নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘সরকার ভারতের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছে-পাঁচ বছর তাকে থাকতে দিতে হবে’-বিএনপি নেত্রীর এমন মন্তব্যে ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ধরেই নিয়েছেন আমি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতা থাকবো। ভারত সফর থেকে দেশে ফেরার পরদিন মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। ভারত সফরে হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের তীব্র সমালোচনা করছে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অভিযোগ, সরকার দেশকে ভারতের কাছে বেচে দিয়েছে। গত রবিবার গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। সেজন্য পাঁচ বছরের জন্য এটা একটা চুক্তি করেছে- এই চুক্তি তো তিনি সেজন্য করলেন। ওই পাঁচ বছর পরে উনারা বোধ হয় কাগজে-কলমে দেশটাকে লিখে দিয়ে মনে হয় বিদায় নেবে আর কি।’

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের জবাবে কী বলবেন, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী হাত দুই হাতের পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, ‘যাক, পাঁচ বছর তাহলে সময় পাওয়া গেছে। আমি সাধুবাদ জানাই বিএনপি নেত্রীকে। তিনি ধরেই নিয়েছেন আমি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবো। এটা আগামী নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলবে।’ রসিকতার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা যেভাবে আসে, তারা সেভাবেই চিন্তা করে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, জনগণ ভোট দেবে। জনগণের ভোটাধিকারের জন্য আওয়ামী লীগ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। … আওয়ামী লীগের জন্ম কিন্তু বন্দুকের নলের মধ্য দিয়ে নয়। বিএনপির জন্ম বন্দুকের নলে। বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় আরোহন করে তারপর দল গঠন করে তারা।’

প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সে সময়ের সদস্যরাও এই চক্রান্তে জড়িত ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বলেছিলাম, সেটা তারাও (ভারতীয়রা) স্বীকার করেছেন। তখন ‘র’ এর যারা এখানে ছিলেন, তাদের ভূমিকা তারাও জানে। তাদের সম্পর্কে তারা যথেষ্ট সচেতন। এখন তারা আর কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ছিল, গ্যাস উৎপাদন করবে তাদের কোম্পানি আর তা কিনবে ভারতীয় কোম্পানি।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেন হাওয়া ভবনে কারা যেতো, মামুনের বাসায় কারা সময় কাটাতো, কী করতো? আপনারা ভুলে যান কী করে?’।

সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান লতিফুর রহমানের বাসায় বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লতিফুর রহমান সাহেবের বাসায় বৈঠক। জিমি কার্টার শেষ কথাটা জানতে আসলেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি আর জিল্লুর রহমান। আর বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া ‍ও মান্নান সাহেব। আমি মুসলমান, মুসলমানের এক কথা। আমি আগে যা বলেছি, তখনও তাই বলেছি। বলেছি, আমার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করবো, ৫০ বছরের মজুদ রাখবো, অতিরিক্ত যদি থাকে, তাহলে বিক্রি করবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে জিল্লুর চাচাকে বললাম, চাচা চলেন, এখানে আর কিছু হবে না। সেখানে তারা থাকলো, খাওয়া দাওয়া করলো, জিমি কার্টার তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। সে সময়ের পত্রপত্রিকায় এই খবর তো ছাপাও হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সাইফুর রহমান বলেছিলেন, মাটির নীচে সম্পদ থাকলে কী হয়, বেচে দিলেই তো হয়। আমি বলেছিলাম, ক্ষমতায় আনুক আর যাই কিছু হোক, গ্যাস তারা দিতে পারবো না। আর আমি এটাও বলেছিলাম, দিলে আমিই দিতে পারবো, অন্য কেউ দিতে পারবে না। কীভাবে দেবে, দেশটাকে তো জানতে হবে। আজকে তো গ্যাসের সংকট।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn