষ্কার করা যাচ্ছে না। অন্য কোন দেশে ফেরত গেলে ফাঁসির সাজা ভোগ করতে পারেন, এমন কোনো ব্যক্তি কানাডা ভ্রমণে আসলে, নিজে উদ্যোগী হয়ে না ফেরত গেলে, তাকে সরকার জোর করে ফেরত পাঠাতে পারবে না মর্মে ২০০১ সালে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তারই সুফল ভোগ করছে বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরী। কানাডার অভিবাসন এবং উদ্বাস্তু মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চারবার নুর চৌধুরীর দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছে।
তাথৈ লিখেছিল, ‘অন্যদের মতো আমিও আশায় বুক বেঁধে আছি, মানবতাবিরোধী অপরাধ করা নুর চৌধুরীকে অচিরেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে, যাতে করে সে তার সাজা ভোগ করতে পারে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে নুর চৌধুরীসহ আরও ১১জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়। আসামিদের অনেকের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। নুর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে এক্ষেত্রেও ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি’। গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সূত্র এবং মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের রাতে এই নূর চৌধুরীই না-কি গুলি করেছিলেন জাতির পিতাকে। সেই কাল রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে খুনিরা মেতে উঠেছিল হত্যার উল্লাসে। বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, ভাই, ভাগ্নে, ভাগ্নের স্ত্রী, কাজের লোক-সহ ২১ জনকে হত্যা করা হয় সেই রাতে। সেই দিন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহেনা বিদেশে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর খুনি নূর চৌধুরী সপরিবারে কানাডায় পালিয়ে যান।