জলাবদ্ধতা নিরসনে নেই সরকারের কর্মসূচি, ডুবন্ত ঢাকাকে বাঁচাবে কে?
স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে শিক্ষার্থীরা। ছবিটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে তোলা
আবু আজাদ –
এমনিতেই যানজটে রাজধানী শহরে অচলাবস্থা বিরাজ করে তারওপর গত ২৬ জুলাই বুধবার এর সঙ্গে যোগ হয় জটিল জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা আর যানজট বিপন্ন করেছিল রাজধানীর স্বাভাবিক জনজীবন। কিন্তু এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সরকারের কার্যত কোনো কর্মসূচিই নেই সরকারের হাতে। মহানগরী ঢাকার বাসাবো, মুগদাপাড়ার মতো অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা তো বটেই, আজিমপুর, নিউমার্কেট থেকে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, মতিঝিল, ডেমরা এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় পর্যন্ত অর্থাৎ এমন কোনো এলাকা নেই যা জলমগ্ন হয়নি। সচিবালয়ের পরিস্থিতি এতটাই নাজুক ছিল যে পানি সরাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাম্প ব্যবহার করতে হয়েছে। এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতে ডুবন্ত ঢাকাকে বাঁচাবে কে সেই প্রশ্নও উঠলেও দুই সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ের কেউ কোনো সুখবর দিতে পারেননি। তবে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি প্রমিজ করছি, সামনের বছর থেকে আর এমন (জলাবদ্ধতা) দেখবেন না। কিছুদিনের মধ্যেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
যাত্রাবাড়ির দক্ষিণ কাজলার নয়ানগর সড়কের বাসিন্দাদের ঘরে উঠেছে বৃষ্টির পানি
২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। গত আট বছরে ঢাকার পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর কিছু করেনি। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার কার্যত কোনো কর্মসূচিও গ্রহণ করেনি সরকার নেই। এখন পরিস্থিতি যখন সঙিন হয়ে উঠেছে, তখন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছেন এক বছরের মধ্যে সমস্যার সমাধান করবেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে একটি সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এবং পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীও সেই সভায় অংশ নেন। সভায় ঢাকার পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য একটি ‘কার্যকর, সময়নির্ভর ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা’ মহাপরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ শুরুরও সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ কাজের সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন এবং আরও কোনো কোনো সংস্থাকেও যুক্ত করা দরকার। সেসব প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করতে অনেক সময় লাগবে।
শাহজাহানপুর সড়কে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে গেছে একটি গাড়ী
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করা গেলে আগামী বছর নাগাদ ঢাকার পানি নিষ্কাশনের সমস্যা কমার প্রবণতা শুরু হতে পারে। কিন্তু এই কাজ শুরু করার জন্য আইনের কোনো কোনো বিধিবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সেটা সময়সাপেক্ষ। কাজেই কবে আসল কাজ শুরু করা যাবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আগামী বছর থেকে জলাবদ্ধতা হবে না বলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইকবাল হাবিব বলেন, কাজের কাজ না করে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকারে যে কোনো ফল হয় না, তার প্রমাণ তো হাতেনাতেই পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের ডাকা ওই সভায় একটি মত এসেছিল যে নগরীর পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ওয়াসার। সেই কাজ যদি সিটি করপোরেশনকে করতে হয়, তাহলে ওয়াসাকে অথবা নিদেন পক্ষে ড্রেনেজ বিভাগকে সিটি কর্পোরেশনের অধীনে দিতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কথা হয়েছিল ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগকে সিটি করপোরেশনের আওতায় দেওয়া হবে। তবে সিটি করপোরেশন ড্রেনেজ বিভাগ নেওয়া বিষয়ে বলছে, একটি বিকলাঙ্গ শিশুকে (ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগকে অসুস্থ ও অকার্যকর বিবেচনা করে এই উদাহরণ দেওয়া) তাদের হাতে না দিয়ে, একটু সুস্থ করে বা সারিয়ে তুলে যেন দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নগরীজুড়ে কাটা-খোঁড়া, এবড়োখেবড়ো, ভাঙা রাস্তা, জলজট আর যানজটে নগরীর সর্বত্র নেমে এসেছে ভয়াবহ স্থবিরতা।
ব্যস্ত মতিঝিল জলাবদ্ধতা আর যানজটে স্থবির
জলাবদ্ধতা সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, নগরবাসী সবার মতো আমরাও কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু মেয়রের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে রাতারাতি সমস্যাগুলোর সমাধান করা যাবে। আমরা চেষ্টা করছি। আল্লাহ চাহে তো আগামী বছর জলাবদ্ধতা কমবে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন গতকালও নগরীর পানি নিষ্কাশনে ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, এই জলাবদ্ধতার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকেই নিতে হবে। সিটি করপোরেশনকে যদি এই দায়িত্ব নিতে হয়, তাহলে ওয়াসাকে সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত করতে হবে। অবশ্য ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, ঢাকার চারপাশের সব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার অনেক ওপরে। তাই নগরীর পানি নিষ্কাশনের সব স্লুইসগেট বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে দেরি হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো