কী ঘটবে নিয়মের মারপ্যাঁচে
জরিপের ফলকে মিথ্যা প্রমাণ করে বিস্ময়কর বিজয় চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। নাটকীয়তায় নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে রোববার দু’দিনের ঝটিকা প্রচারণায় ব্যস্ত তিনি। চষে বেড়াচ্ছেন ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটগুলো। দৃশ্যত পুনরায় তার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে। তাই তিনি সব হিসাব নিকাশকে থামিয়ে দিয়ে ফিরতে চান হোয়াইট হাউসে। যদি তাতে জয়ী হন তাহলে আরো চার বছরের জন্য তার হাতে উঠবে হোয়াইট হাউসের চাবি। আর যদি ব্যর্থ হন তাহলে জর্জ এইচডব্লিউ বুশের সময় থেকে এ পর্যন্ত তিনি হবেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানকে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় থিম হিসেবে প্রচারণায় ব্যস্ত ডেমোক্রেট দল থেকে প্রার্থী জো বাইডেন।তিনি রোববার প্রচারণায় ব্যস্ত থাকছেন পেনসিলভ্যানিয়াতে। এটি এমন এক রাজ্য যা- কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তা নির্ধারণ করে থাকে। তাই এ রাজ্যের ওপর জোর দিয়েছে জো বাইডেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জাতীয় জনমত জরিপে ভালোভাবে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। কিন্তু সুইং স্টেটগুলোই বলে দেবে কে হবেন প্রেসিডেন্ট। জাতীয় জনমত জরিপে জো বাইডেন ১০ পয়েন্টের মতো এগিয়ে থাকলেও এসব সুইং স্টেটে ট্রাম্পের সঙ্গে তার ব্যবধান কাছাকাছি। তাই কাকে হোয়াইট হাউসে পাঠাচ্ছে এসব রাজ্য তা বোঝা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আটটি সুইং স্টেটের জনমত জরিপের ১৪ দিনের হিসাব নিয়ে তার গড় করেছে লন্ডনের অনলাইন গার্ডিয়ান। এর মধ্যে আছে ফ্লোরিডা। এখানে আছে ২৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। এখানে জনমত জরিপে শতকরা ৪৮.৭ ভাগ মানুষ সমর্থন করছেন জো বাইডেনকে। ট্রাম্পকে সমর্থন করেন শতকরা ৪৬.৮ ভাগ ভোটার। পেনসিলভ্যানিয়াতে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে ২০টি। সেখানে জনমত জরিপে শতকরা ৫০.৯ ভাগ ভোটার সমর্থন করছেন জো বাইডেনকে। ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন শতকরা ৪৫.১ ভাগ ভোটার। ওহাইও রাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে ১৮টি। সেখানে জো বাইডেনকে সমর্থন করছেন শতকরা ৪৮.২ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে সমর্থন করেন শতকরা ৪৬.১ ভাগ ভোটার। মিশিগানে ইলেক্টোরাল ভোট আছে ১৬টি। সেখানে বাইডেনের সমর্থন শতকরা ৫১.৪ ভাগ। ট্রাম্পের সমর্থন ৪৩ ভাগ। নর্থ ক্যারোলাইনায় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে ১৫টি। সেখানে জো বাইডেনের সমর্থন শতকরা ৪৯.২ ভাগ। ট্রাম্পের সমর্থন ৪৭.১ ভাগ। অ্যারিজোনায় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ১১টি। এখানে বাইডেনকে সমর্থন করেন শতকরা ৪৮.৮ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে সমর্থন করেন ৪৫.৪ ভাগ ভোটার। উইসকনসিনে ইলেক্টোরাল ভোট আছে ১০টি। এখানে বাইডেনের সমর্থন ৫১.৫ ভাগ, ট্রাম্পের ৪৩.৭ ভাগ। আইওয়াতে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে ৬টি। এখানে বাইডেনকে সমর্থন করছেন ৪৭.৮ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন ৪৬.৮ ভাগ ভোটার। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে শতকরা ৫১.৬ ভাগ ভোটার বাইডেনকে সমর্থন করছেন। ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন ৪৩.১ ভাগ।
জরিপে এগিয়ে থাকলেও কার্যত আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তোলার কোনো অবকাশ নেই ডেমোক্রেটদের। কারণ, এই জাতীয় জনমত জরিপ নিশ্চিত করতে পারে না কে হবেন বিজয়ী। কারণ গত নির্বাচনেও সবদিক দিয়ে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও, ৩০ লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েও নির্বাচনী নিয়মের মারপ্যাঁচে হেরে যান হিলারি। ক্ষমতার মসনদে বসেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এর কারণ, ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে গিয়েছিলেন হিলারি। এবার কী ঘটবে সে জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। এই একটি দেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তন পাল্টে দেয় পুরো বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি। তবে আপাতত জরিপের হিসাব নিয়ে ভাবছেন না ট্রামপ। তিনি বিশ্বাস করেন তিনিই জিতবেন নির্বাচনে। মরিয়া হয়ে সর্বশেষ প্রচারণা শুরু করেছেন। রোববার ও সোমবার ১০টি র্যালিতে অংশ নিচ্ছেন ট্রাম্প। দিনে তিনি পাঁচটি র্যালিতে অংশ নিচ্ছেন। আগামী মঙ্গলবার নির্বাচন। সেদিন সমর্থকদের ঘর থেকে বের করে আনতে যতটা সম্ভব প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। রোববার তার র্যালি করার কথা মিশিগান, আইওয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায়। সোমবার প্রচারণা চালানোর কথা নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া, উইসকনসিন এবং মিশিগানে। সোমবার রাতের শেষ ভাগে মিশিগানে গ্রান্ড র্যাপিডসে তার প্রচারণা শেষ হওয়ার কথা। এখানেই তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন। চার বছর আগে অসম্ভাব্য বিজয়ে তিনি মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়া, উইসকনসিন রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন। এই তিনটি রাজ্য কয়েক দশক ধরে ছিল ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে ৯০ লাখ। মারা গেছেন প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিষয়টিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুত্বই দেননি। তার অভিযোগ তার বিরোধীরা এই ইস্যুকে তার পেছনে ব্যবহার করছে। তিনি সতর্ক করছেন এই বলে যে, যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বাইডেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারো লকডাউনে পড়তে হবে। কিন্তু আরেকটি লকডাউন সহ্য করার সক্ষমতা নেই যুক্তরাষ্ট্রের। তিনি পেনসিলভ্যানিয়ার নিউটাউনে নির্বাচনী এক সভায় জনমত জরিপে বাইডেন তার কাছাকাছি থাকায় একরকম হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ, বাইডেনকে তিনি অনেক দুর্বল প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে থাকেন। ট্রাম্প বলেন, এটা তো শুধু আমার ক্ষেত্রে ঘটবে। কীভাবে আমাদের দু’জনের টাই হতে পারে? বিভিন্ন বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, যদি ট্রাম্প আবার বিজয়ী হতে চান তাহলে তাকে ২০১৬ সালের মতো ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, আইওয়া এবং অ্যারিজোনার মতো রাজ্যগুলোতে জিতে আসতে হবে। তাকে জিততে হবে কমপক্ষে পেনসিলভ্যানিয়া, মিশিগান অথবা উইসকনসিনের মতো রাজ্যে। তিনি যে বিজয়ী হবেন এ বিষয়ে কিছু রিপাবলিকান আশাবাদী। তবে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, যে ৯ কোটি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন তারা হয়তো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।