ছাতকে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে কেঁদে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা
সুনামগঞ্জ :: ছাতক উপজেলার সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বাজারে এলাকার সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন মেহদী হাসান রাব্বী(২২) নামের স্থানীয় এক যুবক। ওই সন্ত্রাসী চক্রের বেআইনি কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই ছিল রাব্বীর ‘অপরাধ’। ২৩ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় সন্ত্রাসীচক্র রাব্বীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় তার। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকলেই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত। এদের মদত দেন ছাতক পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিয়াকত আলী। হত্যা মামলার আসামিও তিনি। ২৬ জুলাই তারেক হোসনে, আতিকুর রহমান সোহাগ, মুক্তার আলী, রনি মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাসান, তাজিম হোসাইন, অপু মিয়া, লিয়াকত আলী, বাবু মিয়া, জামিল হোসেন, বাবু আহমেদ, আমির আলী, মামুন আহমদ, খুরশেদ আলম অর্নব, রাজু মিয়া ও সানি আহমদকে আসামি করে ছাতক থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রাব্বীর মা রুপিয়া বেগম।
এদিকে, রাব্বি হত্যার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এজাহারভুক্ত ১৭ আসামির কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি থানাপুলিশ। প্রভাবশালী আসামিদের স্বজনরা উল্টো টাকা-পয়সার বিনিময়ে মামলা আপস করার জন্য বাদিকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। একমাত্র পুত্র সন্তানের খুনের ঘটনা কোন কিছুর বিনিময়ে আপস করতে নারাজ রাব্বীর মা । বিচার চেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশ প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে। রাব্বীর মা রুপিয়া বেগম ছাতক পৌরসভার নোয়ারাই গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালিকের মেয়ে। তাঁর শ্বশুর অর্থাৎ নিহত রাব্বীর দাদা তোফায়েল হোসেন খানও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছেলে হত্যার ঘটনা এই প্রতিবেদকের সম্মুখে যখন বর্ণনা করছিলেন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা রুপিয়া, তখন তার দুচোখ দিয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু।
বলছিলেন, “বাবায় ভোট’র আগে কসম দিতা, নৌকাত যেন ভোট দেই। আইজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাত। আমার একমাত্র ফুয়া ( ছেলে) সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করায় খুন অইল। কিন্তু বিচার ফাইরাম না। ১৪ দিন অইগেছে একজন আসামিও গ্রেফতার অইলো না। ইতা কিজাত বিচার।” তাঁর অভিযোগ, “আসামি আর তারার বাপ-চাচারা অনেক শক্তিশালী। তারা আমারে টেখা-পয়সা দিয়া মামলা আপস খরার লাগি চাপ দিরা। আমি খইছি, টেখা চাই না, আমার ফুয়া চাই।” এদিকে, সংসারের একামাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে অর্থনৈতিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিহত রাব্বীর মা রুপিয়া। বিদেশ যাওয়ার পর ১৭ বছর ধরে নিখোঁজ স্বামীর সংসারে দুই ছেলে-মেয়েকে আলগে রেখেছিলেন পরম মমতায়। ছেলে সংসারের হাল ধরার পরে সুখের দেখা পেলেও সেটা আর স্থায়ী হয়নি। স্থানীয় সূত্র জানায়, রাব্বীকে যারা খুন করেছে সেইসব আসামিসহ ২৭ জনের একটি গ্রুপ ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ও নোয়ারাই বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় বাজারের মাসুমের টেলিভিশন সারাইয়ের দোকান ও রেজার মোদি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে তারা। কিন্তু প্রাণভয়ে এসব অন্যায় কার্যকলাপ নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন নিরীহ এলাকাবাসী। থানাপুলিশের কাছে যাওয়ারও সাহস করছেন না কেউ। রাব্বী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আব্দুল মান্নান বলেন, “আসামিরা ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছে। এক জায়গা অবস্থান না কারায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।” সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান বলেন, “নিহতের মা আমার কাছে এসেছিলেন। দুই দিনের মধ্যে আসামিদের ধরতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কোন শিতিলতা সহ্য করা হবে না।