কে এই শাহীন খন্দকার যার কারনে সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষক সর্বস্বান্ত!
কে এই খন্দকার শাহীন আহমদ সুনামগঞ্জবাসী জানতে চায় । কি তার রাজনৈতিক পরিচয়? পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে “মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমদ” নামের লাইসেন্সে (টাক্সগুয়ার হাওর ৯৯ লক্ষ টাকা, খাই হাওর ২৮.০৪, মাটিয়ান হাওর ২৪.২৮, উত্তরাডুবা হাওর ১৪৩.৩৪, ছায়ার হাওর ১৭৪.৬৬, নাইন্দার হাওর ১৮৭.৬৩, নাইন্দার হাওর ১১৭.৩৪, দেখার হাওর ১৯৩.০৭, বরাম হাওর ৯৬.৬১, সর্ব মোট ৯টি প্রকল্পে ১০ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা) কাজের ওয়ার্ক ওয়ার্ডার পান। কিন্তু সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পিআইসি চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ১ তারিখে কাজে যোগ দিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখউ কাজ শেষ করার কথা। এই ঠিকাদার শাহীন খন্দকারের কাজে গাফিলত করার কারণে তলিয়ে গেল দেখার হাওরের হাজার হাজার হাক্টর বোর ফসলী জমি সর্বস্বান্ত হলো হাওরের একমাত্র ফসলের উপর নির্ভরশী্ল লক্ষলক্ষ কৃষক কৃষাণী পরিবার। খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডাবর ব্রীজের নিচে উত্তর দিকে মহাসিং নদীর ২টি পাড় হয়ে আস্তমা ও আসামপুর গ্রাম হয়ে দেখার হাওরের উথারিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৩কি.মি কাজের মধ্যে ০.৫ কি.মি কাজও করেনি ঠিকাদার, অন্য দিকে পিআইসির লোকজন কাজের মেয়াদ অনুযায়ী উথারিয়ার মেইন বাঁধের কাজ শত ভাগ শেষ হলে ঠিকাদারের কাজ শেষ না হওয়ায় আগাম বন্যায় বাঁধের আফার মের নদীর পানি উচলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গত ৩১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত পানি প্রবেশ করতে থাকে। আসামপুর গ্রামের কৃষক কুয়াজ আলী, শাহবাজ, লতিব, মাসুম, গুলজার, আস্তমা গ্রামের আব্দুল গনি, খলিল, আতাউর রহমান, আক্সগুর মিয়া, ফজল উদ্দিন সহ অসংখ্য কৃষকদের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, দেখার হাওরে পিআইসির লোকজন যে লাখান কাজ করাইছইন ওখন পর্যন্ত বাঁধ গুলো দিয়ে গাড়ি চালাইয়া যাওয়া যাইব, ঠিকাদাররা যদি উলাখান কাম করাইতা তা তাহলে আমরার হাওরে পানি হামাইত না। কৃষকরা ক্ষোভে অকত্য ভাষায় বলেন, …………ঠিকাদার গত মাসের (মার্চ) ২২ তারিখে আস্তমার পাড়ে একটি মাটি কাটার মেশিন নিয়া আসে, পরে ছাইয়া কিত্তায় (উথারিয়ার পাড়ে ছাইয়া কিত্তা নামক স্থানে) বাঁধের গুড়ি থাকি মাটি আইন্না কতকান বাঁধ বাঁধছে। তারা আরও জানান, আসামপুর অংশে গত ২৮ মার্চ ঠিকাদার লোক দেখানোর জন্য মাটি কাটার মেশিন নিয়ে আসে, ২৯ তারিখে ২/৩ ঘন্টা মাটি কাটলেও বৃষ্টি ও নদীতে পানি বাড়ার কারণে আর মাটি কাটতে পারেনি। পরে নদীর পানি দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকলে ঠিকাদারের কাজের অংশ বিস্তীর্ণ জায়গা (আফার) পানির নিচে তলিয়ে গেলে হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকে।
কৃষকরা আরও জানান, সময় মত ঠিকাদার যদি কাজে লাগত তাহলে হয়ত দেখার হাওরে পানি ডুকত না। আমরা এই দূর্নিতীবাজ ঠিকাদারের দৃষ্টান্ত মূলক শান্তি চাই। জালাল উদ্দিন নামে এক কৃষক কান্না আপ্লোত হয়ে বলেন, আমরা অনে কিতা খাইতাম, কিতা খাইয়া বাচতাম, ঋণ কইরা ১৫ কিয়ার জমিন করছিলাম, সব জমিন পানির তলে গেছেগি, এই ঠিকাদারের লাগি আমার মত হাজার হাজার গরীব মানুষের জমিন পানির তলে গেছে। আমরার আর কিছু নাই, আমরার সব শেষ বলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। এ দিকে দেখার হাওর ঠিকাদারের কাজে গাফিলতি করার কারণে হাওরটি তলিয়ে যাওয়ায়, গত রবিবার বিকাল ৩টায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার হাওর পাড়ের আস্তমা, আসামপুর, কামরূপদং, তালুকগাও, পারবর্তীপুর, সুলতানপুর, পাগলা, কাদিপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক জনতা ঠিকাদারের শাস্তির দাবীতে প্রায় ৩ঘন্টা আস্তমা গ্রামের রাস্তায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহা সড়কে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরে সুনামগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি) মো. শফিউল আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছে কৃষকদের ৫ দফা দাবী শোনেন, এবং কৃষকদের সকল দাবী শোনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, আমি বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছি, অনেক জায়গায় পিআইসির কাজ ভাল হয়েছে, কিন্তু ঠিকাদাররা যে যে জায়গায় কাজ পেছে তারা তেমন কোন কাজ করায়নি, আমরা সেই সকল ঠিকাদারদের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আপনাদের সেই দাবী গুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বরাবরে প্রেরণ করবো এবং সুনামগঞ্জ জেলাকে দূর্গত একালা ঘোষণা করবো। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেখার হাওর অংশের আস্তমা ও আসামপুর গ্রামের ঠিকাদারের ২টি মাটি কাটার মেশিন জব্দ করেন। পরে মেশিন দুটি দক্ষিণ থানার হেফাজতে রাখার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আল-আমিনকে বলেন। এরপর কৃষকরা তাদের অবরোধ তোলেনেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহা সড়কে অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা ব্যাপী গাড়ি অবরোদ্ধ করে রাখেন উপজেলার, সুলতানপুর, তেঘরিয়া, উজানীগাও, জয়কলস, আস্তমা, কামরূপদং, তালুকগাও, পারবর্তীপুর, পাগলা, দরগাপাশা, ছয়হাড়া, জামলাবাজ সহ বিভিন্ন গ্রামের হাওর পাড়ের হাজার হাজার কৃষক জনতা। এ সময় ক্ষুব্ধ কৃষকরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালামের দুই গালে জুতা মার তালে তালে ও ঠিকাদারের ফাঁসি চাই এমন সব ¯ে¬াগানে জুতা মিছিল করেন তারা। এ সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে ভিক্ষুব্ধ কৃষক জনতা উপজেলা পরিষদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালামকে না পেয়ে তার অফিস লক্ষ্য করে জুতা চুড়ে মারেন। পরে বিকাল ৪টায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অন্য একটি হাওরে পরিদর্শন শেষ করে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন, এবং আন্দোলনরত কৃষক জনতার সকল দাবী শোনেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর কবির বলেন, আপনাদের অবরোধ তোলেনেন, আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। পরে কৃষকরা তাদের অবরোধ তোলেনেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমদকে টেলিফোনে ও কয়েকবার চিঠির মাধ্যমে তাদেরকে তাগিদ দিতে থাকি, কিন্তু তারা আমাদের কোন কথা কর্ণপাত করেন নি। তিনি আরও জানান, কাজের মেয়াদ শেষে ঠিকাদার দেখার হাওর অংশে দুটি মেশিন লাগিয়ে ছিলো, কিন্তু কাজ শেষ করতে পারেন নি তারা, হটাৎ করে সুনামগঞ্জ জেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরটি তলিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, দেখার হাওর অংশে পিআইসির কাজ গুলো অনেক ভাল হয়েছে। এসব কাজ দেখতে আমাদের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা ও মন্ত্রনালয় থেকে ২জন প্রতিনিধি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। তারাও পিআইসির কাজে সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেন এবং ফোনে ঠিকাদারকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগিদ দেন। তিনি বলেন, পানি যখন প্রবেশ করে তখনও আমরা দেখার হাওরে গিয়েছি, পিআইসির লোকজন আমাদেরকে জানিয়েছিলেন, হাওরে ঠিকাদারের কাজের অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে, এ খবর শোনে আমরা ঠিকাদারকে ফোনে জানাই যেন তারা শ্রমিক লাগিয়ে তাদের সাইটে পানি বন্ধ রাখে, কিন্তু সেখানেও তারা গাফিলতি করে ৪০/৫০ জন লোক লাগায়, পরে সবার সাধ্যের বাইরে চলে যায়।