শাকির আহমদ, কুলাউড়া  :: পারিবারিক বিরোধের জেরে আপন চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই-সহ কয়েকজন স্বজন সংঘবদ্ধ হয়ে আব্দুল মনাফ নামে এক ব্যাবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে একটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে তথ্য গোপন রাখার চেষ্টা করে। থানা পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লাশটি সনাক্ত করে তা উদ্ধার করা হয়। নিহত আব্দুল মনাফ উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের মীরশংকর গ্রামের বাসিন্দা মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় কুলাউড়ার সর্বত্র সমালোচনা ও ক্ষোভ বিরাজ করে। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় দোষীদের দ্রুততর সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি এবং এতে একাত্মতা পোষণ করে বিবৃতি দিচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।  ৪ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া মনাফের লাশ গত ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১০টা দিকে একই এলাকায় তার নিজের চাচাতো ভাইদের বসত ঘরের পেছনে সেফটি ট্যাংক-ঘেষা একটি গর্ত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই আজির উদ্দিন ঘটনার সাথে জড়িত ৭ জনকে অভিযুক্ত করে বুধবার সকালে কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৬ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে ঘটনার সাথে জড়িত ৬ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।  আটককৃতরা হলো ভূকশিমইল ইউনিয়নের মীরশংকর গ্রামের মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে ও নিহত মনাফের চাচাতো ভাই শাহিনুর রহমান শাহিদ (৪০), আতিকুর রহমান চান মিয়া (৫০), মোঃ ফজলু মিয়া (৪৫), ফজলু মিয়ার ছেলে ফয়েজ আহমদ (২২), মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে ও নিহত মনাফের খালাতো ভাই সামছুদ্দিন (৪২), মৃত চুনু মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৩)। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর শনিবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে কুলাউড়ার মিলিপ্লাজার ‘মনাফ টেলিকম’ এর স্বত্ত্বাধিকারি আব্দুল মনাফ নিখোঁজ হন। গভীর রাতে তিনি ঘরে না ফেরায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কোথাও কোন খোঁজ না পাওয়ায় তাঁর ভাই আজির উদ্দিন কুলাউড়া থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরী করেন।

কুলাউড়া থানা পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মামলার প্রধান আসামী শাহিনুর রহমানের বসত ঘরের পিছনের সেফটি ট্যাংকির ভেতর থেকে নিহত মনাফের ব্যবহৃত ম্যানিব্যাগ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কিছু আলামত উদ্ধার করে। এরপর সন্দেহজনক হিসেবে প্রধান আসামী শাহিনুর রহমানকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ব্যবসায়ী মনাফকে হত্যার কথা স্বীকার করে জানায়, ঘটনার দিন শনিবার রাত আনুমানিক ১০টায় মনাফের বাড়ির সম্মুখে কয়েকজনকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মনাফের মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত মনাফের চাচাতো ভাই শাহিনুর রহমানের দেয়া তথ্যমতে ১৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের বাড়ির পিছনের ওই সেফটি ট্যাংকের পাশের গর্তের মাটি সরিয়ে মনাফের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওসার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষন রায়, ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলামসহ থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনর্চাজ বিনয় ভূষন রায় জানান, নিহত মনাফের সুরতহাল শেষে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৬ আসামীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামীকে ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn