সুখেন্দু সেন(ফেসবেক স্ট্যাটাস থেকে)

শতাব্দীর ভয়াবহতম দুর্যোগের মুখোমুখি দাড়িয়ে সুনামগঞ্জ,নেত্রকোনা,কিশোরগঞ্জ জেলার বিস্তৃত হাওড় পাড়ের দূর্গত মানুষের অন্তরে যখন কেবল হাহাকার, ফসল হারিয়ে লক্ষ লক্ষ কৃষকের চোখে যখন শুধু অন্ধকার,মাছের মড়ক,হাসের মড়ক,হাওড়ের জীব বৈচিত্র যখন হুমকির সম্মুখিন,ডাঙ্গার বাতাসেও সম্ভাব্য আ্যমোনিয়া প্রভাবিত দুর্গন্ধে শংকিত শহরের মানুষ তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মহাজ্ঞাণী সচিবের উদ্ভট ছাগলতত্ত্ব এ অঞ্চলের মানুষকে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।দু’দিন ধরে যার প্রতিফলন ঘটছে স্থানীয় সংবাদপত্র এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অর্ধেকের বেশী মানুষ মারা না গেলে দূর্গত এলাকা ঘোষনা করা যায়না,মাননীয় মন্ত্রী এবং আইন প্রণেতা সাংসদ গনের সম্মুখে এমন অমানবিক মনগড়া আইনের ধারার উদ্ধৃতি দিয়েই কেবল ক্ষ্যান্ত দিলেন না বীর বাহাদুর সচিব,যারা দূর্গত এলাকা ঘোষনার দাবী জানাচ্ছে, তাদের অজ্ঞান অর্থাৎ মুর্খ বলারও ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন করলেন।
কীসের দূর্গত এলাকা,যেখানে একটি ছাগলও মারা যায়নি, এমন সদম্ভ আস্ফালনও করেছেন এই ছাগল তত্ত্ববিদ।
“সুনামগঞ্জের জ্ঞানহীণ মুর্খ চাষাভূষারা কী করিয়া এমন জটিল তত্ত্ব বুঝিবে হে, প্রজাতন্ত্রের বেতনধারী কর্মচারী, যেখানে মানুষই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হইয়া মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থান নিয়াছে,দূর্গতির অন্ত নাই সেখানে দূর্গত এলাকা ঘোষনার জন্য একটি ছাগলকে অবশ্যই আগে মরিতে হইবে অতঃপর সুনামগঞ্জের আনুমানিক পঁচিশ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে কমপক্ষে তের লক্ষ মরিতে হইবে। তাহা হইলেই কেবল সদাশয় সচিবের বিবেচনায়,দূর্গত এলাকা ঘোষনা করা যাইতে পারে,তাহার আগে নয়।”
বর্তমান দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করেই প্রানের টানে ছুঠে এসেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ব্যথিত হয়েছেন।ফসল রক্ষা,হাওড় রক্ষার স্থায়ী সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন।স্থানীয় সংসদ সদস্য গনকে পরামর্শ দিয়েছেন, এ নিয়ে সংসদে জোরেশোরে কথা বলার জন্য।স্মরন করিয়ে দিয়েছেন, কান্নাকাটি না করলে স্নেহময়ী মায়ের দুধও পাওয়া যায়না।

বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষ সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবী জানাতেই পারে। এতে তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হচ্ছে এমন ধারনা পোষন করা অবান্তর। ঘোষনা দেয়া না দেয়া সরকারের উপরই নির্ভর করে।দুর্গত এলাকা ঘোষনা না করে সরকার যদি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম হয়ে মানুষের দুর্গতি লাঘব করতে পারে তাতেও আপত্তি জানাবো কেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং বিপর্যয়ের গভীরতা ও গুরুত্ব বিবেচনায় অন্যান্য যৌক্তিক দাবীর পাশাপাশি দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবীটিও কোনভাবেই অযৌক্তিক নয়।আর নয় বলেই স্থানীয় সাংসদ পীর মিসবাহ,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,পৌরমেয়র, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, আইনজীবি সমিতি সহ অনেক সংগঠন,সুজনের সম্পাদক ড,বদিউল আলম মজুমদার বাঁধ নির্মানে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্তসহ অন্যান্য দাবী দাওয়ার পাশাপাশি দূর্গত এলাকা ঘোষনার দাবীও উত্থাপন করেছেন।রাষ্ট্রপতি পুত্র সাংসদ রেজওয়ান আহমদ তৌফিক একই সঙ্গে সমগ্র হাওড় অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবী জানিয়েছেন।
স্বাধীনতার পয়তাল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হলেও আমলাতন্ত্রে বৃটিশ,পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। পূর্ব-পাকিস্তান প্রায়ই বন্যাক্রান্ত হয়ে ফসলহাণী,প্রাণহানীর কারনে পর্যুদস্ত হলেও কেন্দ্র থেকে কখনই এর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হতো না।দুর্গত এলাকা ঘোষনা করা হলে প্রদেশকে অতিরিক্ত সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে এই বিবেচনায় বাঙ্গালির ন্যায্য সকল দাবীর মত এই দাবীও অগ্রাহ্য হয়ে যেতো। সে নীতির ধারাবাহিকতা বলবৎ রয়েছে এযাবৎ।যৌক্তিকতা থাকলেও স্বাধীন দেশেএ দাবী সর্বদাই অগ্রাহ্য হয়েছে। সচিবের বাচালতায় তেমন বিস্মিত হয়নি।তবে যখন দেখি সুনামগঞ্জেরই কোনকোন রাজনীতিক যারা মানুষের সুখেদুঃখে পাশে থাকবেন,অসহায় মানুষের পক্ষ নিয়ে কথা বলবেন তারাই কোটারী স্বার্থে গিরগিটির মত রং পরিবর্তন করে সচিবের ছাগলতত্ত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমিক হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তখন এদের জন্য কেবল করুনাই হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn