পীর হাবিবুর রহমান
পীর হাবিবুর রহমান, রাহেজা হসপিটাল, মুম্বাই থেকে:- বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, আত্মীয়তা হলো শবযাত্রায় আর বরযাত্রায় অর্থাৎ বিয়ের সময় স্বজনকে সবাই খোঁজ নিয়ে জড়ো করেন আর মৃত্যুতে সবাই শেষ বিদায়ে সমবেত হন। জীবনের পুরোটা সময় কাটে আত্মার বাঁধনে বাঁধা অগণিত মানুষের সঙ্গে আর দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদদের সঙ্গে। আমার ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্কের নৈকট্য বা আত্মার বাঁধন অনেক মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে আছে। সাংবাদিকতার জীবনকে আমি পেশাগত ইবাদতের জায়গা থেকে মানুষের কল্যাণে অসীম সাহসিকতায় উঁচু জায়গায়ই নির্ধারণ করেছি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাসহ নানা সামাজিক সরলীকরণে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মানুষ হিসেবে সেই সাহসিকতায় স্পার্টাকাসের মতো হয়তো বারবার জ্বলে উঠতে পারিনি কিন্তু স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে আসা ফিনিক্স পাখির মতো আগুনে পুড়ে জন্ম নিয়েছি। নোয়াম চমস্কি থেকে একালের অরুন্ধতী রায়ের মতো সাহস দেখাতে না পারি কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সন্তান হিসেবে সব দেশোদ্রোহী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, অর্থ পাচারকারী, ঘুষখোর এবং সমাজ রাজনীতির ও প্রশাসনের নষ্ট অংশের প্রতি নিরন্তর আঘাত করতে ভুলিনি। সমাজের মুখোশ পরিহিতদের চেহারা উন্মোচনে নিরলস কাজ করেছি।
আমি এমন কোনো অপরাধ করিনি যে হৃদয়ে তিনটি রিংয়ে শোভাবর্ধন বাড়াতে হবে, কর্ক্রট রোগে আক্রান্ত হতে হবে। আমি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করিনি, যতটা করেছি নিজের সঙ্গেই। অভিমানে হোক, দ্রোহে হোক, আপসহীনতায় হোক আর জেদেই হোক- নিজের প্রতি অবিচারের ফল সুদে আসলে দিয়ে মাশুল গুনছি আজ। আমি কেবল দুর্নীতিপরায়ণ ও নষ্ট সমাজের কুৎসিত কদর্য কাহিনিই লিখিনি, আমাদের জাতীয় জীবনের বীরদের ইতিহাস নির্মাণের বীরত্বের গৌরব লিখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছি। হ্যাঁ, দেশ-বিদেশের শত সহস্র নরনারী গভীর ভালোবাসায় পরম করুণাময়ের কাছে আমার কেবল আরোগ্য লাভই চাইছেন না- নিয়ত আমার লেখার প্রত্যাশা করছেন। মানসিক শক্তি না হারালেও কেমোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমি আমার শারীরিক সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। যারা আমার দৌড়ঝাঁপের দাপুটে জীবন দেখেছেন তারা এখন হিসাব মেলাতে পারবেন না।
আমার প্রাণবন্ত লেখক জীবনের সুসময় উপভোগ করা একজন কাছের মানুষ অভিশাপের সুরেই বললেন, আমার বাকি জীবন নাকি কেমোর যন্ত্রণাতেই কাটবে। বিশ্বাসঘাতকতার বীভৎস চিত্র নিয়ে আমি আর কখনই লিখব না। তবে আমি আমার চিকিৎসক ডাক্তার সুরেশ আদভানিকে বলেছিলাম, লেখা ছাড়া আমার আর কোনো ঐশ্বর্য নেই। এই শক্তি হারালে আমার প্রাণশক্তি শেষ হয়ে যাবে। তিনি আমাকে বলেছেন, চার মাস পর আপনি নতুন উদ্যমে লেখার ভুবনে ফিরে যাবেন। সুরেশ আদভানিকে ভারতে অনকোলজির ভগবান বলা হয়। আমি তাঁকে বলেছি, আমার আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাসের পর আপনার দরজায় এসেছি।
তিনি বলেছেন, ক্যান্সার পরাজিত হবে, আপনি জয়ী হবেন। ৭৮ বছরের এই ডাক্তার হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন, হাসপাতালে এসে কোনো রোগী দেখেন না। তাঁর বিশেষ পছন্দের মানুষদের তাঁর বাড়িতে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। শনিবার ডাক্তার সুরেশ আদভানি তাঁর বাসায় আমাকে সব রিপোর্ট, কাগজপত্রসহ ডেকেছেন। ডাক্তার সুরেশ আদভানির প্রিয় ছাত্র ডাক্তার শিবমের আন্তরিকতা আমার লেখায় দেওয়া সম্ভব নয়। দিনরাত তাঁকে যখন ডেকেছি কাছে পেয়েছি। আর ছোট ভাই সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সেন্টু দিনরাত আমাকে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, তা আপন ভাইও ভাইয়ের জন্য করে না। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি যুদ্ধে জয়ী হতে পারি। লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৯৭ বার