জগন্নাথপুরে অভাবী মানুষের দীর্ঘ লাইন
জগন্নাথপুর বাদাউরা গ্রামের লক্ষী দাস এক বছরের সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন চাল কেনার লাইনে। তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টায় লাইনে দাঁড়াই। বিকালে আমাকে চালের বদলে ৫ কেজি আটা দিছে।’ উপজেলা সদরের বলবল গ্রামের অশতিপর বৃদ্ধা সুমতি বিবি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বহুত দূর থাকি কষ্ট কইরা আইয়া চাউল পাইলাম না। ডিলার বেটায় কয় চাউল নাই।’ জগন্নাথপুর সদর গ্রামের বিধবা শাহানা বেগম সাথে থাকা দুই সন্তান নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দুই দিন ধরে বাচ্চাদের নিয়ে উপাস। ফজরের আজানের ফর আইছিলাম। তেব (তবু) চাউল ফাইছি না।’
গত ৪০ বছরে উপজেলায় এ ধরনের খাদ্যের অভাব হয়নি বলে জানিয়েছেন বয়োবৃদ্ধরা। পর পর তিন বছর বোরো ফসল হারিয়ে এলাকার কৃষক পরিবারের লোকজনের মধ্যে এখন হাহাকার চলছে। একদিকে মানুষের খাদ্যের অভাব, অন্য দিকে গো-খাদ্যের অভাবে এক মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা সদরের ন্যায্য মুল্যের তিনটি চাল বিক্রয় কেন্দ্রে প্রতিদিন এক টন চাল ও এক টন আটা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। প্রতিদিনই হাজার হাজার অভাবী মানুষ লাইনে ভীড় করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে দুইশ’ লোককে ৫ কেজি চাল বা আটা দেয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ লোকই খালি হাতে ফিরছেন। এ অবস্থায় বরাদ্দ দ্রæত বাড়ানোর জন্য এলাকাবাসি দাবী জানিয়েছেন। উপজেলা সদরের ১৫ টাকা কেজি চালের ডিলার কানু রায় বলেন, ‘আমাদেরকে প্রতিদিন একটন চাল ও একটন আটা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মধ্যরাত থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিদিন হাজারের উপর দুস্থ নারী পুরুষ লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু সবাইকে চাল দেয়া সম্ভব হয় না। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ টন চাল দেয়া প্রয়োজন।’ এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলার ইউএনও মাসুস বিল্লাহ বলেন, ‘অভাবী মানুষের দীর্ঘ মিছিল দেখে আমি বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য চিঠি লিখেছি। কয়েকদিনর মধ্যে বরাদ্দ বাড়ানো হবে বলে আশা করছি।’