জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন মাঠেঃ নেই প্রবাসী প্রার্থী
সুনামগঞ্জ-সিলেটের সীমানা পেরিয়ে জগন্নাথপুরের ভোটের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সাত-সমুদ্র তেরো নদীর পারেও। দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় যেকোনো নির্বাচনে তাই আলাদা আমেজ ছড়ায়। ভোট প্রার্থনা চলে দেশে-বিদেশে। দেশের বাইরের প্রার্থীও থাকেন নির্বাচনে। আগেরবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৪ জনই ছিলেন প্রবাসী। তবে এবার হঠাৎ করে নির্বাচনের তফসিল আসায় নির্বাচনী ময়দানে নেই কোনো প্রবাসী প্রার্থী। এবার তাই জগন্নাথপুরে নির্বাচনের রং একটু ফিকেই হয়ে গেছে। তবে প্রবাসীরা সরাসরি নির্বাচনে না থাকলেও নির্বাচন থেকে তাদের দূরে রাখার উপায় নেই। নিজেরা না থাকলেও তাদের আত্মীয় পরিজনরা তো রয়েছেন। প্রবাসীরা দূর থেকে তাদের জন্যই খাটছেন, ভোট চাইছেন।
স্থানীয় নির্বাচনে জগন্নাথপুরে প্রবাসী মুখ অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জগন্নাথপুরের ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানো ৩১ প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন প্রবাসী। ৬ জনই বিজয়ের মালা গলায় পরেছিলেন। জগন্নাথপুর পৌর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিনজনই ছিলেন প্রবাসী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রবাসীরা প্রার্থী না হওয়ায় লড়াইয়ে আছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরাই। প্রবাসীদের কারণে টাকার খেলায় পিছিয়ে থাকায় স্থানীয়রা অন্যান্য সময় একটু বেকায়দায়ই থাকতেন। এবার তাই টাকার চেয়ে যোগ্যতাই প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। তবে টাকার খেলা যে হবে না এমনটা কিন্তু অনেক ভোটার ও ভোটপ্রার্থী মানতে চান না। অনেকেই বলছেন, শেষ মুহূর্তে ঠিকই টাকা উড়বে নির্বাচনী ময়দানে।
৫ বছর মেয়াদ হলেও জগন্নাথপুরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৭ বছর পর। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিরোধ দেখা দিলে তা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালে একটি কেন্দ্রে ফের ভোট হয়। বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আকমল হোসেন। আদালত তাকে ৫ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সেই মেয়াদ পূর্ণ হলে নির্বাচন কমিশন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৬ই মার্চ উপজেলার ৮৭টি ভোটকেন্দ্রে হবে সে ভোটের লড়াই।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে দুজনই আওয়ামী বলয়ের। আর বিএনপি থেকে যিনি লড়ছেন তিনিও একসময় একই বলয়ের ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আকমল হোসেন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা। বিএনপি থেকে নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান। তিনি আগেরবারও লড়েছিলেন চেয়ারম্যান পদে। এর আগে ছিলেন সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তখন তার পরিচয় ছিল আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবেই।
জগন্নাথপুরের নির্বাচনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ইমেজ একটা ফ্যাক্টর হলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডনের নেতৃত্বে সংগঠিত সামাদ আজাদের অনুসারীরা প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামছেন না। একটি সূত্রে জানা গেছে, তাদের এক পছন্দের প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তারা নির্বাচনে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জগন্নাথপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ৬৯২ ও নারী ভোটার ৮৩ হাজার ৮০৭ জন। এই ভোটারদের মধ্য থেকে নিজেদের পক্ষে সমর্থন টানতে দিনরাত এক করে খাটছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী মাঠে সরজমিন ঘুরে গেছে, ঘরে বিদ্রোহী থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী একটু বেকায়দায়ই রয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঘরের এ আগুন বিএনপি প্রার্থীর জন্য হয়তো আশীর্বাদ হয়েই দেখা দিতে পারে। জগন্নাথপুর পৌরসভার পশ্চিম ভবানীপুরের বাসিন্দা শিশু মিয়া বললেন, প্রবাসী কোনো প্রার্থী না থাকায় এবার টাকা ছড়ানোরও প্রতিযোগিতা নেই। তিনি বলেন, প্রবাসী প্রার্থী না থাকায় নির্বাচন শেষে বিজয়ীর উড়ে যাওয়ারও ভয় নেই। যেই নির্বাচিত হোন না কেন তাকে সবসময়ই কাছে পাবে জগন্নাথপুরের মানুষ।
জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আশা করছি ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। সরজমিন বোঝা গেলো, ভোটে লড়াই হলেও সংঘর্ষের তেমন আশঙ্কা নেই।