নাহিদা রহমান মালা।।(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)-

আমি তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, আমার সাবসিডিয়ারী সাবজেেকৃট ফিলসোফী আর সোসিওলোজী। সাবসিডিয়ারী ক্লাস করতে যেমন মজা লাগতো, পরীক্ষা দিতেও তেমনি ভাললাগতো। প্রিপারেশন তেমন ভাল না হলেও চলতো, আশপাশের হেল্প নিয়ে পাশ করা যেতো। সেকেন্ড ইয়ারে চার পেপার পরীক্ষা দিতে হোতো। লাস্ট  ছিল সোসিওলোজী।

ফিলসোফীর দিন আমি পিছনের বন্ধুকে আমার লুজ সিট দিয়ে হেল্প করেছিলাম। তাই ধরেই নিয়েছি এ পরীক্ষায় কড়াকড়ি নাই। গ্যালারীতে  সোসিওলোজী  পরীক্ষা দিতে বসেছি সাথে মাধুরী( ও এখন না ফেরার দেশে)। মাঝামাঝি সময়ে আমরা একটা প্রশ্ন নিয়ে হাসছিলাম। পতিতাবৃত্তির উপর টীকা লিখ….। একজন স্যার আমাদের সামনে এসে হাজির, টান দিয়ে খাতা গুলো নিয়ে লাল কালি দিয়ে কি যেন লিখলেন,, অনেক অনুরোধ করলাম, কাজ হলো না। বের হয়ে আমার, মাধুরীর ও সোসিওলেজী ডিপার্টমেন্টকে জানালাম।

পরদিনই জানতে পারলাম এর শাস্তি নাকি ভয়ানক, যদি মিস বিহেইব কমেন্ট করে তাহলে এক্সপেল্ড। আমাদেরটাতে ছিল কপি টু এনাদার ওয়ান… এটাও কম না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ভবিষ্যত চিন্তা করে লুকিয়ে কাঁদতাম। এড্ বিল্ডিংয়ের ইউসুফ ভাই, নাসির ভাই আরও  অনেক ভাইরা পরামর্শ দিতেন। কত শত বার এড্ বিল্ডিং এ গিয়েছি,  আহালতা পাতাও আমাদের চিনে ফেলেছিল। আস্তে আস্তে জানলাম ডিসিপ্লিন কমিটির মিটিং হবে তখন সিদ্ধান্ত হবে আমাদের সাজা নিয়ে।

এও জানলাম সেই স্যার প্রতিবছর কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীর জীবন নষ্ট করে, অনেক কঠিন সাজা দেন সামান্য অপরাধে। আমাদের কেউ কেউ বলছিল বিয়ে করে ফেলতে কারন আমরাতো আল বিদায় হবো। মাধুরী অসুস্থ্যতার কারেণ প্রায় কুমিল্লায় থাকে, আমি কমিটির সব স্যারদের সাথে যোগাযোগ করি,  ভিসি পর্যন্ত। বোনের হলুদের দিন ওর কানে আসে লাল শাড়ী পরা মেয়েটা এক্সপেল্ড হবে।

স্যাররা বলেন থার্ডইয়ারের ক্লাস করো, আমি ভয়ে ক্লাস করিনা, সেকেন্ড ইয়ারের রেজাল্ট পাই, আমি প্রথম হই, খুশি হই না। মাথায় কত প্রশ্ন। করুন ভাবে মাধুরীকে একদিন বলেছিলাম,  যদি এমন হয় কমিটি আমাদের মাফ করে দিল ঐ স্যারকে শাস্তি দিল কেমন হয়???

একদিন বিকালে মাহ্ফুজ ভাই( উনিও না ফেরার দেশে) হলে এসে আমাকে জানালো চিঠি পেয়েছি কিনা কাল ডি কমিটির মিটিং। উনি সেদিন না জানালে কি যে হতো, চিঠি কেন পাইনি সে তদন্তে আর যাইনি। সময় মত একা একা ভিসি স্যারের কেবিনে ঢুকলাম মনে হচ্ছিল আমি ফাঁসির আসামী। প্রায় দশ জোড়া চোখ আমার দিকে, ওনাদের হাতে আমাদের খাতা। ঘটনা জানতে চাইলেন, আমাকে যেতে বল্লেন। পরদিন জানলাম আমাদের সোসিওলোজী থার্ড পেপার আবার দিতে  হবে আর সেই স্যার আগামী বছর গার্ড দিতে পারবে না, ক্লাস করাবে না, খাতা দেখতে পারবে না। আমি থ। আমার কথাটা সত্যি হয়ে গেলো। পরের দিন ৭ ই নভেম্বরের ছুটি, আমি বিশাল শান্তি নিয়ে আম্মাকে শান্তি দিতে ফেনী গেলাম। ফেনী থেকে এসে যথারীতি নাসির ভাইর কাছে গেলাম সব জানাতে, উনি বল্লেন আপা আপনাকে রিপিট দিতে হবে না, ২ পেপার দিয়ে আপনার পাশ মার্ক হয়ে গেছে। আহ্ কি শান্তি।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn