আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : “১৪০০ সাল” কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন,“আজি হতে শতবর্ষ পরে,এখন করিছে গান সে কোন নতুন কবি,তোমাদের ঘরে ? আজিকার বসন্তের আনন্দ অভিবাদন,পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে। আমার বসন্তগান তোমার বসন্ত দিনে,ধ্বনিত হউক ক্ষণতরে। হৃদয়স্পন্দনে তব ভ্রমর গুঞ্জনে নব,পল্লবমর্মরে,আজি হতে শতবর্ষ পরে। জবাবে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন,“তবুও পুরে না হিয়া ভরে নাকো প্রাণ,শতবর্ষ সাঁতরিয়া ভেসে আসে স্বপ্নে তব গান। মনে হয়, কবি,আজও আছ অস্তপাট আলো করি আমাদেরই রবি! আজি হতে শত বর্ষ আগে যে-অভিবাদন তুমি করেছিলে নবীনেরে রাঙা অনুরাগে,সে-অভিবাদনখানি আজি ফিরে চলে প্রণামি-কমল হয়ে তব পদতলে! মনে হয়, আসিয়াছ অপূর্বের রূপে ওগো পূর্ণ, আমাদেরই মাঝে চুপে চুপে! আজি এই অপূর্ণের কম্প্র কণ্ঠস্বরে তোমারই বসন্তগান গাহি,তব বসন্ত-বাসরে তোমা হতে শত বর্ষ পরে”!
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,আজি হতে শতবর্ষ পরে বিপরীতে নজরুল লিখেছিলেন আজি হতে শতবর্ষ আগে। কবিতার শিরোনাম একটি হলেও লিখেছেন যেমন দুজন কবি। তেমনি কবিতাগুলোর ভাব বিশ্লেষণ এক ও অভিন্ন হলেও মূলত এ কবিতা দুটির মাধ্যমে একজন আরেকজনকে অভিবাদন জানিয়েছেন এটাই মূলকথা। শুধু তাই নয়,কথা, গান আর ভাবেরও আদান প্রদানের মিল রয়েছে দুকবির রচনায়। বাংলা সাহিত্যের প্রধান এই দুই কবি যেমন একজন আরেকজনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বরচিত কবিতায় ঠিক তেমনি ৩৯ বছর আগে সুনামগঞ্জের দুইজন বাউল কবি সম্পর্কে যারা গুরুশিষ্য তারা নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরেছেন একটি গানের বইয়ে লেখা ভূমিকায়। ১০৬টি গান নিয়ে প্রকাশিত বইটির নাম আলমাছ গীতি ১ম খন্ড। বইটির প্রকাশক ও গীতিকার হচ্ছেন কবি আলমাছ মিয়া। গত ২০ বছর ধরে সংগীত চর্চা থেকে তিনি বিরত। বর্তমানে প্রহার গুনছেন শেষ বিদায়ের। সংস্কৃতির জগৎ থেকে তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেললেও তার লেখা গানের বইয়ের ভূমিকা থেকে পাওয়া গেছে তারই ওস্তাদ প্রখ্যাত বাউল কবি কামাল উদ্দিন (কামাল পাশা) এর কবি প্রতিভার একটি বিরল ইতিহাস ও পরিচিতি। নিজের শিষ্যের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে তাকে কত বড় করে একজন ওস্তাদ উপস্থাপন করতে পারেন তা স্বচক্ষে না দেখলে যেমন বিশ্বাস করা যায়না,তেমনি না পড়লে রীতিমতো অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর হয়ে দাড়ায়।
আলমাছ গীতি (১ম খন্ড) নামের গানের বইটি ৮ ফাল্গুন ৮৯ বাংলা তারিখে প্রকাশ হয়েছিল সিলেটের জেলরোডস্থ বারুতখানার জালালাবাদ প্রিন্টিং প্রেস থেকে। বাঁধাই করে তকদীর বুক বাইন্ডার। প্রাপ্তিস্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়,সহিদ গাজী লাইব্রেরী রানীগঞ্জ বাজার জগন্নাথপুর,সিদ্দিকুর রহমান গীতিকার লালকুঠি সিলেট,জাগৃতি প্রকাশনী জাগরণ প্রেস আম্বরখানা সিলেট ও বার্তা বিচিত্রা সুনামগঞ্জ। বাংলাদেশে কোন বাউল শিল্পী বা বাউল কবি কারো বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন,বা লিখতে পারেন এ অন্ধ ধারনাটি ৩৯ বছর আগেই দূর করে গেছেন বাউল কবি কামাল উদ্দিন। যদিও প্রখ্যাত সাধক সিরাজ সাই,লালন ফকির, সৈয়দ শাহনূর,বৈষ্ণব কবি রাধারমন,মরমী কবি হাছন রাজা,সাধক রসিদ উদ্দিন,কবি জালাল খা ও উকিল মুন্সী ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে থাকা অনেক বাউল কবি বা শিল্পীকে গানের বইয়ের ভূমিকা লিখতে কেউ শুনেননি বা দেখেননি। যে ভূমিকাটি বাউল কবি কামাল পাশার কবি প্রতিভাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় অবতীর্ণ করেছে স্বমহীমায়।
নিজের শিষ্য কবি আলমাছ মিয়ার রচিত বইয়ের ভূমিকায় বাউল কবি কামাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, “পরম করুণাময় ¯স্রষ্টা যিনি সর্বশ্রেষ্ট,অনন্ত,অসীম,সবকিছুর সৃজন ও পালনকারী,সবাই যাহার অনুগত,তিনি তাহার মহান উদ্দেশ্য নিয়া এই মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি তার প্রিয় বা শ্রেষ্ট বলে ঐ মানব জাতিকে দান করেছেন প্রেম প্রীতি ভালবাসা আর অমূল্য রত্ন জ্ঞান। যাহা আর অন্য কোন জাতিকে দান করেননি। আর ঐ মানবজাতি শ্রেষ্টত্বের অধিকার নিয়ে তারা তাদের প্রভূ পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তাকে সবকিছু বিলিয়ে অসংখ্য ভক্ত ,আশেকান পরম স্রষ্টাকে পাওয়ার আবেগ বাসনা,বিরহ বেদনা নিয়ে তাদের জ্ঞানধারা উপাসনালয়ে প্রার্থনায় নির্জনে প্রকাশ্যে রচনা ও লিখার মাধ্যমে বাউল বেশে গেয়ে ও লিখে চলেছেন মহান স্রষ্টার অসীম গুনগান ও মহীমা,একাগ্রচিত্তে করে চলেছেন তাঁরই ধ্যান ও সাধনা। তারই প্রমাণ আজো আমরা খুজে পাই বহু ভক্ত আশিকানের লিখায়। তবে জানিনা সেই মহান শ্রষ্টার উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে কি না ? তবুও ভক্ত আশেকেরা যুগ যুগ ধরে আজীবন করে যাচ্ছেন তাঁরই সাধন। আর এমনি সাধনা করে চলেছেন বাউল কবি মোঃ আলমাছ মিয়া। তারই সংগীত রচনা ও লিখার মাধ্যমে,বিশেষ করে তার রচনা সংগীতগুলি থেকে অনেকটা প্রমাণ পাওয়া যায় তার রচনা বা লিখাই এর একমাত্র স্বাক্ষর।
একথা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই। সুধী সংগীত পিপাসু ভাই ও বোনেরা আমি আশা করি তিনির রচনার গানের এই ক্ষুদ্র বইখানা আপনাদের সংগীত পিপাসা নিবারনে অনেকটা সহায়ক হবে। তবে আমি জানি কোন বই প্রকাশ হলে তার লিখক বা রচয়িতা সম্মন্ধে জানার অনেকের মনে আগ্রহ থাকে। তাই আমি লিখকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রকাশ করছি। বাউল কবি মোঃ আলমাছ মিয়া ১৯৪৫ ইংরেজীর ৬ই ডিসেম্বর,সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার জগন্নাথপুর থানার ৬নং রানীগঞ্জ বাজার ইউনিয়নের বিখ্যাত বাগময়না গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনির পিতার নাম মোঃ জাবেদ উল্লা,মাতার নাম মোছাঃ জয়গুন বিবি। তিনি ১৯৫২ইংরেজীতে মাতৃহারা হন। ১৯৫৯ ইংরেজীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬২ইংরেজীতে তার স্কুল জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৬৪ ইংরেজীতে তাহার পিতা স্থানান্তরিত হয়ে নিকটস্থ রানীগঞ্জ বাজারে স্থায়ীভাবে স্বপরিবারে বসবাস করেন। ১৯৬৫ ইংরেজীতে কবি ময়মনসিংহ জেলার বিখ্যাত আলেম পীর কামেল হযরত মাওলানা মোহাদ্দেছে মোনাজেরা আবুল কাসেম রেজভী আল কাদেরী সাহেবের সংস্পর্শে যান এবং তিনির কাছ থেকে শরীয়ত ও মারফতি অনেক আদেশ উপদেশ গ্রহন করেন। কবি একদিন আপন ঘরে ফিরে এলেন। ১৯৬৭ ইংরেজীতে একদিন আবার অজানার পথে পা বাড়ালেন। তিনি মায়ের কবর জেয়ারত করে বাড়ী থেকে বিদায় হয়ে সিলেটের হযরত শাহজালাল,হযরত শাহপরান,চট্রগ্রামে মাইজভান্ডারী,হযরত বায়েজীদ বোস্তামী,ঢাকার হযরত খাজা শরফ উদ্দিন,মীরপুরে হযরত শাহ আলী বাগদাদী এবং দেশের বিশিষ্ট ওলীগনের রওজা যিয়ারত করে অবশেষে ঢাকায় তৎকালীন ইষ্ট পাকিস্তান মটর ড্রাইভিং ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেনিং স্কুলে ভর্তি হন। পরে ট্রেনিং পাশ করে ঢাকার একটি প্রাইভেট গাড়ীর চালকের দায়িত্বে নিয়োজিত হন। কিছুদিন পর সেখান থেকে দায়িত্বের অবসান ঘটিয়ে তিনি আবার ময়মনসিংহ শহরে চলে যান। এখানে উল্লেখ্য তিনির আরো দুই ভাই ছিলেন। এদিকে তিনির পিতা ও ভাইয়েরা তাকে খুজে খুজে নিরাশ হয়ে পড়েন। খোদার মহীমাময় ১৯৬৯ ইংরেজীর ডিসেম্বর মাসে একদিন রাতে তিনি আপন দেশের বাড়ীতে ফিরে এলেন।
তারপর এলো ১৯৭১ ইংরেজী ২৬ শে মার্চ। শুরু হল বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম। তিনি অংশ নিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। কিন্তু হঠাৎ একদিন ১৯৭১ ইংরেজীর ৮ই সেপ্টেম্বর খবর পেলেন কবির বাসস্থান রানীগঞ্জ বাজার পাক হানাদার বাহিনী আক্রমন করে বহু লোককে হত্যা ও ঘরবাড়ী দোকানপাট আগুন দিয়ে পুড়াইয়া দিয়াছে। তিনি এই খবর পেয়ে আপন বাড়ীতে ফিরে এলেন। বাড়ী পৌছে দেখলেন তার বড় ভাই আকুল মিয়াকে পাক হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে এবং তৎসঙ্গে আরো একশত ছাব্বিশ জনকে হত্যা করেছে। ছোট ভাই আকল মিয়া মারাত্মক আহত,কবির পিতাও পুত্রশোকে শয্যাগত হয়ে পড়েছেন। তিনি তার বুকভরা বেদনাকে সংবরন করে বড় ভাইয়ের দাফন কার্য সমাধান করেন। খোদাতায়ালার ইচ্ছায় কিছুদিন পর কবির পিতাও তাকে ছেড়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে পরলোকে চলে যান। তবুও তিনির ব্যথিত হৃদয়ে কবিত্বের বিরাম দেননি। তিনি সুখ-দুখের মধ্য দিয়ে অবিরত লিখে চলেছেন বাউল প্রাণের ভাবভক্তি ও বাউল সংগীত। কবি ১৯৭৩ ইংরেজীতে গণভোটে ৬নং রানীগঞ্জ বাজার ইউনিয়নের সদস্যপদে নির্বাচিত হন। খোদার ইচ্ছায় ১৯৭৭ ইংরেজীতে ভাগ্যক্রমে আমার সাথে তিনির সাক্ষাৎ হয়। তিনির রচনা গানের বেশ কয়েকখানা পান্ডুলিপি