তেমনই একজন খদ্দের আবদুল জব্বারের সঙ্গে এক রাতের জন্য ১৫শ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন শিপন আক্তার। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশ গাইবান্ধা থেকে আবদুল জব্বারকে গ্রেপ্তার করে। জব্বার জানায়, ১৫শ’ টাকার চুক্তি হলেও রাতের বেলা বাসায় ফিরে যেতে চাইলে এবং এক হাজার টাকা দিতে চাইলে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শিপনকে গলা টিপে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে ফেলে পালিয়ে যায়। ওইদিন রাতে শিপনের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বিক্রি করে জব্বার এবং তার বন্ধু তিনটি ইয়াবা ক্রয় করে। ইয়াবা সেবনের মধ্যে দিয়ে শিপনের মরদেহের ব্যবস্থার বিষয়ে তারা পরামর্শ করে।
গত ৮ই সেপ্টেম্বর ভাসমান এক যৌনকর্মীকে আবাসিক হোটেলে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করায় মো. খোকন ভূঁইয়া (২৮) নামের এক যুবককে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই যৌনকর্মীকে হত্যা করে পালিয়ে যায় হত্যাকারী। এরপর নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপন করলেও শেষ পর্যন্ত রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত যৌনকর্মীর স্বামী। এক পর্যায়ে হত্যায় জড়িত খোকনকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, খোকন এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল। দেশে ফিরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নেয়। গত ৭ই সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের ওপর আসমা ওরফে লিমা বেগম ওরফে কবিতা (২৫) নামের এক নারীর সঙ্গে তার কথা হয়। কবিতা তার সঙ্গে রাত কাটাতে সম্মত হলে দু’জনে চলে যায় শ্যামলীর দুই নম্বর সড়কের ৪/১ নম্বর ভবনে রাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলটির ৬ তলার ৬০২ নম্বর কক্ষে ওঠে। এ সময় ৩ হাজার টাকার চুক্তিতে খোকনের সঙ্গে হোটেলে রাত কাটাতে সম্মত হয় কবিতা। সেখানে তারা অন্তরঙ্গ সময় কাটায়। পরে কবিতা ২০ হাজার টাকা দাবি করে বসে। টাকা না পেলে চিৎকার করে সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেবে বলেও হুমকি দেয়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ৮ই সেপ্টেম্বর ভোরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে হোটেলে মরদেহ রেখে পালিয়ে যায় খোকন।
চলতি বছরের এই সময়ের মধ্যে আরও একাধিক যৌনকর্মী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খুব কম সময়ের মধ্যে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (গুলশান) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, চলতি মাসেই গুলশানে এ ধরনের একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ড শেষে খুনিরা ভুক্তভোগীদের সম্পদ বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে মাদক সেবন করে মরদেহ কীভাবে কোথায় ফেলে রাখা যায় এ ধরনের ভাবনা নিঃসন্দেহে পৈশাচিক। খুনিরা এমনভাবে হত্যাকাণ্ডের প্লট সাজায় এতে করে পুলিশকে রহস্য উদঘাটনে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার মানবজমিনকে বলেন, সমাজে অবাধ মেলামেশা এবং এটা নিয়ে একটি আবহ সৃষ্টির পরে এটাকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক বিষয়ে তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। যার পরিণতি মৃত্যু। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুনিরা খুব সহজেই সংঘটিত করে। একটি মানুষকে হত্যা করলে পরবর্তীতে কি হবে এই জ্ঞানবোধ তাদের মধ্যে কাজ করে কি-না জানা নেই। এটি যেহেতু একটি সামাজিক বিষয় কাজেই এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।