গ্যাসের চাপ বুঝতে চুলা চালু রাখাই হলো কাল!
সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের চুলার আগুনে দগ্ধ আট জনের মধ্যে নূরজাহান (৭০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আরও সাত জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জন আইসিউতে রয়েছেন। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ফারুক মিয়ার পাঁচতলা বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নূরজাহান বেগমের মেয়ের জামাই ইলিয়াছ মিয়া জানান, রাতে তাদের এলাকায় গ্যাসের চাপ কম ছিল। এ কারণে অসাবধানতায় চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। ভোরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলায় আগুন ধরাতে যান বৃদ্ধা নূরজাহান বেগম। ম্যাচের কাঠি দিয়ে ধরাতেই আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নূরজাহান বেগমের চিৎকারে পরিবারের অন্যরা এগিয়ে গেলে তারাও দগ্ধ হন। আগুনে ঘরের চারটি রুমের খাট, ওয়্যারড্রোব, আলমারি, ফ্যানসহ সব আসবাবপত্র পুড়ে যায়। আর দগ্ধ হন আট জন। পরে তাদের দ্রুত ঢামেকের বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে নূরজাহান বেগমের মৃত্যু হয়।
একই ভবনের চতুর্থ তলার ভাড়াটিয়া আলেয়া বেগম জানান, কয়েক বছর ধরে গ্যাসের চাপ কম থাকায় আমাদের সিলিন্ডার গ্যাস কিনে রান্নার কাজ করতে হয়। মাস শেষে বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের প্রতি চুলায় এক হাজার টাকা করে বিল দিতে হয়। তিনি বলেন, গভীর রাতে বা ভোরে গ্যাসের চাপ ভালো থাকে। এ কারণে অনেকেই গ্যাসের চাপ বোঝার জন্য চুলার চাবি চালু রেখে ঘুমিয়ে যান। এতেই ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা তার। নূরজাহান বেগমের মেয়ে লিপি আক্তার জানান, ভোরে তার মা চুলা জ্বালানোর জন্য ম্যাচের কাঠি ধরানোর সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ির কলাপসিবল গেটে তালা থাকায় বাইরের কেউ ঘরে ঢুকতে পারেনি। পরে আশপাশের লোকজন জানালা ভেঙে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে আদমজী ইপিজেডের ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে দুর্ঘটনার জন্য মানুষের অসচেতনতা এবং তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ৪-৫ বছর ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া, কান্দাপাড়া, চৌধুরিপাড়া, পাইনাদী নতুন মহল্লা, আব্দুল আলী পুল, মিজমিজিসহ বেশ কিছু এলাকায় দিনে গ্যাসের চাপ কমে যায়। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এসব এলাকার মা-বোনেরা দিনে রান্না করতে পারেন না। রাত বারোটার পরে বা ভোররাতে গ্যাসের চাপ বাড়লে তাদের রান্নার কাজ করতে হয়। অনেক সময় নারীরা অসচেতনভাবে চুলা ব্যবহার করেন। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতো না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
.ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সারা রাত চুলা গ্যাস বের হয়ে পুরো বাড়িতে জমা হয়। পরে সকালে চুলায় আগুন ধরাতে গেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক শুভ আহমেদ জানান, রাতে চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। ধারণা করা হচ্ছে, চুলা চালু থাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, আর সেই চুলায় আগুন ধরাতে গেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের মধ্যে কীরণ (৪৩), হীরণ (২৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা (২০) এবং মেয়ে লিমা (৩), আবুল হোসেন (২২), কাওসার (১৬) ও আপন (১০) চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢামেকের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া। তিনি আরও জানান, দগ্ধদের মধ্যে আরও দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. বিধান সরকার জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন ছড়িয়ে দগ্ধ হওয়াদের বেশিরভাগ রোগীর শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। আবার অনেকের শরীরের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ কারণে সবার অবস্থা সংকটাপন্ন।