খাসিয়ামারা নদী খনন না করায় কপাল পুড়ছে কৃষকের
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার- ভারত থেকে আগত সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ও সুরমা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবহমান পাহাড়ি খাসিয়ামারা নদী খনন না করায় লক্ষাধিক কৃষকের কপাল পুড়ছে। শুকনো মৌসুমে কৃষকদের ফসলি জমি চাষাবাদের সুবিধার্থে পানি সংরক্ষণ করে রাখতে নদীটির সুরমা ইউনিয়নের পশ্চিম টিলাগাঁও অংশে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম সেচ প্রকল্প নির্মিত হয়। কিন্তু রাবার ড্যামের উজানে ওই নদীর বছরের পর বছর পাহাড় থেকে আগত বালি জমে বিশাল বিশাল চর সৃষ্টি হওয়ায় ভেস্তে যাচ্ছে কৃষকদের স্বপ্নের রবার ড্যাম প্রকল্প। নদীতে চর পড়ার দরুন শুকনো মৌসুমেও পানি ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গত কয়েক বছর ধরে পানির অভাবে হাওরে অনাবাদি রয়ে গেছে হেক্টর পর হেক্টর ফসলি জমি। এতে একদিকে যেমন খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। নদী ভরাটের কারণে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে ধেয়ে আসা অল্প পানিতে অসময়ে বন্যার সৃষ্টি হয়ে প্রতি বছরই আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর উভয় তীরে বড় ধরনের বালু চরের সৃষ্টি হয়েছে। চরের কারণে নাব্যতা হারিয়ে ইতিমধ্যে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ অনেকটাই পাল্টে গেছে। এতে রাবার ড্যাম-লক্ষ্মীপুুর সড়কটি হুমকির মুখে রয়েছে। দিন দিন নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অব্যাহত নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে পশ্চিম বাংলাবাজার, টিলাগাঁও, মহব্বতপুর, আলীপুর বাজারসহ নদী বিধৌত আশেপাশের প্রায় ১০-১৫টি গ্রামের বসতভিটা, সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। নদী ভরাটের দরুণ রবার ড্যাম সেচ প্রকল্প কাজে না আসায় গত কয়েক বছর যাবৎ ভারতের সন্নিকটে মাটির বাধ দিয়ে পানি আটকে রাখছে স্থানীয়রা। ফলে রাবার ড্যাম সেচ প্রকল্পে পর্যাপ্ত পানি ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে পানি না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে ফসল ফলাতে না পারায় বিস্তীর্ণ ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। এতে স্থানীয় কৃষকদের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা পরিচালনা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকদের দাবি চাষাবাদ ও কৃষিজমি টিকিয়ে রাখতে খাসিয়ামারা নদী খনন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও টিলাগাঁওয়ের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ্তুনদীতে চর পড়ে ভরাট হওয়ায় রাবার ড্যাম সেচ প্রকল্পের মাধ্যমেও পানি ধারণ করে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পানি না থাকায় এবারও বেশিরভাগ জমি অনাবাদি থেকে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে বৃহত্তর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কৃষি ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। তাই অবিলম্বে সরকারি ভাবে নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হোক। জাতীয় কৃষক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আবাদি কৃষক নেতা আব্দুল আওয়াল বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। খাসিয়ামারা নদীর খনন না হওয়ায় পানির অভাবে উপজেলার লক্ষাধিক কৃষক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আমরা একাধিক বার কৃষকদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করে কৃষির সুবিধার্থে খাসিয়ামারা নদী খননের দাবি জানিয়েছি। কৃষকদের এই প্রাণের দাবি মেনে নিয়ে সরকারি ভাবে দ্রুত নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হোক। বৃহত্তর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার বলেন, নদী ভরাট হওয়ায় শুধু কৃষকরাই নয়, আশপাশের এলাকার সবাই ক্ষয়ক্ষতির শিকার। নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সবার বৃহত্তর স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে ড্রেজারের মাধ্যমে খাসিয়া নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এতে সবাই উপকৃত হবে। সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনূর রশীদ বলেন, ্তুকৃষকদের দাবির সাথে আমিও একাত্মতা পোষণ করছি। উজানে বালুর চর পড়ে খাসিয়ামারা নদী নাব্যতা হারাতে বসেছে। ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, গ্রাম, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। শুকনো মৌসুমে পানি না থাকায় কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেনা। রাবার ড্যামের উজান থেকে ডেজারের মাধ্যমে নদী খনন করা গেলে নদী আবার আগের মতো প্রান ফিরে পাবে। কৃষকরাও উপকৃত হবে। তাই দ্রুত খাসিয়ামারা নদী খননের দাবি জানাচ্ছি।