জগন্নাথপুর: ৯ বছরের বালককে ২৪ বছরের যুবক দেখিয়ে মামলা
জগন্নাথপুর থানার এসআইকে আদালতে কারণ দর্শানোর নির্দেশ
৯ বছর ৫ মাস বয়সী এক স্কুল ছাত্রকে ২৪ বছরের যুবক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে পুলিশ এসল্ট মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। ওই স্কুল ছাত্রের নাম দুর্জয় আচার্য। দুর্জয় আচার্য সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার দক্ষিণ বাগবাড়ির বাসিন্দা ইসকন ছাতক উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জীবন আচার্য্যরে ছেলে ও ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। জগন্নাথপুর থানার একটি পুলিশ এসল্ট মামলায় তাকে ১৬ নম্বর আসামী হিসাবে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গত ২০ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার এসআই অভিজিৎ সিংহ। অবশ্য মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পেয়েছে দুর্জয়। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান মজুমদার তার জামিন দিয়েছেন। একই সাথে অভিযোগপত্র দাখিলকারী জগন্নাথপুর থানার এসআই অভিজিৎ সিংহকে মামলার আগামী তারিখে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রকে আসামী করার ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৬ জুলাই শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথপুর পৌর শহরের হিন্দু ধর্মের স্থানীয় দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এঘটনায় জগন্নাথপুর থানার তৎকালীন এস.আই অর্নিবান বিশ্বাস বাদী হয়ে থানায় পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কিছু মানুষ আসামী করা হয়। পরবর্তীতে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান জগন্নাথপুর থানার এস.আই অভিজিৎ সিংহ।
গত ২০ মার্চ তিনি ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র দুর্জয় আচার্য্যসহ আরো ১১জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তবে ওই মামলার এজাহারে ৭ জন আসামীর মধ্যে স্কুল ছাত্র দুর্জয় আচার্য্য আসামী ছিল না। চার্জশীটে দুর্জয় আচার্যের ঠিকানা জগন্নাথপুর পৌর শহরের বাসুদেব বাড়ি উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১৭ মে আদালত থেকে শিশু দুর্জয় আচার্যসহ ৫ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর জগন্নাথপুরের ওই রথযাত্রা অনুষ্ঠানে পরিবারের লোকজনের সাথে উপস্থিত ছিলেন ইসকন ভক্ত শিশু দুর্জয় আচার্য। ওই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলায় সে উল্লেখিত আসামী না হলেও পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার এসআই অভিজিৎ সিংহ শিশু দুর্জয় আচার্যসহ ১৭ জনের নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
শিশু দুর্জয়ের বাবা জীবন আচার্য বলেন,‘ আমার মূল বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দামপাড়া গ্রামে। আমি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাতকে থাকি এবং সেখানে আমার ব্যবসা রয়েছে। আমরা গত বছর রথযাত্রা অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণে জগন্নাথপুরে গিয়েছিলাম। সেদিন রথযাত্রা অনুষ্ঠানে ঝামেলা হয়েছিল। ওই ঘটনার মামলায় পুলিশ আমার ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে। বিষয়টি আমি জানতাম না, গত ১৫ দিনে পূর্বে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় আমি ও আমার ছেলে হয়রানীর শিকার হচ্ছি। মঙ্গলবার আদালতে আমার ছেলের জামিন হয়েছে। আগামী জুলাই মাসের এক তারিখ আদালতের তারিখ পড়েছে। আবারও ছেলেকে নিয়ে আমার আদালতে আসতে হবে।’
মামলার আসামী পক্ষের (দুর্জয় আচার্য) আইনজীবী প্রদীপ কুমার নাগ বলেন,‘ চতুর্থ শ্রেণির স্কুল ছাত্র দুর্জয় আচার্যের নামে পুলিশ এসল্ট মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এই শিশুকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হয়েছে। মঙ্গলবার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন এবং অভিযোগপত্র দাখিলকারী এসআই অভিজিৎ সিংহের কাছে ব্যাখা চেয়েছেন।’ অভিযুক্ত এসআই অভিজিৎ সিংহের সাথে কথা বলতে চাইলে ব্যস্থ আছেন বলে পরে কথা বলার জন্য বলেন। পরে যোগাযোগ করলে আর ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
জগন্নাথপুর থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন,‘মামলার ঘটনা ও অভিযোপত্র দাখিল হয়েছে থানায় আমি যোগদানের পূর্বে। যতুটুক জেনেছি দুর্জয় আচার্য নামে এক লোক ওই এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করত। আদালত থেকে জামিন নিয়েছে যে, সে কি ওই দুর্জয় কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। যেহেতু চার্জশীট নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টির খোঁজ খবর নেয়া হবে।’