ছাতকের সাবেক এসিল্যান্ড’র বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ
ছাতকের সাবেক সহকারী কমিশনার(ভুমি) শেখ হাফিজুর রহমানসহ চার জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নামজারি ও ভুমি আত্মসাতের অভিযোগ এনে ১৭ আগষ্ট সেগুনবাগিচা দুদক কার্যালয়ে ৪জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ(নং-পি ৯১৭) দায়ের করেন উত্তর খুরমা ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুস ছত্তারের পুত্র তাজুল ইসলাম, বর্তমান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের বাসিন্দা তিনি। অভিযোগে শেখ হাফিজুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমেদ, সদস্য ছাইম উদ্দিন ও কাঞ্চনপুর গ্রামের তোতা মিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ থেকে জানা যায়, তাজুল ইসলামের বাবা আব্দুস ছত্তারের পিতামহ সফাত উল¬ার নামে ছাতক উপজেলার মৈশব মৌজায় ৪ একর ৮৬শতক ভূ-সম্পদ রয়েছে। সফাত উল্ল¬¬ার নামে উক্ত ভূ-সম্পদ রেকর্ডভূক্ত অবস্থায় এসব ভুমি ভুয়া কাগজ পত্র সৃজন করে সাবেক সহকারী কমিশনার(ভুমি) শেখ হাফিজুর রহমান ও উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, ইউপি সদস্য ছাইম উদ্দিন ও কাঞ্চপুর গ্রামের মৃত আরজদ মিয়ার পুত্র তোতা মিয়া পরস্পর যোগসাজশে সিংহভাগ রের্কডীয় সম্পত্তি দূর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত করেছে তোতা মিয়া। এসব সম্পত্তি তোতা মিয়া গংদের নামে ভিন্ন-ভিন্ন নামজারী করে আত্মসাত করা হয়। অভিযোগে আরো উল্লে¬খ করা হয়, মৈশব মৌজার সফাত উল্লাহ’র রেকর্ডীয় সম্পত্তি কোন ব্যক্তির নামে নামজারী করে ভুমি খারিজ না করার জন্য ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারী তৎকালীন সহকারী কমিশনার(ভুমি) শেখ হাফিজুর রহমান বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন(যার ডকেট নং-১৮২৫) তাজুল ইসলাম। তিনি বিষয়টি আমলে না নিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে একাধিক নামজারী সৃজন করে সফাত উল্ল¬াহ’র উত্তরাধিকারীদের সস্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন। এদিকে ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারী সফাত উল্ল¬াহ’র উত্তরাধিকারীদের নামে একটি সনদ প্রদান করেন উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্ল¬াল আহমদ ও ইউপি সদস্য ছাইম উদ্দিন। এতে রাজারগাঁও গ্রামের গুল মামুনের পুত্র আব্দুল্লাহ এবং তার ওয়ারিশ জহর আলী, মাফিজ আলী, করামত আলী, সফাতউল্লাহ ও জয়বান বিবি উল্লেখ করেন। এ সনদপত্র প্রদান করলেও আর্থিক লাভবান হয়ে রাজারগাঁও গ্রামের আব্দুল্লাহ ও কাঞ্চনপুর গ্রামের সাদউল্লাকে একই ব্যক্তি দেখিয়ে তাদের পুত্র সফাত উল্ল¬াহর নামে পরবর্তি উত্তরাধিকারী সনদ দিয়েছেন তারা। এ সম্পদের বিরুধ নিয়ে তাজুল ইসলামকে হত্যার চেষ্টা করা হলে ২০১৬ সালে ১৪ জানুয়ারী তিনি ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিনি উত্তরাধিকারী সনদ গ্রহন করে সহকারী কমিশনার(ভুমি) কার্যালয়ে দাখিল করেন। এসব সনদ দিয়েই কাঞ্চনপুর গ্রামের তোতা মিয়া, মৈশাপুর গ্রামের গোলাম হাফিজ, বশির উদ্দিন, তেরাপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার, কেজাউরা গ্রামের ফজিলেতুলনেছাসহ ভিন্ন-ভিন্ন লোকের নামে একাধিক নামজারী ইস্যু করেন তৎকালিন সহকারী কমিশনার(ভুমি) শেখ হাফিজুর রহমান(পরিচিতি নং-১৬৭০০)। ইউপি চেয়ারম্যান বিল্ল¬াল আহমদ ও সদস্য ছাইম উদ্দিন অবৈধ আর্থিক লাভবান হয়ে সহকারী কমিশনার(ভুমি) শেখ হাফিজুর রহমানকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে তাজুল ইসলামকে মৌরশী স্বত্ত থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তাজুল ইসলাম। ছাতকে দায়িত্ব পালনকালে শেখ হাফিজুর রহমান ভুয়া কাগজ পত্রের মাধ্যমে এ রকম কয়েক শ’ নামজারী ও জমা খারিজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুয়া নামজারী নিয়ে এ সময় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হলে তার করা অন্তত শতাধিক নামজারী বদলীর প্রাক্কালে তিনি লিখিত আকারে বাতিল করেন। বিবিধ মামলা ৩৯/১৬-১৭’র আদেশে এ কর্মকর্তা আরো ৪৮টি নামজারী একইভাবে বাতিল করেন। ছাতকের সহকারী কমিশনার(ভুমি) সাবিনা ইয়াসমিন এ ব্যাপারে জানান, ৮০টি নামজারী বাতিলের বিষয়টি তিনি জানেন। ভুয়া নামজারীর সাথে জড়িত কবির আহমদ নামের এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভুয়া নামজারীর বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ারও কথা জানান তিনি।