জগন্নাথপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ নোট-গাইডের রমরমা বাণিজ্য
ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ::
জগন্নাথপুরে প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ নোট-গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য। দেখার যেন কেউ নেই। গলাকাটা এ বাণিজ্যের খেসারত দিচ্ছেন নিরীহ অভিভাবকরা। জানাগেছে, জগন্নাথপুর পৌর সদরের ডাক বাংলো রোডে অবস্থিত শাহজালাল লাইব্রেরির মালিক অলি উদ্দিনের মাধ্যমে বিভিন্ন পুস্তক কোম্পানীর এজেন্টরা জগন্নাথপুরে আসেন। এরপর তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির শিক্ষকদের ম্যানেজ করে নিম্নমানের অবৈধ নোট-গাইড বই অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে থাকেন। তাদের চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় নির্দিষ্ট লাইব্রেরি থেকে এসব বই অতিরিক্ত মূল্যে ছাত্রছাত্রীদের কিনতে বাধ্য করা হয়। যার আর্থিক খেসারত দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাতে গিয়ে এমনিতেই অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর অবৈধ গাইড বই অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া এসব বই স্কুলে না নিয়ে গেলে শিক্ষকদের কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীদের ধমক খেতে হয়। অনেক দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এসব বাহারী দামী গাইড বই কিনতে না পারায় শিক্ষকদের ধমকের ভয়ে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে না। এ সুযোগে অসাধু লাইব্রেরি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে অবৈধ গাইড বই বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন। যার প্রমাণ শাহজালাল লাইব্রেরির মালিক অলি উদ্দিন। এক সময় যার কিছুই ছিল না। মাত্র কয়েক বছর আগে কুমিল্লা থেকে শুন্য হাতে জগন্নাথপুরে এসে অবৈধ গাইড বই বিক্রি করে এখন তিনি জিরো থেকে হিরো হয়ে গেছেন।
এবারো শাহজালাল লাইব্রেরির মালিক অলি উদ্দিন স্থানীয় আব্দুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে ‘চ্যালেঞ্জ’ নামের একটি প্রকাশনীর নোট ও গাইড বই বিক্রির জন্য চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষকরা এসব বই শাহজালাল লাউব্রেরি থেকে কিনতে ছাত্রছাত্রীদের পাঠিয়ে থাকেন। এসব বই শাহজালাল লাইব্রেরি ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এ সুযোগে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক সেট বই ১ হাজার ৬ শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। বইয়ের কমিশন থাকলেও তারা যার কাছ থেকে যত পারে ততই হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার আরো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে শাহজালাল লাইব্রেরির চুক্তি রয়েছে বলে অনেকে জানান। যার কমিশন দেয়া হয় এক শ্রেণির শিক্ষকদের। অসাধু লাইব্রেরি ব্যবসায়ী ও এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা মিলে গড়ে তুলেছেন একটি সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন নিরীহ অভিভাবকরা। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হলে যে কোন মূল্যে এসব গাইড বই কিনে দিতে হয়। যার খেসারত হিসেবে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। আর এসব টাকার ভাগ যায় এ সিন্ডিকেটের বিভিন্ন পকেটে। এভাবেই প্রকাশ্যে দাপটের সাথে জগন্নাথপুরে চলছে অবৈধ নোট ও গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য। যদিও সরকার এসব সহযোগী বইকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। সেই সাথে সরকারি মুল বই পড়ানোর তাগিদ দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে শাহজালাল লাইব্রেরির মালিক ও জগন্নাথপুর পুস্তক সমিতির সভাপতি অলি উদ্দিন বলেন, সরকারি নির্ধারিত মূল্যে আমরা এসব বই বিক্রি করছি। তিনি দাপটের সাথে বলেন, এসব নোট ও গাইড বই অবৈধ নয়। সুতরাং লুকোচুরি করে বিক্রি করার প্রশ্নই উঠে না।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, এসব নোট-গাইড বই সরকার কর্তৃক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা এসব বই বিক্রি করছে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। অচিরেই এসব বই বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।