জগন্নাথপুর: অর্ধকোটি টাকার সরকারি জায়গা কোটিপতির পেটে
মো.শাহজাহান মিয়া-
জগন্নাথপুর সদর বাজারের ব্যস্ততম পৌর পয়েন্ট থেকে রাণীগঞ্জ রোডে অবস্থিত আবদুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইট পর্যন্ত ৮ টি দোকান রকম ভিটা বন্দোবস্ত নেয়া নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জবর দখলকারী কোটিপতি বিএনপি নেতার ক্ষমতার কাছে নির্বিকার হয়ে পড়েছে প্রশাসন।
জানাগেছে, বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জগন্নাথপুর বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা দখল মুক্ত করা হয়। এতে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় শতাধিক দোকান ভিটা রকম জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরবর্তীতে এসব দোকান থেকে উচ্ছেদ হওয়া বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আবার এসব জায়গা বন্দোবস্ত নিতে গেলেও তাদেরকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়নি। বন্দোবস্ত না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা হাল ছেড়ে দিলে মাথা গঁজিয়ে উঠে জগন্নাথপুর পৌর শহরের মির্জা বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৃত ব্যারিস্টার মির্জা আবদুল মতিনের ছেলে জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক কোটিপতি ব্যবসায়ী মির্জা আবুল কাশেম স্বপনের। তিনি খুবই কূট-কৌশলে ঘটনার কয়েক বছর পর বিগত ২০০৯ সালে স্থানীয় ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে অতি গোপনে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের এসব পরিত্যক্ত দোকান ভিটা নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে বাজার ফেরিপেরি আওতায় বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার বন্দোবস্ত আনলেও হৈচৈ পড়ে যাওয়ার ভয়ে কোন স্থাপনা নির্মাণ করেননি। অবশেষে গত কয়েক দিন আগে রাণীগঞ্জ রোডে অবস্থিত আবদুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইটের সামনে সড়কের পশ্চিম দিকে থাকা সরকারি জায়গায় পাকা দালান ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন মির্জা আবুল কাশেম স্বপন। তা স্থানীয় জনতা ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের নজরে আসলেও কোন কাজ হচ্ছে না। মির্জা আবুল কাশেম স্বপনের ক্ষমতা ও টাকার কাছে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নির্বিকার হয়ে গেছেন। শুরু হয়েছে লুকোচুরি খেলা। প্রশাসনের লোকজন সকালে এসে ঘর তুলতে নিষেধ দিলেও রাতে চুরি করে কাজ করা হয়। এভাবে অনেকবার প্রশাসন নিষেধ করলেও কাজ হচ্ছে না। প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে আবার কাজ শুরু হয়। এভাবেই চলছে সরকারি জায়গা জবর দখলের খেলা। বুধবার সরজমিনে দেখা যায়, সরকারি দোকান ভিটা দখল করতে দালান নির্মাণের কাজ করাচ্ছেন মির্জা আবুল কাশেম স্বপন। অথচ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা বলেন, কাজ বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করে জানান, সরকারি বাজার ভিটা রকম জায়গা নিয়ম অনুযায়ী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বন্দোবস্ত পাওয়ার কথা। এছাড়া সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত পেতে হলে কাচা স্থাপনা রকম দখল থাকতে হয়। পরিত্যক্ত জায়গা বন্দোবস্ত দেয়া হয় না। অথচ সরকারের কোন নিয়মনীতি না মেনে বড় অংকের ঘুষের বিনিময়ে এক ব্যক্তি বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে ৮ টি দোকান ভিটা বন্দোবস্ত নিয়েছেন। যা বাজারের গরীব ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারার সমান বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল। এছাড়া কোটিপতি বিএনপি নেতা সরকারি এসব জমি বন্দোবস্ত নিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করে বড় অংকের চুক্তি ও ভাড়ায় অন্য ব্যবসায়ীকে প্রদান করেন। বন্দোবস্ত নীতিমিালায় বন্দোবস্ত গ্রহিতা নিজে ব্যবসা করার কথা থাকলেও এখানে বন্দোবস্ত নীতিমালাকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাছাড়া জগন্নাথপুরে সরকারি জমি ধনী ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত দেয়ার মাধ্যমে কোটিপতিকে শিল্পতি এবং গরীব ব্যক্তিদের ভিখারি বানানোর পায়তারা চলছে। সেই সাথে সরকার দল আওয়ামাীলীগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সুবিধা নিচ্ছে বিএনপি। তাই এসব বন্দোবস্ত বাতিল করে বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বন্দোবস্ত দিতে সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে মির্জা আবুল কাশেম স্বপন বলেন, আমার জায়গা সম্পত্তির কোন অভাব নেই। এসব সরকারি জমি আমার কোন প্রয়োজন না থাকলেও তৎকালীন সরকারি কর্তা ব্যক্তিরা আমাকে বাড়িতে এনে ঝেচে দিয়েছেন। আমি এখনো চাই, এসব জমি যেন গরীব লোকদের বন্দোবস্ত দেয়া হয়। তবে তিনি মুখে নীতি ও নৈতিকতার কথা বললেও তিনি গোপনে বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে সরকারের অর্ধকোটি টাকা মূল্যের জমি বন্দোবস্ত এনে এখন লুকোচুরির মাধ্যমে দখল করতে রাতের আধাঁরে পাকা দালান নির্মাণ করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শামীম আল ইমরান বলেন, আমি জগন্নাথপুরে আসার আগে এসব জায়গা বন্দোবস্ত দেয়া হয়। তবে এসব জায়গায় যেন স্থায়ী পাকা স্থাপনা নির্মাণ না করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা মির্জা স্বপনকে নিষেধ করেছি। তাতেও কাজ হচ্ছে না। তিনি লুকিয়ে কাজ করাচ্ছেন। আমরা কতক্ষণ পাহারা দিব বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাবেরা আক্তার ও জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ বলেন, সরকারি জমি রক্ষায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।