বার্তা ডেস্ক :: মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ থমকে গেছে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়ার পর তিন বছরেও তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এখন মিয়ানমারের সামরিক সরকারের অবস্থান বোঝার জন্য অপেক্ষায় থাকার কথা বলছেন। অং সান সু চি’ র সরকারের পর এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সরকারের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবস্থানের কোন পার্থক্য হবে কিনা, বাংলাদেশে অনেকে এখন এই প্রশ্ন তুলেছেন।
ইয়াঙ্গুনের একজন মানবাধিকার আইনজীবী রারেশ মাইকেল জিলজেন মনে করেন, দুই সরকারের অবস্থানে কিছুটা পার্থক্য হবে। আগের সরকারের সময়ে চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ ছিল না। এখন সেনা সরকার ওই চুক্তি মানবে না বলেই তিনি মনে করেন। জিলজেন আরো বলেছেন, “নতুন সরকার আগের চুক্তিগুলোর কোনটি মানবে বলে আমি আশা করি না। আর তারা শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোন সহযোগিতা করবে বলেও আমি মনে করি না, কারণ সেটি তাদের রাজনীতির পুরোপুরি বিপরীত একটি কাজ হবে।”
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিলেও মিয়ানমারের সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে নতুন করে রোহিঙ্গা যাতে না আসে এবং এখানে থাকা শরণার্থীদেরও যেন ফেরত পাঠানো যায়, সেজন্য এখন চীনের সহায়তা নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দা রোযানা রশীদ বলেছেন, “এখানে চীন একটা ফ্যাক্টর। এখানে দ্বিপাক্ষিক যে প্রক্রিয়াটা চলছে, সেখানে চীনকে আরো বেশি করে ইনভল্ভ করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যতটা চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হয়, সেই জায়গায় যেতে হবে।”
তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের সেনা শাসকদের ওপর পশ্চিমা দেশগুলো এখন গণতন্ত্রের জন্য যে চাপ দিচ্ছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাতে রোহিঙ্গা ইস্যুকে যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালাতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, “পরিস্থিতি সামলাতে চীনের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা সবার কাছে অ্যাপ্রোচ করেছি। আমরা মিয়ানমারের কাছে অ্যাপ্রোচ করেছি। সব রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতেও আমরা গেছি। এবং চীন এ ব্যাপারে কিছু অগ্রসর হয়ে এসেছে। জাপানও এগিয়ে এসেছিল। তবে চীন অনেক অগ্রসর হয়েছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা চীনকে আস্থার মধ্যে রেখেছি। আমাদের পশ্চিমা অনেক বন্ধু রাষ্ট্রের একটা উৎকণ্ঠা যে এখন মিয়ানমার থেকে আরো রোহিঙ্গা আসতে পারে। আমরা বর্ডার সিকিউর করে রেখেছি। আগে যারা এসেছিল। আমাদের জনগণই তাদের গ্রহণ করেছিল। এখন আমাদের জনগণ আর তাদের গ্রহণ করার মুডে নাই। এখন এই ধরনের দুর্ঘটনা হলে অন্যরা নিয়ে যাক। আমরা নিতে রাজি নই।” মিয়ানমারের পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করা সহসাই সম্ভব নয়-সেটা নিশ্চিত বলা যায়। এখন মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের আলোচনা শুরু করার ক্ষেত্রে চীনের ওপরই নির্ভর করতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।সূত্র: বিবিসি বাংলা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৫৮ বার