আমি পাঠ করেছি। কবির যে প্রতিভা রয়েছে তাহা সত্যিই এদেশের মানুষের কাছে প্রশংসনীয়। যেমন এমনি প্রশংসার ব্যাক্তিগন এদেশের বুকে আরো যাহারা যাহারা ছিলেন ছিলেন যেমন হাছন রাজা,লালন ফকির,শাহানূর শাহ,আরকুম শাহ,রহমত উল্লাহ মুন্সী,উকিল মুন্সী,দূর্বিণ শাহ,জালাল উদ্দিন,দ্বিজদাস,শরত,দ্বীন ভবানন্দ,রাধারমন আরো এমনি স্মরনীয় ব্যাক্তিগন। আরো যাহারা আমাদের মধ্যে আছেন যেমন বাউল কবি মোঃ আব্দুল করিম,কবি আলাউদ্দিন,রজ্জব দেওয়ান,আলী হোসেন সরকার,দেওয়ান মহসীন রেজা চৌধুরী প্রমুখ বাংলার বাউল কবিগন।
বাউল কবি আলমাছ মিয়া তাহাদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমান যুগের একজন সংগীত সাধক বা লিখক। তিনির প্রত্যেকটি গানই আমি পড়ে দেখেছি। সংগীত পিপাসু ভাই বোনদের বাউল প্রাণের ইন্ধন যোগাতে সক্ষম। তাই তিনির রচনা গানের বই ছাপা করে সবার কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখি। তিনি যে সকল গান রচনা করেছেন,বিশেষ করে ভক্তিমূলক, মুর্শীদি, মারফতি, জীবতত্ত¡,পরম তত্ত¡, নিগুড়তত্ত¡, নিজুম তত্ত¡, দেহতত্ত¡, মাতৃতত্ত¡, প্রেমতত্ত¡,আধ্যাত্মিক, বাংলা কাওয়ালী,জারী,গজল,খেদ,বিচ্ছেদ,গোষ্ট,পল্লীগীতি,ভাটিয়ালী,পপ,আধূনিক,দেশাত্ববোধক,আঞ্চলিক এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও তিনির গানে প্রকাশ পেয়েছে। কবি ১৯৭৮ ইংরেজীতে ৯ ডিসেম্বর রেডিও বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন লাভ করেন। তখন তিনি,তিনির রচনা,গান,কিচ্ছা বিভিন্ন শিল্পীকন্ঠে রেকর্ড ও রেডিও থেকে প্রচারিত হতে থাকে। তাই তিনির এই প্রতিভাকে আরো সুন্দর করে সমাজের কাছে তুলে ধরতে পাঠক পাঠিকা,গায়ক গায়িকা,সংগীত পিপাসু ভাই বোনের কাছে আমার আকুল আবেদন রইলো। আমি সবাইকে আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে পরম করুণাময় স্রষ্টার কাছে সবার ও তাহার সর্বাঙ্গীন উন্নতি কামনা করে আমার বক্তব্য সমাপ্ত করছি-খোদা হাফেজ। ইতি বাউল কবি কামাল উদ্দিন ”
১৮ অক্টোবর ২০২১ইং সোমবার রাত ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার জামতলা আবাসিক এলাকায় এডভোকেট আজমল হোসেনের ভাড়াটে বাসায় এক সৌজন্য সাক্ষাতে জানতে চাইলে বার্ধক্যে উপনীত কবি আলমাছ মিয়া বলেন,আমার বইয়ের ভূমিকাটি নিজের হাতেই লিখেছেন আমার ওস্তাদ বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) সাহেব। সুন্দর ছিল তাঁর হাতের লেখা। বাউলদের মধ্যে বাংলাদেশে তিনিই উচ্চ শিক্ষিত বাউল শিল্পী ছিলেন। আমি ওস্তাদের গ্রাম সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ভাটিপাড়ায় গিয়েছি। দেখে এসেছি সেখানে সেই সময় একটি সংস্কৃতিবান্ধব পরিবেশ ছিল। বাউল কামাল পাশা যা বলতেন তাই আলটিমেটলী গান হয়ে যেতো। শুধু শুদ্ধ বাংলাতেই নয় তিনি আরবী ফারসি,সংস্কৃতি হিন্দী ও ইংরেজী ভাষাতেও গান লিখতে পারতেন। মালজুড়া বা পালাগানে তার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল,যতবড় প্রতিদ্বন্দ্বি