জগন্নাথপুরের পলাতক ৫ লন্ডন প্রবাসীর মালামাল ক্রোকের আদেশ
সিলেট :: নারী নির্যাতন মামলায় সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের পলাতক ৫ আসামির মালামাল ক্রোকের আদেশ দিয়েছে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। ২৮ আগস্ট ওই আদেশ জারি করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক। এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সিলেট নগরীর লামাবাজার এলাকার এক গৃহবধূর মামলায় ওই আদেশ জারি হয়েছে।অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- জগন্নাথপুর থানার বাড়ি জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমানে সিলেট নগরীর নবাব রোডের ৫৭নং বাসা মিনার মঞ্জিলের আফরোজ হোসেন মাস্টারের পুত্র লন্ডনপ্রবাসী মোকতাহ হোসেন মুন্না, মিনারা খাতুন, তাহিরপুর থানার ঠাকুরহাটি গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী মহিবুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম, জগন্নাথপুরের শালদিয়া গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী মখলিছ মিয়ার স্ত্রী মনিরা বেগম ও গোলাপগঞ্জের দত্তরাইল (ঢাকা দক্ষিণ) গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী ইব্রাহিম মিয়ার স্ত্রী মতিরা ইব্রাহিম। এর মধ্যে সলিসিটর মনিরা বেগম লন্ডনের ওল্ডহামের মায়া সলিসিটরের মালিক।
জানা গেছে, মোকতাহ হোসেন মুন্না ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল বিয়ে করেন সিলেট নগরীর লামাবাজার এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক নারীকে। বিয়ের পর মুন্নাসহ আসামিরা যৌতুকের জন্য নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করে। নববধু ও তার পরিবারের কাছে নগদ ৫০ লাখ টাকাসহ একটি প্রাইভেট গাড়ি দাবি করেন আসামিরা। কিন্তু নববধুর পরিবার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মুন্নাসহ অন্য আসামিরা। যা এক পর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন পর্যায়ে নেমে আসে। ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডন চলে যান মুন্না। যৌতুক নেওয়ার জন্য ২৮ নভেম্বর দেশে ফেরেন তিনি। মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মুন্না দেশে এসেই অন্য আসামিদের সহযোগিতায় আবারও যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। অপারগতা প্রকাশ করলে ডিসেম্বর মাসে লন্ডনে চলে যান মুন্না। নববধূকে মজা দেখানোর হুমকি দিয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টি আপসনিষ্পত্তি করেন। এর পর তারা নববধূকে লন্ডনে নিয়ে যান। লন্ডনে নিয়ে ওই গৃহবধূর উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নানাভাবে চাপ দেয় দেশ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য। ওই টাকা স্বামীর ব্যবসার কাজে লাগানোর জন্য। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই গৃহবধূ কয়েকবার হাসপাতালেও ভর্তি হন। কয়েক মাস পর ওই গৃহবধূকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দাবিকৃত যৌতুকের টাকা নেওয়ার জন্য।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গৃহবধূ দেশে আসার পর অন্য আসামিরা দেশে আসেন। আসামিরা যৌতুকের টাকা আদায় করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। সামাজিকভাবেও তারা যৌতুকের টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। আসামিরা যৌতুকের টাকার জন্য ওই গৃহবধূকে নির্যাতন করতে শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৫ জুন ওই গৃহবধূকে বেদম মারপিট করে আসামিরা। পরে ওই গৃহবধূকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গৃহবধূর পরিবারের লোকজন এর পরপরই আইনের আশ্রয় নেন। আসামিরা আদালতে হাজির না হয়ে বিষয়টি আপসে শেষ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু তা শেষ না করে নানা টালবাহানা শুরু করেন। গত ২৮ আগস্ট আদালত আসামিদের মালামাল ক্রোকের আদেশ দেন।