বিজয় রায়-

ছাতকে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে দু’গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অন্তত ২৫জনকে ভর্তি করা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ দেড় শতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এসময় ঘন-ঘন ককটেল বিস্ফোরন ঘটিয়ে এলাকায় আতংকের সৃষ্টি করা হয়। দফায়-দফায় সংঘর্ষে জাউয়াবাজার, খিদ্রাকাপন ও পাইগাঁও এলাকা পরিনত হয় রণক্ষেত্রে। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও জাউয়া-ছাতক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। উভয় সড়কে যাত্রী ও মালবাহী গাড়ী আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বাজারের দোকান-পাট বন্ধ হয়ে পড়ে। বাজারে আসা লোকজন ও যাত্রী সাধারনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতংক। রোববার বিকেলে জাউয়াবাজার ইউনিয়নের খিদ্রাকাপন ও পাইগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাইগাঁও গ্রামের হাজী আসিদ আলীর পুত্র জমির আলী ও খিদ্রাকাপন গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র সেলিম আহমদের মধ্যে কিছু টাকা লেনদেনের ঘটনা নিয়ে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার রাতে জমির আলীর কাছে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে সেলিম আহমদের সাথে তার বাক-বিতন্ডা ও হাতা-হাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় নিস্পত্তি হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছিল চাপা উত্তেজনা। হাতা-হাতির ঘটনাটি শনিবার উভয় পক্ষের লোকজন নিজ-নিজ গ্রামবাসীকে অবহিত করেন। রোববার বিকেলে বিষয়টি জানতে জাউয়া-ছাতক সড়কের ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হন খিদ্রাকাপন গ্রামের গন্যমান্য লোকজন। এসময় জমির আলীর চাচা হাজী মর্তুজ আলী এখানে উপস্থিত হয়ে বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষ্যে তাদের নিকট অনুরোধ জানান। ঘটনাটি নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা চলাকালে পাইগাঁও গ্রামের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় হামলার চেষ্টা করলে খিদ্রাকাপন গ্রামবাসীর সাথে তাদের সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটে। রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে গোটা এলাকা পরিনত হয় রণক্ষেত্রে। সংঘর্ষ চলাকালে ঘন-ঘন ককটেলের বিস্ফোরন ঘটানো হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ ও এএসপি-সার্কেল দুলন মিয়ার নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ থেকে দাঙ্গা ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে। এ সময় দেড় শতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া, জাউয়াবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আছাদুর রহমান আছাদ, সেক্রেটারী কামাল উদ্দিনসহ গন্যমান্যদের হস্থক্ষেপে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আসে। সংঘর্ষে পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ উভয় গ্রামের শতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহত লোকমান(৩০), আকমল(২৬), আব্দুর রাজ্জাক(৫৫), সাগর উদ্দিন(৫০), এখলাছ আলী(২৫), শিবলু(২০), সিদ্দিকুর রহমা(৩০), আব্দুল কাইয়ূম(৩৪) আলী নূর(২৮), হাবিবুর রহমান(৩৬), আমিনুর রহমান(২৮), ছিদ্দিকুর রহমান(৩০), রুবেল(১৮), আব্দুল মুকিত(৩২), জামাল(২৫), আবারক আলী(৫০), মনফর আলী(৫৫), আবু তাহের(২২), মঈন উদ্দিন(৩৩), সাহাব উদ্দিন(২৮), মজুন মিয়া(৩০)সহ ২৫জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া, ইউপি সদস্য আব্দুল কদ্দুছ সুমন, পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর মোর্শেদ, এসআই নূর মোহাম্মদ, এএসআই সাইফুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, মিনহাজুল ইসলাম, কনষ্টেবল আব্দুল মোমেন, আব্দুল হাই, আব্দুল মতিন, উভয় গ্রামের ছাদেক, ছুরত, আবুল, জুনেদ, জাবেদ, জয়নাল, জমির, আক্কল, জুলফিক, ফকর উদ্দিন, রেজা, মুহিত, ছোট মিয়া, রুহেল আহমদ, এখলাছ, শিপু, ইমরান, মিলন, আরফান, জয়নুল, ফটো মিয়া, সোহেল, সোনা মিয়া, তারা মিয়া, আকবর আলী, আব্দুল আলিম, সুমন, বাবলু, ইব্রাহিম, লেচু মিয়া, জাফরুল, আলম, মোমেন, ফরিদ, শিমুল, আরিফ, শিপন, দিলদার, সেলিম, করিমসহ অন্যান্য আহতদের ছাতক ও কৈতক হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা সংঘর্ষে জড়িত থাকার সন্দেহে ২৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ছাতক থানার ওসি আতিকুর রহমান ২৪ জন গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশ ৯১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২৯ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। এসময় কর্মকর্তাসহ ৯জন পুলিশ আহত হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn