খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না শরিকরা
খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনে যেতে অনিহা শরিক ২০ দলীয় জোটের। তবে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে চান তারা। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ শরিকদল ২০ দলীয় জোট প্রশ্নে একাট্টা অবস্থান প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন বিএনপির সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটে থাকা অবস্থায় তারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। সকল প্রকার দমন, পীড়ন সহ্য করে জোটে থেকেছে। লোভ-লালসা ত্যাগ করে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিশ দলীয় জোটে রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টিও জোটগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ২০ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাব জানা গেছে।
জানতে চাইলে জোটের অন্যতম শরিক বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, দলের নিবন্ধন নিয়ে কিঞ্চিৎ চিন্তিত নন তিনি বা তার দল। তবে ভিন্নমত পোষণ করেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক। তিনি বলেন, নির্বাচন এখনো অনেক দূরে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনের তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তখন নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হবে। তবে নিবন্ধন বাঁচাতে আমাদের আগামী নির্বাচনে যেতেই হবে।
অন্যদিকে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন অবিসংবাদিত নেত্রীকে বাদ দিয়ে এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচনের নামে কোনো প্রহসন হলে গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে জাগপা তার অংশীদার হবে না। বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, বাংলাদেশ ন্যাপ সকল সময়ই নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। তবে এই দলের কাছে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থই মুখ্য। একটি নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা হলে আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আর সেই ক্ষেত্রে জোটগত ও একক দুইভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আমাদের দলের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
জমিয়তের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, নির্বাচন যখন আসবে তখন দেখা যাবে। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে চান এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা বেগম জিয়াকে নিয়েই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও বিপরীত চিত্র সরকারবিরোধী শিবিরে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও দুই জোটের বাইরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদি তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অংশগ্রহণ না করে তাহলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারাতে পারেন।
নির্বাচনে অংশ নিতে হবে না নিলে নিবন্ধন বাতিল এমন জটিল সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ২০ দলীয় জোটের ৯টি রাজনৈতিক দল। তার ওপর আবার যোগ হয়েছে জোটের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলায় যদি কোনো সাজা হয়ে যায় তাহলে জোটের বাকি আটটি শরিকদল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হবে। যেহেতু খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ইতোমধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন খালেদা জিয়াকে ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আবার দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, কোনো কারণে যদি দলের প্রধানের সাজা হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা হবে না।
খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি তাকে ছাড়া আগামী নির্বাচনে না যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও জোটের অধিকাংশ নিবন্ধিত দল এক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান গ্রহণের পক্ষে। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপার নিয়ে তারা তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না।