জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিয়ে অসমাপ্ত বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ৫ নং বিশেষ জজ আদালতে তিনি এ অসমাপ্ত বক্তব্য দেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের অবদানও তুলে ধরেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার অবদান তুলে ধরেন তিনি। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। জারি করা হচ্ছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। চার দশকের স্মৃতি বিজড়িত বসতবাড়ি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমাকে বাসা ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে বালুর ট্রাক দিয়ে কয়েক দফায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমি অবরুদ্ধ অবস্থাতে বিদেশে চিকিৎসাধীন ছোট ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পাই।’ এর পরই খালেদা জিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ছেলের জন্য কান্নায় চোখ ভিজালেন। কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। আংশিক বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সেইদিন (কোকোর মৃত্যুর দিন) আমি ও আমার সঙ্গে যারা অফিসে অবরুদ্ধ ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ করা হয় রাস্তায় গাড়ি পুরানো এবং বিস্ফোরক দিয়ে মানুষ হত্যার। অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমরা এসব করেছি। এটা কি কোনো সভ্য মানুসিকতা হতে পারে?। এদিন খালেদা জিয়া ১১টা ৫৮ মিনিটে আদালতে হাজির হন। তার আগে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে গুলশানের বাস ভবন ‘ফিরোজা’ থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ৫ নং বিশেষজজ আখতারুজ্জামানের আদালত উপস্থিতির এ দিন ধার্য করেন। এদিন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে মুচলেকা দিয়ে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন নেন খালেদা জিয়া।

জামিন আদেশের পর বিরতি শেষে আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থানের সময় দেন। এরপর তিনি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বক্তব্য রাখেন। ওইদিন খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার আবার তিনি অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল (ইকোনো কামাল), ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn