ওয়েছ খছরু -তাহসিনার রুশদীর লুনা। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। আরিফুল হক চৌধুরী। গেল তিন বছর ধরে সিলেট বিএনপি’র কর্তৃত্ব তাদের হাতেই। একক কর্তৃত্ব নিয়ে মুক্তাদির ও আরিফ প্রায়ই আসেন আলোচনায়। মাঠের লড়াইয়েও তারা মুখোমুখি। এবারের কাউন্সিলও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। হঠাৎ করেই সভাপতি প্রার্থী হয়ে মাঠে আরিফ। নিজেকেই নিয়েই ধরেছিলেন বাজি।
কেন্দ্রের নির্দেশে আবার সরেও গেছেন। তবে- কাউন্সিল থেকে একেবারেই নীরব হয়ে যাননি। আড়ালের খেলায় তিনিও সক্রিয়। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নিয়ন্ত্রণেই এখন চলছে সিলেট বিএনপি’র কর্মকাণ্ড। জেলার সম্মেলন ও কাউন্সিল তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট। ভূমিকায় এখন অনেকটা নিরপেক্ষই তিনি। হাত ফসকে চলে গেছেন অনেকেই। নতুনদের নিয়ে তিনি হাল ধরার চেষ্টা করছেন। তবে এবারের কাউন্সিলে আড়ালে তিনিও সরব। তার অনুসারীরাও প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে মাঠে প্রচারণা চালিয়েছেন। কোনো পক্ষ নেননি ইলিয়াসপত্নী বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার নিয়ন্ত্রিত বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর বিএনপি’র নেতারাও এবার কৌশলী। আপাতত দৃষ্টিতে মনে করা হচ্ছে যেদিকেই যাবে সবার সিদ্ধান্ত একদিকেই যাবে। কিন্তু সেটি হয়তো শেষবেলায় আর হবে না। ভাগ-বাটোয়ারা হতে পারে এ দুই উপজেলার ভোট। সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট জেলা বিএনপি’র আজকের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনেক প্রত্যাশার। অনেক নাটকীয়তা, জল্পনার পর এই সম্মেলন হচ্ছে। আজই সিলেট জেলা বিএনপি খুঁজে পাবে নতুন নেতৃত্ব। এজন্য আয়োজনের কমতি নয়। সিলেট বিএনপি’র এবারের সম্মেলন ও কাউন্সিল বিএনপি’র জন্য ‘ট্রায়াল ভার্সন’। সিলেট বিএনপি’র এই উদাহরণ ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হতে পারে কেন্দ্র পর্যন্ত। ফলে- লন্ডনেরও চোখ থাকবে সিলেটে। সরাসরি মনিটরিং করা হবে সম্মেলন ও কাউন্সিল। জেলার আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি’র সম্মেলনে আসছেন দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বহর সিলেটে আসবেন। মহাসচিব শুধু প্রথম অধিবেশনই নয়, কাউন্সিল শেষের পর ফলাফল ঘোষণা করে সিলেট ছাড়ার কথা রয়েছে। এভাবেই আয়োজনকে সাজানো হয়েছে। সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে আজ সকাল ১০ টায় সম্মেলন শুরু হবে। দুপুর ১২ টার মধ্যে প্রথম অধিবেশন শেষ করে কাউন্সিলে ভোটগ্রহণ শুরু করা হবে। রেজিস্ট্রারি মাঠেই বুথ করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী নেতারা স্বেচ্ছায় কাউন্সিলে সহযোগিতা করবেন। এবার সিলেট জেলা বিএনপি’র কাউন্সিলে সভাপতি পদে দুই প্রার্থী সাবেক সভাপতি আবুল কাহ্হের শামীম ও যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীকে নিয়ে আলোচনা সবচেয়ে বেশি। নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না- কে হতে যাচ্ছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র পরবর্তী সভাপতি। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন- প্রচারণায় শেষ দিকে এসে আরিফ বলয়ের নেতাদের সহযোগিতা পেয়েছেন সাবেক সভাপতি আবুল কাহ্হের শামীম। মেয়র বলয়ের নেতারা শামীমের পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন। এতে করে শামীম শেষদিকে এসে কিছুটা এগিয়ে গেছেন। আবার বিপরীত দিক থেকে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির অংশের নেতাদের দেখা গেছে আরেক সভাপতি প্রার্থী আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর সঙ্গে প্রচারণায়। ফলে আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর ভোট ব্যাংক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সিলেট জেলার দক্ষিণের উপজেলাগুলোতে কাইয়ূম চৌধুরী আধিপত্য ধরে রাখতে পারলে তিনি ফলাফলে এগিয়ে থাকবেন বলে নেতারা মনে করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে শেষ মূহূর্তে এসে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। জেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে মাঠে থাকায় এগিয়ে গেছেন। এছাড়া- বিএনপি’র বড় অংশটির ছায়া এবার তার উপর রয়েছে। তিনি সবকিছু টিকটাক করেই প্রার্থী হয়ে মাঠে নামেন। যুক্তরাজ্য থেকে এসে শেষ দিকে এসে তিনি প্রচারণা শুরু করেছেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলী আহমদ। তবে- সাবেক সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তার ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে মনে করেন দলের নেতারা। এজন্য সাধারণ সম্পাদক পদেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সম্ভাবনা রয়েছে। এ পদে আরও দুই প্রার্থী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আফম কামাল সাড়া ফেলতে পারেনি। সাধারণ সম্পাদক পদেও আরিফ ও মুক্তাদির বলয়ের নেতারা দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রদল নেতা লোকমান আহমদ ও দক্ষিণ সুরমা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদও রয়েছেন লড়াইয়ে। আরেক প্রার্থী এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব নীরব ভোটে ফলাফলে আশা করছেন। কাউন্সিল হবে মাইলফলক- ডা. জাহিদ: বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনামলে ১৮১৮ জন কাউন্সিলরের সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সিলেট জেলা বিএনপি’র কাউন্সিল হবে একটি মাইলফলক। যা সারা দেশের গণতান্ত্রিক দলসমূহের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জেলা বিএনপি’র কাউন্সিলকে সফল ও সার্থক করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা আমরা প্রত্যাশা করি। তৃণমূল বিএনপিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সকল স্তরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চাকে সুসংহত করবে।’ তিনি সোমবার জেলা বিএনপি’র মঙ্গলবারের কাউন্সিলকে সামনে রেখে গঠিত নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ভোটারদের মাঝে কাউন্সিলর কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুল গাফফারের সভাপতিত্বে, নির্বাচন কমিশনার ও সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, সিলেট মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আহমদ, আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, অধ্যাপিকা সামিয়া বেগম চৌধুরী, শাহজামাল নুরুল হুদা, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মামুনুর রশীদ মামুন, ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, আব্দুল আহাদ খান জামাল, আবুল কাশেম, শামীম আহমদ, বিএনপি নেতা সৈয়দ মঈনুদ্দিন সোহেল, নুরুল আলম সিদ্দিকী খালেদ, ব্যারিস্টার রিয়াশাদ আজিম আদনান হক, আ ফ ম কামাল প্রমুখ।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২৫ বার