আফগানিস্তানের তালেবানের নিয়ন্ত্রণ শুরুর পর থেকেই দেশ ত্যাগে বিমানবন্দর অভিমুখে ঢল ছুটেছে আফগান নাগরিকদের। শুরুতে গত দুই দশক ধরে পশ্চিমাদের সহায়তা করা নাগরিকরা আসলেও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে ‘উন্নত জীবন’ গড়ার প্রত্যাশীরাও। সবমিলিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। তাদের আশ্রয় দিতে রাজিও হয়েছে বেশ কিছু দেশ। দেখে নেওয়া যাক এ পর্যন্ত কোন দেশ কতজন আফগানকে আশ্রয় দিলো-

২০ বছর আগে আফগানিস্তানে কথিত শান্তিরক্ষার মিশন শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে সবচেয়ে বেশি সেনা ছিল তাদেরই। অর্থাৎ আফগানদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছে মার্কিনিরা। ফলে মিত্রদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র।

শুক্রবারের এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, জুলাইয়ের শেষ থেকে এ পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তালেবান কাবুল দখলের সময় থেকে হিসাব করলে এর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার।

অবশ্য একই দিন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার প্রায় তিন হাজার মানুষকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের পাশাপাশি বিপদগ্রস্ত আফগানরাও রয়েছেন। গত ১৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক নয় হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে দেশটি।

জার্মানি

যুক্তরাষ্ট্রের পর আফগানিস্তানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেনা ছিল জার্মানির। দেশটি জানিয়েছে, তাদের সেনারা এ পর্যন্ত কাবুল বিমানবন্দর থেকে দুই হাজারের মতো মানুষকে সরিয়েছে।

ফ্রান্স

ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত সোমবার (১৬ আগস্ট) থেকে তারা এ পর্যন্ত ৫৭০ জনকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৪৭০ জন আফগান নাগরিক।

ইতালি

ইতালি জানিয়েছে, গত পাঁচদিনে তারা প্রায় এক হাজার আফগান নাগরিককে কাবুল থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

নেদারল্যান্ডস

ডাচ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে, কাবুল থেকে সরিয়ে নেওয়া আফগানদের প্রথম দলটি নেদারল্যান্ডসে পৌঁছেছে। ২৮ সদস্যের আফগান দলটিকে উত্তর নেদারল্যান্ডসের একটি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ডাচ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা কাবুল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি ফ্লাইটে প্রায় ৩০০ জনকে সরিয়ে এনেছে। এদের মধ্যে কতজন আফগান নাগরিক তা অবশ্য পরিষ্কার নয়।

উজবেকিস্তান

আফগানিস্তানের অন্যতম প্রতিবেশী উজবেকিস্তান শুক্রবার জানিয়েছে, তারা আরও ৪০০ আফগান শরণার্থীকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। তবে সীমান্ত পার হয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত কতজন আফগান আশ্রয় নিয়েছে তা নিশ্চিত নয়।

স্পেন

শুক্রবার আফগানিস্তান থেকে একটি প্লেন মাদ্রিদের সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছেছে। এতে আফগান নাগরিকসহ মোট ১১০ জন যাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে। এর আগে, আরেকটি প্লেনেও কিছু আফগানকে সরিয়ে নিয়েছিল স্পেন।

যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আফগানিস্তান থেকে এক হাজার করে লোক সরিয়ে নিয়েছেন তারা। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্রিটিশ নাগরিক, তবে সঙ্গে সহায়তাকারী কিছু আফগানও রয়েছেন।

এর আগে কিছু সূত্র জানিয়েছিল, যুক্তরাজ্য তাদের আফগানিস্তান মিশনে সহায়তা করা দুই হাজারের মতো আফগানকে আশ্রয় দিতে পারে।

পাঁচ দিনে কাবুল ছেড়েছে ১২ হাজার মানুষ

ন্যাটোর এক কর্মকর্তা শুক্রবার জানিয়েছেন, গত ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখলের পর বিদেশি ও আফগান নাগরিক মিলিয়ে আফগানিস্তান ছেড়েছে অন্তত ১২ হাজার মানুষ।

১৩ দেশে আশ্রয়, ১২ দেশে ট্রানজিট পাচ্ছেন আফগানরা

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ১৩টি দেশ ‘ঝুঁকিতে পড়া’ আফগান নাগরিকদের সাময়িক আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে। এ কাজে সহায়তার জন্য ট্রানজিট দিতে রাজি হয়েছে আরও ১২টি দেশ।

ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের আগে আফগান নাগরিকদের সাময়িক আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে আলবেনিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, চিলি, কসোভো, উত্তর মেসিডোনিয়া, মেক্সিকো, পোল্যান্ড, কাতার, রুয়ান্ডা, ইউক্রেন ও উগান্ডা। আর ট্রানজিট দিতে রাজি হয়েছে বাহরাইন, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, জার্মানি, ইতালি, কাজাখস্তান, কুয়েত, কাতার, তাজিকিস্তান, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উজবেকিস্তান। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn