ছাতকে ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জকে ফসলহারা কৃষকদের প্রতিবাদ সভা
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, যুবদল, কৃষকদল ও ছাত্রদলের আয়োজনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাওররক্ষা বাঁধে ঠিকাদারের কাজে গাফিলতি করার কারণে দেখার হাওরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও ঠিকাদারের শাস্তির দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টা হতে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উপজেলার পাগলা বাজারের সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নেতাকর্মী ও স্থানীয় কৃষকরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। মানববন্ধনে উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রওশন খাঁন সাগরের সভাপতিত্বে ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক স¤পাদক আবুল কাসেমের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- অ্যাড. শহিদুজ্জামান চৌধুরী, অ্যাড. রুহুল আমিন, অ্যাড. ছাবিকুজ্জামান, অ্যাড. জালাল আহমদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা বিএনপি নেতা ইলিয়াছ আলী, আওলাদ হোসেন, জয়নাল আবেদীন, মতিউর রহমান, আরাফাত আলী, নুরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান, তফজ্জুল হোসেন, জাফর ছাদেক লেবু, দিদার চৌধুরী, নুর উদ্দিন, আসকির আলী, সলিব নুর বাচ্চু, তোফায়েল আহমদ, আবুল খয়ের, সিতু মিয়া, আসাদুজ্জামান আসাদ, ফখর উদ্দিন, কনু শাহ, উপজেলা যুবদল নেতা, শাহ জামান, সুমন মিয়া, আক্তারুজ্জামান, আলী হোসেন, কয়েছ, জসিম উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদল নেতা, লিটন আহমদ, হুমায়ুন কবির, ছমির উদ্দিন, মানসুর আহমেদ, নাছির আহমদ, হারুন রশিদ, কাওছার আহমদ প্রমুখ। মানববন্ধনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ বলেন- ঠিকাদারের সাথে কমিশন খেয়ে আমাদের উপজেলা পর্যায়ের ১ জন জনপ্রতিনিধি সময়মতো কাজ করান নি। তারা মিলেমিশে কৃষকের মুখের অন্ন কেড়ে নিয়েছেন।
তিনি বলেন- আমিও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম, আমার আমলে কোন হাওরেও এভাবে পানি ঢুকেনি। আপনি তো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আপনি কয়দিন হাওরে গিয়েছেন, কেন সময় মতো কাজ তদারকি করেন নাই। আপনি তো হাওররক্ষা বাঁধের উপদেষ্টা। সাধারণ মানুষ সব জানে, কে কী করেছেন। মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা করার হিসাব একদিন দিতে হবে। তিনি বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেন- আপনার এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিটিং-মিছিল করা আপনার কাজ না। এসময় তিনি সরকারের কাছে ৩ দফা দাবি তোলেন। তিনি বলেন- দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা, প্রতি ইউনিয়নের ৪ হাজার কৃষককে প্রতিদিন ৪ কেজি করে চাল ও কৃষকদের কৃষিঋণ মওকুফ করে নতুন করে ঋণ দিতে হবে ও আগামী মৌসুমে কৃষদের বিনামূল্যে বীজ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন- বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল-আটার দাম বাড়িয়ে যে সিন্ডিকেট করেছে তা ডাকাতির সমান। এটা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আরো বলেন- দেখার হাওর অংশে মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমদ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকার কাজ পেয়েছিল। তারা ৫ লাখ টাকার কাজও দেখার হাওরে করায় নি, আর তাই তাদের গাফিলতির কারণে দেখার হাওর তলিয়ে গেছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমদ ও তাদের সাথে পার্র্সেন্টিসে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
ছাতকে ফসলহারা কৃষকদের প্রতিবাদ সভা
ছাতকের সিংচাপইড় ও ভাতগাঁও ইউনিয়নের ফাটার হাওর, পনাগড় হাওর এবং ভোলাখালী হাওরের বোরো ফসলহারা কৃষকরা প্রতিবাদ সভা করেছেন। বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) সকালে ১০ গ্রামবাসীর উদ্যোগে জিয়াপুর-পরগনা বাজারে এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাজার কমিটির সভাপতি শফিক উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন- ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া, সাব্বির আহমদ, সুনু মিয়া, আছাব আলী, সাবেক মেম্বার আঙ্গুর মিয়া, আব্দুর রশীদ, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন আশকর, মাও. মিসবাহ উদ্দিন, জিল্লুল হক, সায়েম আহমদ, ফজলুল হক, সালেহ আহমদ, ডা. খলিলুর রহমান, এম. তৈয়বুর রহমান, জুবায়ের আহমদ, গোলাম রব্বানী, আব্দুল আলিম, মহরম আলী, কবির উদ্দিন প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন, সিংচাপইড় ও ভাতগাঁও ইউনিয়নের ফাটার হাওর, পনাগড় হাওর এবং ভোলাখালী হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে ও ১০ গ্রামবাসীর অর্থায়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়ে ছিল। সিংচাপইড় ইউনিয়নের পরগনা বাজার-জিয়াপুর থেকে খাসগাঁও-ইসলামগঞ্জ পর্যন্ত হাওর রক্ষা বাঁধ গত দু’বছর ধরে সংস্কার করে আসছে শ্রীপতিপুর, শক্তিয়ারগাঁও, গোয়াসপুর, হায়দরপুর, ভাতগাঁও, গাগলাজুর, সিংচাপইড়, জিয়াপুরসহ ১০ গ্রামের লোকজন।
গত ৩১ মার্চ রাতে মাছ শিকারের জন্য এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে আইনাকান্দি গ্রামের পূর্ব দিকে বাঁধের কিছু অংশ কেটে দেয়া হয়। পরবর্তীতে কাটা অংশ সংস্কার না-করায় অকাল বন্যার স্রোতের তোড়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে হাওরের ৩ সহস্রাধিক একর বোরো ফসল তলিয়ে যায়। বেড়িবাঁধ কেটে বোরো ফসলের ক্ষতি সাধনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।