সু’বার্তা ডেক্স -ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। এরপর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের নেয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাতেই ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার এই পরিণতির পর তিনি যাদের দিকে আঙুল তুলেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আজ (শনিবার) এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠা সহপাঠীকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার ভোর পাঁচটায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের তথ্যটি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুতে উপাচার্য সাদেকা হালিম, কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেয়া আইন বিভাগের সহপাঠীকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এতে আরও বলা হয়, ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরকে দায়ী করে ফেইসবুকে পোস্ট লিখে আত্মহত্যা করেছেন ফাইরুজ অবন্তিকা। তার আগে লিখে যান, এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার।

২০১৭-১৮ বর্ষের আইন বিভাগের ছাত্রীর এই পরিণতির পর তিনি যাদের দিকে আঙুল তুলেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে এ ঘটনায় উপাচার্য সাদেকা হালিম শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আইন অনুষদের ডিন মাসুম বিল্লাহকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছে।

তবে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিমাদ্রি শেখরকে কমিটির সদস্য সচিব করা হলেও তার বিরুদ্ধে আগে একটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করেছেন উপাচার্য সাদেকা হালিম। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন: সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন এবং সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ঝ্মুুর আহমদ।

এদিকে অবন্তিকার মৃত্যুর পর সহপাঠী আম্মান সিদ্দিক তার ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেন। পরে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ঘটনাটি। তখন সে মিথ্যা ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়েছে। তখন আমরা কোতয়ালি থানায় জিডি করলে সে তার ভুল স্বীকার করে। সে যেন এরকম কাজ আর না করে সেজন্য আমরা প্রক্টরিয়াল বডিকে অবহিত করে রাখি। এরপর ওর সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ হয়নি। আর সবকিছুর পর আসলে ও নিজের মেন্টাল প্রেশার নিজে তৈরি করছে। ওর নিজের মানসিক অসুস্থতার জন্য নিজেকে হারিয়েছে।

অবন্তিকার আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামও। তিনি বলেন, এই ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মেয়েটার সঙ্গে দেড় বছর আগে ছেলেটির ঘটনা নিয়ে যোগাযোগ হয়েছে। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার হোক।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত দুঃখিত। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সে (অবন্তিকা) যদি আসত তাহলে আমি ভিসি ম্যামের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম। আর উপাচার্যের নির্দেশে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাদের (অবন্তিকা) পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা একটি প্রক্টরিয়াল টিম কুমিল্লায় পাঠাচ্ছি। উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, সে (অবন্তিকা) আমার কাছে আসতে পারত। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত দুজনকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। দোষীদের খুব দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn