বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ডাকের অপেক্ষায় বিএনপির ‘কথিত’ সংস্কারপন্থি নেতারা। এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দুই নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ও সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। এ সময় তারা অতীতের ভুলভ্রান্তিতে অনুতপ্ত বলে নেত্রীকে জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে এসব ভুলভ্রান্তি শুধরে দলে কাজের সুযোগ চাইলে তাদের সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়। ওই সময় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বলা হয়, পর্যায়ক্রমে দলের বাইরে থাকা সব নেতাকেই ফিরিয়ে আনা হবে। কৌশলগত কারণে দুজন করে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথাও বলেন বিএনপি নেতারা। এর পর থেকেই শুরু হয় সংস্কারপন্থিদের অপেক্ষা। এর মধ্যে প্রায় চলে গেছে দেড় মাস। কেউই আর নতুন করে ডাক পাননি। সংস্কারপন্থি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তাদের আশা, বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর শিগগিরই দলে

কাজ করার সুযোগ মিলবে। বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে দু-এক জন বাদে সব সংস্কারপন্থিকেই দলে নেওয়া হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই সবাইকে এক প্লাটফরমে চান বেগম জিয়া। শুধু বিএনপির সংস্কারপন্থিই নন, সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গেও কৌশলগত ঐক্য করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে। দলের একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত একজন উপদেষ্টা সংস্কারপন্থি নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সবাইকে দলে নেওয়া হবে। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার বলেছেন, ‘দেশে এখন জাতীয় সংকট চলছে। এ মুহূর্তে ভেদাভেদ কোনোভাবেই কাম্য নয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্য জরুরি। বিএনপি সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। ’ এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংস্কারপন্থি নেতাদের মধ্যে যারা আসতে চান, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আমাদের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন। সবাইকে তো একসঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করানো সম্ভব নয়।

চেয়ারপারসনেরও তো নানা ব্যস্ততা রয়েছে। সুযোগ-সুবিধামতো সবাইকে সাক্ষাৎ করানো হবে। দলে কাজ করতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হবে। ’ তবে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেছেন, ‘একজন অথবা দুজন করে নয়; অন্য সবাইকে একসঙ্গে নেওয়া উচিত। একই প্রক্রিয়ায় তাদের সবাইকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া উচিত। কারণ, যারা এখনো দলের পদে থেকেও নিজেদের কর্মকাণ্ডের বাইরে রেখেছেন তারাও একই অপরাধে অপরাধী। এরপর তাদের কর্মকাণ্ড দেখে কাকে কোথায় কী অবস্থায় রাখা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ’ জানা যায়, বিএনপির সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল-পরবর্তী কমিটিতেও সংস্কারপন্থি ওই নেতাদের ঠাঁই হয়নি। এখন দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘এক নেতার এক পদ’ বাস্তবায়ন হওয়ায় বেশকিছু পদ শূন্য হচ্ছে। কয়েকটি পদ আগে থেকেই ফাঁকা রয়েছে। দলের মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপকমিটিতেও তাদের জায়গা হতে পারে।

এ নিয়ে ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সংস্কারপন্থি অভিযোগে বিএনপির বাইরে থাকা সাবেক এমপি ও নেতার মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল জেড এ খান (অব.), সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, আনোয়ার তালুকদার, শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, সাবেক হুইপ ও পিরোজপুর জেলার সাবেক সভাপতি সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক এমপি ও সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, বরগুনার সাবেক জেলা সভাপতি নুরুল ইসলাম মণি, সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিঙ্কন, বগুড়ার সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জি এম সিরাজ, সাবেক এমপি এম এম শাহীন, সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, সাবেক এমপি আবদুল করিম আব্বাসী, সাবেক এমপি শাম্মী শের, সাবেক এমপি আবদুল গনি, সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন দুলু, আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, মণি স্বপন দেওয়ান, ডা. সালেক চৌধুরী, অধ্যাপক মো. ইউনূস, আবদুল মতিন, অ্যাডভোকেট আবু রেজা ফজলুল হক, আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী, ডা. মো. সানাউল্লাহ, তাসমিন রানা, হোসনে আরা প্রমুখ। এর মধ্যে আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, আবদুল করিম আব্বাসী, আবদুল গনি এখন কর্নেল অলি আহমদ (অব.)-এর নেতৃত্বাধীন এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনজনই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

সংস্কারপন্থি হিসেবে না থাকলেও এবারও কমিটির বাইরে থাকা নেতা বিএনপির সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামান (অব.) ও সাবেক এমপি আবু হেনা সবুজ সংকেত পেলে দলে ফিরবেন বলে জানা গেছে। দলে ফেরার অপেক্ষায় থাকা সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, ‘আমরা চেয়ারপারসনের ডাকের অপেক্ষায় আছি। তিনি যখনই ডাকবেন, সাড়া দেব। আমি মনে করি, এ মুহূর্তে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ই লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপিকে বাদ দিয়ে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ’ একই কথা বলেন বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপিতে কাজ করার সুযোগের অপেক্ষার প্রহর গুনছি। শহীদ জিয়ার আদর্শে ছিলাম, আছি এবং থাকব।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn