জগন্নাথপুর পৌরসভায় উপ-নির্বাচন শনিবার: ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
জগন্নাথপুর :: আগামী ১০ অক্টোবর (শনিবার) সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষে মেয়র প্রার্থীরা জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কে হচ্ছেন আগামী দিনের পৌর মেয়র এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মিজানুর রশীদ ভূইয়া (নৌকা), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত প্রার্থী, সাবেক মেয়র আবদুল মনাফের ছেলে আবুল হোসেন সেলিম (জগ), বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী রাজু আহমদ (ধানের শীষ),বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবিবুল বারী আয়হান (মোবাইল)। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী মিজানুর রশীদ ভূইয়ার নৌকা প্রতীকের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছে পৌর শহর। তাঁর সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে মেয়র প্রার্থী রাজু আহমদের ধানের শীষের প্রচারণা। সেই সাথে চলছে মেয়র প্রার্থী আবিবুল বারী আয়হানের মোবাইল প্রতীকের প্রচারণা। আর মেয়র প্রার্থী আবুল হোসেন সেলিমের জগ প্রতীকের সমর্থনে প্রচারণা থাকলেও মিছিল-সমাবেশে পিছিয়ে রয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে তরুণ নেতা মিজানুর রশীদ ভূইয়া, আবুল হোসেন সেলিম ও রাজু আহমদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে ভোটারদের অনেকে ধারণা করছেন। তবে মুল প্রতিদ্বন্ধিতায় আসতেও পারেন আবিবুল বারী আয়হান।
কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করছেন, জগন্নাথপুর পৌর শহরের ইকড়ছই গ্রামের বাসিন্দা ও জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রথম সফল চেয়ারম্যান ও ৫ বারের ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার ছেলে হচ্ছেন মিজানুর রশীদ ভূইয়া। জগন্নাথপুর পৌর এলাকার উন্নয়নে হারুনুর রশীদ হিরণ মিয়ার অনেক অবদান রয়েছে। নির্বাচনে হারুনুর রশীদ হিরন মিয়ার প্রিয়জনরা তাঁর ছেলের জন্য কাজ করছেন। সেই সাথে রয়েছে পারিবারিক ইমেজ-প্রভাব, মাঠে রয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা, আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা। সব মিলিয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন মিজানুর রশীদ ভূইয়া।
জগন্নাথপুর শহরের হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক কয়েক বারের সফল মেয়র ছিলেন আলহাজ আবদুল মনাফ। পৌর এলাকার উন্নয়নে মেয়র আবদুল মনাফের রয়েছে অনেক অবদান। নির্বাচনে প্রয়াত মেয়র আবদুল মনাফের ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই সাবেক মেয়র আবদুল মনাফের ছেলে আবুল হোসেন সেলিমকে আবেগের বসে অনেকে ভোট দিতে পারেন। জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু আহমদ বিগত নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হয়েছেন। যে কারণে রাজু আহমদের জনপ্রিয়তা কিন্তু কম নয়। তবে পারিবারিক ও ব্যক্তি ইমেজে এগিয়ে রয়েছেন আবিবুল বারী আয়হান।
জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আবদুল মনাফের মৃত্যু হলে মেয়র পদ শুণ্য হয়। এই পদে গত ২৯ মার্চ জগন্নাথপুর পৌরসভার উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তখন এ ৪ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। পরে করোনার কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়। নির্বাচন কমিশন আবার দিন ধার্য করলে আগামী ১০ অক্টোবর সেই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও আগামী ডিসেম্বরে ৫ বছরের জন্য পূর্ণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে এ নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রায় ২ মাস সময় পাবেন। এ অল্প সময়ের মধ্যে একজন মেয়র পৌরসভার উন্নয়নে কতটুকু কাজ করতে পারবেন, এ নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে অল্প সময়ের জন্য মেয়র হলেও খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে এ নির্বাচনটি। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানা গেছে, জগন্নাথপুর পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৫৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৩৩৮ ও নারী ভোটার ১৪ হাজার ২২১ জন। ১০ অক্টোবর শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১১টি কেন্দ্রের ৭২টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্নের লক্ষে সব ধরণের প্রস্ততি নেয়া হয়েছে বলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন।