সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলম জানান, সৌরভকে খালি গায়ে পিছমোড়া করে খেজুর গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে চলে যায় অপহরণকারীরা। চালকলের আশপাশের লোকজন দেখতে পায় তাকে। সৌরভ তাদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে ফোন করতে চান। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে তিনি বাবার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর স্বজনরা পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানান। পুলিশ গিয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। সকালে সাড়ে ১১টার দিকে তাকে বনানী ডিওএইচএসে সোহেল তাজের বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায় পুলিশ। সৌরভের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে কি-না জানতে চাইলে ইদ্রিস আলম বলেন, ‘শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে নিশ্চয়ই ওখানে জামাই আদরে রাখা হয়নি। যে-ই নিয়ে থাকুক, আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। ওকে জিজ্ঞেস করেছি, যারা তোমাকে আগে নিয়েছিল, তারাই কি অপহরণ করেছে? ও বলেছে, তাকে আর কে অপহরণ করবে? ও ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না। ওর কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হবে। একটু সুস্থ বোধ করলে ওর কাছ থেকে সব জানা যাবে। সৌরভ বলেছে, তার চোখ-মুখ বাঁধা ছিল। এতদিন একটা ছেলেকে যদি হাতকড়া পরিয়ে মুখ বেঁধে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে কী অবস্থা হয়? ওকে মানসিক ও মেডিসিনের ডাক্তার দেখানো হবে।’

অপহরণের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে এক ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছে সৌরভের পরিবার– যার মেয়ের সঙ্গে সৌরভের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে বৃহস্পতিবার ইদ্রিস আলম বলেন, ‘আগে যেসব অভিযোগ করেছিলাম, সেসব নিয়ে এখন মাথা ঘামাতে চাই না। কারণ ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আজ হয়তো লাশটাই পেতাম ছেলের। আল্লাহ ছেলেকে জীবিত ফেরত দিয়েছে, এটাই শুকরিয়া। কে নিয়ে গিয়েছিল তা জানতে পারব; কিন্তু সৌরভ তো কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’ সৌরভকে উদ্ধারে তৎপর সোহেল তাজ বৃহস্পতিবার সকালে ফেসবুক লাইভে ও পরে সাংবাদিকদের বলেন, সৌরভকে যখন পাওয়া যায় তখন তার হাত-পা বাঁধা ছিল। গায়ে জামা ছিল না, শুধু পায়জামা পরা ছিল। তার চোখও বাঁধা ছিল। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার তাকে বাসায় নিয়ে গোসলের ব্যবস্থা করেন ও খেতে দেন। উদ্ধারের পর সৌরভ প্রথমে বুঝতেই পারেননি তিনি কোথায়। তিনি মানসিকভাবে একেবারে বিপর্যস্ত। এখন তাকে চাপমুক্ত রাখতে চান স্বজনরা, স্বস্তিতে রাখতে চান।

সোহেল তাজ ফেসবুক লাইভে থাকার সময়ই মাইক্রোবাসে করে সৌরভকে বনানীর ওই বাসায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনি গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে মা ও পরে বাবাকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। পরেও তিনি সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। এদিকে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, সৌরভকে ভোরে তারাকান্দা উপজেলার বটতলা মধুপুর এলাকার জামিল অটোরাইস মিলের সামনের সড়কের পাশে রেখে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়। এরপর ভোর ৫টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফোন করে ময়মনসিংহ পুলিশকে সৌরভের অবস্থানের তথ্য জানান। খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

জামিল অটোরাইস মিলের ম্যানেজার কাঞ্চন মিয়া ও ফোরম্যান সমীর জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুমের মধ্যে ‘আমাকে বাঁচান’ এমন চিৎকার শুনে তারা জেগে ওঠেন। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখতে পান, একজন লোক ছেঁড়া লুঙ্গি দিয়ে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় সড়কের পাশে পড়ে আছেন। লোকটি (সৌরভ) তাদের জানান, তাকে একটি মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দিয়ে সেটি ময়মনসিংহের ফুলপুরের দিকে চলে গেছে। একপর্যায়ে তিনি পানি চান। পাশের এক দোকানিকে ডেকে বিস্কুট ও পানি কিনে দেওয়া হয়। এ সময় সৌরভ জানান, তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নে। এরপর তারা বিষয়টি মিল মালিক হিজবুল বাহার খান বাচ্চুকে জানান এবং তাকে মিলের ভেতর একটি চেয়ারে বসতে দেন। সৌরভ তার বাবার মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে খবর দিতে অনুরোধ করেন। সমীরের মোবাইল ফোন থেকে বাবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর সোহেল তাজ ওই নম্বরে ফোন করে সৌরভের সঙ্গে কথা বলেন এবং পুলিশ ছাড়া অন্য কারও কাছে তাকে হস্তান্তর করতে নিষেধ করেন।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সৌরভকে উদ্ধারের খবরে স্বস্তি ফিরেছে সোহেল তাজের নির্বাচনী এলাকা গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সৌরভকে উদ্ধারে সরকারের আন্তরিকতার জন্য কাপাসিয়াবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, দেশবাসীর ভালোবাসা আর দোয়ায় সৌরভকে ফিরে পাওয়া গেছে। ভাগ্নেকে ফিরে পাওয়ার জন্য সোহেল তাজ ফেসবুকে আকুতি জানানোর পর সরকার সাড়া দিয়ে অবশেষে সৌরভকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।-সৌজন্যে -সমকাল

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn