হাওরপাড়ের বাসিন্দা সাজুর আলী (৫১)। তিনবছর আগে মারা গেছেন। অথচ মৃত এই ব্যক্তি একটি জলমহালে হামলা ও লুটের মামলার ৩২ নম্বর আসামি। এই মামলায় তিন প্রবাসীকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া চার ব্যক্তিকে একই মামলায় দুইবার করে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানায় সম্প্রতি দায়েরকৃত একটি জলমহালে হামলা ও লুটের মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর পৌরসভার ভবানীপুরের বাসিন্দা ভবানীপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক লাল বিশ্বাস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩১.০০.০০০০.০৫০.৬৮.০১০. ২১. ১৪৭ নং স্মারক মূলে চলতি বছরের ১৬ মার্চ জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া-নোয়াগাঁও ও আলমপুর মৌজাস্থ হামহামি জলমহাল ছয় বছরের জন্য ইজারা নেন। ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে দখলভোগ করে আসছেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নলুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের মজনু মিয়া, ময়না মিয়া ও সিরাজ মিয়ার নেতৃত্বে ইজারাকৃত জলমহালে লুটপাট হয়েছে অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, জলমহালে নিয়োজিত পাহারাদার আল আমিন, শানুর মিয়া, মিঠু মিয়া, সৈয়বুর রহমান ওরফে বাটুল ও তোরণ মিয়া কে মারধর করে ৫ লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। এছাড়া মাছ ধরার একটি নৌকা ভাংচুর এবং পাহাড়াদারদেরকে আটক করে রাখা হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, ৯৯৯ নম্বর ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে আটককৃতদের উদ্ধার করে। এঘটনায় মানিক লাল বিশ্বাস ২০ সেপ্টেম্বর ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে জগন্নাথপুর মামলা দায়ের করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই মামলার ১৯ নম্বর আসামি নলুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের সৌদিপ্রবাসী রাসেল মিয়া (২৮), ৪১ নম্বর আসামি একই গ্রামের দুবাইপ্রবাসী জুনায়েদ আহমদ (৪০) এবং ৪৯ নম্বর আসামি দুবাইপ্রবাসী সজ্জাদ মিয়া (৪৭) কয়েক বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। অপরদিকে মামলার ৩২ নম্বর আসামি ওই গ্রামের মৃত সাজুর আলী (৫১) ২০১৭ সালে মারা গেছেন। এছাড়া মামলার ৮ নম্বর আসামি মৃত সমর আলীর ছেলে মো. সুজন মিয়া (৪০) কে একই মামলায় ৫৫ নম্বর আসামি করা হয়। একইভাবে আরো তিনজনকে দুইবার করে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এদিকে মামলায় মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের আসামি করায় হতবাক হয়েছেন তাদের স্বজনরা। তাদের দাবি নানা অসংগতিপূর্ণ এই মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪১ নম্বর আসামী দুবাই প্রবাসি জুনায়েদ মিয়ার বড় ভাই কবির জানান, আমার ভাই ২০১১ সালে প্রবাসে পাড়ি দেযন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাড়ি ফিরে দুই তিন মাস দেশে অবস্থান করে ফের বিদেশ চলে যায়। অথচ আমার ভাইকে আসামি করা হয়েছে শুনে আমরা হতবাক। এটা কি করে সম্ভব। বিদেশ থেকে হামলা করলো কিভাবে? সৌদিপ্রবাসী রাসেল মিয়ার মা শাহানা আক্তার বলেন, অবিশ্বাস্য লাগছে। কারণ ২০১৯ সাল থেকে আমার ছেলে প্রবাসে আছে। তারপরও মামলায় ১৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে তাকে।

মৃত সাজুর আলীর বড় মেয়ে আমিনা বেগম জানান, চার বছর আগে আমার বাবা মারা গেছেন। একজন মৃত ব্যক্তি মামলার আসামি হন। নলুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের জেলে কদ্দুছ মিয়া জানান, আমরা জেলে সম্প্রদায়। মাছ ধরেই জীবন জীবিকা চলে আমাদের। ইজারাকৃত জলমহালে মাছ শিকার করি নি। বাড়ির পাশে মাছ শিকার করে আসছি আমরা যুগ যুগ ধরে। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে অসহায় লোকজনের হয়রানি করা হচ্ছে।

মামলার বাদি মানিক লাল বিশ্বাস বললেন, লিজকৃত জলমহালে হামলা ও লুট করায় আমি মামলা করেছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য রনধীর কান্তি দাস নান্টু বলেন, মামলায় মৃত একজন ব্যক্তি ও তিনজন প্রবাসরত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও চারজন ব্যক্তিকে দুইবার করে আসামি করা হয়। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তি আসামি করা হয়েছে স্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার উপপরির্দশক (এসআই) জিয়া উদ্দিন জানান, বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn