প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  হাওর এলাকায় যেসব কৃষক ঋণ নিয়ে ফসল চাষ করেছে, তাদের ঋণ আদায় ও সুদ স্থগিত করার ব্যবস্থা নেবে সরকার। তিনি বলেন, ‘তারা যেন আবার ফসল ফলাতে পারে, তার ব্যবস্থাও আমরা করে দেব।’অকাল বন্যায় হাওর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের সব ধরনের উদ্যোগ নেবে সরকার। তিনি বলেন, চাষিরা যেন আবার ফসল ফলাতে পারে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি বন্যায় যে ফসল ভেসে গেছে, তারও ক্ষতিপূরণ পাবে তারা।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কেবল হাওর নয়, কৃষকদের স্বার্থে সব সময় আওয়ামী লীগ কাজ করে। যেখানেই দুর্যোগ হয়, সেখা্নইে দলের নেতা-কর্মীরা গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আর সরকার তো উদ্যোগ নেয়ই। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে উজানের পানির ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাওর অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আগেই পানি চলে আসায় তলিয়ে গেছে লাখ লাখ একর জমির ফসল। হাওর এলাকায় বছরে একবারই ফসল ফলে এবং ওই অঞ্চলের অর্থনীতি এই ধানের ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় হঠাৎ বন্যায় ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। সারা বছরের খোরাকের কী হবে, ঋণ পরিশোধ কীভাবে হবে-এ নিয়ে দুশ্চিন্তগ্রস্ত তারা। প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘হাওরে কৃষকদের ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রতিটি জায়গায় খাদ্য সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি মানুষকেও যেন না খেয়ে থাকতে হয়, সেটা নিশ্চিত করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষক আর সাধারণ মানুষদের জন্যই তো আমাদের কাজ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হাওরের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, হাওর উন্নয়ন বোর্ড আমরা করেছি।’ বিভাগের চার জেলা ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণায় ভিডিও কনফারেন্সে মোট চার হাজার ১৯টি পয়েন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয়রা। এদের মধ্যে আছেন সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, এলাকার গণমান্য ব্যক্তি, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী জানান, বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নেয়া ভূমিকার কথা। বলেন, যে কোনো সমস্যায় সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়াবে তার সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ময়মনসিংহ বিভাগ করেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চারলেন করা হয়েছে। ময়মনসিংহ সীমান্তের সড়কও করা হচ্ছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।
জঙ্গিবাদের প্রতি জনসচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি সমাজকে ধ্বংস করেছে, এ থেকে ছেলেমেয়েদের দূরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে আমি কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র, বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মূল নীতির ওপর ভিত্তি করে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস স্নাতকোত্তর সনদকে মাস্টার্স ইন ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যারাবিক এর সমমান প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছি। কমিটি করে দিয়েছি। তাদের কারিকুলাম ঠিক করে তারা যেন তা করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ও করে দিয়েছি। সব ধর্মের মানুষ যেন তার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে মর্যাদার সঙ্গে। এটাই আমাদের নীতি। এটাই আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা না। সকলেই ধর্ম পালন করবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলামের ভালো দিকগুলোতো আমাদের গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে ইসলামের নাম নিয়ে মানুষ হত্যা করা-এটা তো আমার ধর্ম কখনও বলেনি। কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোরআনে স্পষ্ট বলা আছে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু তার পরও কীভাবে এই হত্যাকান্ড চালায়, আমি জানি না। আমরা এটাই চাই, এই ধরনের আত্মঘাতী পথ থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা ফিরে আসুক। ইসলামের মূল বাণী যেন তারা উপলব্ধি করতে পারে। মহানবী (সা.) এর নির্দেশনা যেন মেনে চলে-এটাই আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে প্রতি স্কুলে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সিলর দেয়ার একটা প্রস্তাব এসেছে। প্রতি স্কুলে হয়তো মনোবিজ্ঞানী কাউন্সিলর দেয়া সম্ভব নয়। তবে, আমরা ইতোমধ্যেই একটি উদ্যোগ নিয়েছি। আপনারা জানেন, আমি সূচনা ফাউন্ডেশন নামে একটি ফাউন্ডেশনও করেছি এবং সেখানে যারা এ ধরনের বিপথে যাচ্ছে বা যারা অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী রয়েছে সেখানে তাদের কিছু কাউন্সেলিং প্রদান করা হচ্ছে। আর সে কাউন্সেলিংয়ের জন্য আমরা হয়তো কিছু মানুষকে ট্রেনিং দিতে পারি, তারা কিভাবে এই কাউন্সেলিংটা করবেন। শুধু কাউকে কাউন্সেলিং দিলে হবে না, অভিভাবক-শিক্ষক তাদেরও এ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। তাদেরও জানতে হবে। শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের বিষয়েও আমরা উদ্যোগ নেবো। যাতে কেউ বিপথে গেলে তাদের যেন সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়। এটি একটি ভালো প্রস্তাব কাজেই সব স্কুলে কাউন্সিলর দেয়া না গেলেও আমরা সকলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ ধরনের একটা উদ্যোগ নিতে পারি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn