গ্রামে বাড়ি তৈরিতেও অনুমোদন লাগবে
নিউজ ডেস্ক:: নগরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বাড়িঘর নির্মাণ এবং যে কোনো উন্নয়ন কাজে ভূমি ব্যবহারের প্রয়োজনে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে গ্রামাঞ্চলে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতির বিধান থাকলেও সেটি প্রতিপালিত হয় না। এখন এই বিধান যুক্ত করে ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন ২০১৭’ এর খসড়া মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এই নিয়ম না মানলে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ১৯৫০-এর আইনে শাস্তির বিধান ছিল না। জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, আইনটিতে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে। বিধি বিধান প্রণীত হবে। সেক্ষেত্রে কোথায় কোন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেবেন সেটি চূড়ান্ত থাকবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
প্রসঙ্গত. ক্ষেত্রমতে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, এরকম অনুমোদন দিয়ে থাকে। ঢাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক এ ধরনের অনুমোদনের জন্য দায়িত্ব পালন করে। ভবিষ্যতে এই ক্ষমতা ক্ষেত্রমতে ইউনিয়ন পরিষদের হাতেও দেওয়ার সুযোগ রয়েছে এই আইনে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিষদ বিভাগের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন।
ভূমি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এই আইন করা হচ্ছে বলে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে যেন জমির ব্যবহার করা হয়, সেজন্য আইনে অনেকগুলো প্রস্তাব আছে।
খসড়ায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাদের মূল দায়িত্ব হবে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর বা তাদের ছোট পরিষদের তত্ত্বাবধান করা। এছাড়া গণপূর্ত সচিবের নেতৃত্বে থাকবে ২৫ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ। পূর্তমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ মূলত নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে কাজ করবে। আর উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে নির্বাহী পরিষদের কাজ। এছাড়া জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের কাছে পরিকল্পনাগুলো সুপারিশসহ উপস্থাপন করবে নির্বাহী পরিষদ।
সব সরকারি-বেরকারি সংস্থা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যাদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে- সেসব সংস্থা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।
উপদেষ্টা পরিষদ ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিতে পারবে। রাজউকসহ এ সংক্রান্ত অন্য কর্তৃপক্ষের কাজের সমন্বয় করবে উপদেষ্টা পরিষদ। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরকে নগর ও অঞ্চলের পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনা প্রণয়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যাবে।
এ আইনের অধীনে প্রণীত পরিকল্পনা, বিধি, কোনো আদেশ, নির্দেশ মোতাবেক কাজ না করলে বা কোনো ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এগুলো লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল বলেন, গ্রাম এলাকাতেও কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো তাদের এখতিয়ারভুক্ত এলাকাগুলোতে নিজেরাই অনুমোদন দেবে। পৌরসভা ও স্থানীয় পরিষদ নিজেদের গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করবে। ইতোপূর্বে তারা যেসব কাজ করছে তা এই আইনের মধ্যে গণ্য হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে ‘মানুষের বাড়িঘর নির্মাণের বিষয়টিও’ আছে। ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়টি গ্রাম পর্যায়ে চলে যাবে। সারা দেশের যে কোনো জমি ব্যবহার করতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে।
সচিব বলেন, গ্রামে বাড়িঘর তৈরির আগে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নেওয়ার নিয়ম এখনও আছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা নেওয়া হয় না। কৃষি জমিতে বাড়ি করতে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু মানুষ সাধারণত সেই অনুমতি নেয় না। এগুলো আইনে আছে, পালন করা হয় না ।
নতুন আইন তৈরির যৌক্তিকতা তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, জমির অপব্যবহার ঠেকানো এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পরিকল্পনা করে যেন ভূমি ব্যবহার নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য। জমির অপব্যবহার যেন কম হয়।
প্রতি বছর এক শতাংশ করে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেটা ‘ঠেকানো দরকার’। প্রস্তাবিত নতুন আইনে যেসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা নেই, সেগুলো বিধির মাধ্যমে বিষদ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া সভায় ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের জারি করা পরিপত্র ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার অর্থ হলো, দিবসটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হবে। এশিয়ায় স্যাটালাইটে যোগ দিতে ফিকোয়েন্সি আদান প্রদান সম্পর্কিত বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০০৯ সালে করা বাংলাদেশ-ভারত পুঁজি বিনিয়োগ সম্পর্কিত চুক্তির কিছু বিষয় স্পষ্টকরণ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
এ ছাড়া সভায় বালাইনাশক আইন’ ২০১৭, বস্ত্র আইন’ ২০১৭ এবং প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন’ ২০১৭ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে বস্ত্র আইন দেশে এই প্রথমবারের মতো করা হল। এ পর্যন্ত সবকিছু প্রশাসনিক আদেশ নির্দেশে হয়েছে। বস্ত্র ও পাট সম্পর্কিত কলকারখানা প্রতিষ্ঠায় এখন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম জানান, এই আইনের ফলে এই মন্ত্রণালয়ের জমিজমা সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে শৃংখলা আনা সম্ভব হবে। ২০১৪ সাল থেকে এই আইনটি প্রণয়নের কাজ চলে। বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত নেওয়া হয়। যদিও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই আইন করার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। এ ছাড়া শততম টেস্ট ম্যাচে অবিস্মরণীয় জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।