বাউলই প্রতিপক্ষ হউকনা কেন ? উত্তর না পেলে কাউকে সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র ছিলেননা তিনি। বলতেন আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি এখন আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিন। তাঁর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া কিংবা কেউ তাকে হারাতে পারার কোন ঘটনা আমার চোখে পড়েনি বা আমি শুনিনি। এ প্রতিবেদকের সাথে কবি আলমাছ মিয়ার আলাপকালে উপস্থিত ছিলেন কবিপুত্র এডভোকেট আজমল হোসেন ও সংস্কৃতিসেবী মোঃ ইব্রাহিম আলীসহ কবি পরিবারের লোকজন।
তিনি জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু খালেদ চৌধুরী,সাবেক নাট্যকার গীতিকার দেওয়ান মহসীন রাজা চৌধুরী,সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান চৌধুরী সাফি,সুনামগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছোয়াব উদ্দিন ও জগন্নাথপুরের বাউল শিল্পী লেবু মিয়াসহ আরো অনেককে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন,আমার লেখা গান ও নাটকের উপযুক্ত পৃষ্টপোষকতা করতেন তারা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের একাধিক অনুষ্ঠানে তার গান সম্প্রচার হয়েছে। এছাড়াও বিটিভির প্রযোজকরা জগন্নাথপুরে এসে তার সাক্ষাৎকার ও গান সম্প্রচার করেছেন। মাদকমুক্ত সুস্থ সংস্কৃতির ধারক বাহক কবি আলমাছ মিয়া বলেন,আমরা সংগীত রচনা করেছি গেয়েছি কারো বাহবা পাওয়ার জন্য নয় স্রষ্টাকে পাওয়ার আশায় সাধনা করেছি। বাউল গানের মূল ম্যাসেজ হচ্ছে স্রষ্টায় সমর্পণ তা মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কতটুকু সফল হয়েছি তা জানিনা। ভালমন্দের বিচার আল্লাহই করবেন তিনিই সবকিছু জানেন।
পরিশেষে নবীর জীবনী নিয়ে বাউল কামাল পাশার নিম্নোক্ত গানটি তিনি শুদ্ধরুপে গাওয়ার জন্য দেশের সকল বাউল শিল্পীদের প্রতি অনুরোধ জানান। “হরদম ইয়াদ রাখহে বান্দা ইয়া মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ ইয়া মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ,ইয়া মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ ।। মোহাম্মদকে ফয়দা করকে,অন্ধকারকে ক্লিন করিলা।। রউজ ফ্লাওয়ার বেষ্ট অব সেন্ট,জানেন বোধ হয় নাইন্টি নাইন পারসেন্ট থাউজেন্ড গুড ব্যাটার দেন দ্যাট,দিজ মোহাম্মদ কামলিওয়ালা।। মোহাম্মদ মোর অশ্রু চোখে,ব্যাটার সাথী শান্তি সুখে পাইতে আশা নিয়া বুকে,জপতে নাম যেন পাই নিরালা।। এ দুনিয়া টিকেট বটে,অনলী মোস্তফার সাপোর্টে হি ইউল বি রিকমান্ডার,হাশরের ফিল্ড আওয়ার বেলা।। কামাল উদ্দিন গুনাগারে,খাড়া মাওলার পাক দরবারে কচুরী আছি হুজুরে,চাইতে শাফায়াতে লিল্লাহ।। রুজ ফ্লাউয়ার বেস্ট অব ফুল,পিয়ারে হাবিব মোহাম্মদ রাসুল হামারা দরুদখ্যা করহে কবুল,প্রশংসা আলহামদুলিল্লাহ।। হে প্রভূ দয়াল মাইটি,কামাল পাশার এই মিনতি আমি রাসুলের ভক্ত খাটি,ভূলি না যে বিদায় বেলা ”।।