২০২০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিতব্য গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে খেলোয়াড়দের পোশাক রপ্তানি করে ৪শ’ কোটি টাকা আয়ের আশা করছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। নিট খাতের উদ্যোক্তারা জানান, এই আয়োজনে জাপানে প্রচুর ভিজিটর আসবে এবং একই সঙ্গে তাদের বিশাল পরিমাণ নিটওয়্যারের বেসিক পণ্যের (টি-শার্ট, পলো শার্ট, সুয়েটার ইত্যাদি) প্রয়োজন হবে। এজন্য এখন থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাদের মতে, সম্প্রতি বিকেএমইএ‘র একটি প্রতিনিধি দল জাপান সফর করেছেন এবং একটি মেলায় অংশ নিয়েছেন। সফরে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি মেলায় ২৫ মিলিয়ন ডলারের স্পট রপ্তানির অর্ডার পাওয়া গেছে। এ কারণে অলিম্পিক খেলাকে কেন্দ্র করে জাপানের বাজারে প্রায় ২৫ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বিকেএমইএ সূত্র জানায়, জাপান প্রতি বছর সারাবিশ্ব থেকে ১২.৯ বিলিয়ন ডলারের নিটপণ্য আমদানি করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই ৪০০ মিলিয়ন ডলারের নিটওয়্যার পণ্য আমদানি করে দেশটি, যা মোট আমদানির ৩ শতাংশ। তাই এই বিশাল প্রতিযোগিতা উপলক্ষে ৪০০ থেকে বেড়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানির আদেশ দাঁড়াবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিকেএমইএ মনে করে, সামার অলিম্পিক গেমসের অর্ডার আমরা শিগগিরই পেতে যাচ্ছি এবং অর্ডারের বিপরীতে রপ্তানি চলতি বছর থেকেই শুরু হবে। আর জাপানের সঙ্গে যে বাণিজ্যিক ঘাটতি রয়েছে সেটাও হ্রাস করতে সহায়তা করবে। বিকেএমইএ সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, জাপানে বাংলাদেশের নিটওয়্যার পণ্যের রপ্তানি বেড়েই চলেছে। এছাড়া সেখানকার ক্রেতারাও চাইছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে। তিনি বলেন, সামনে জাপানে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেম অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সে দেশে টি-শার্ট ও পলো শার্টের চাহিদা বাড়বে। সে হিসাবে বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়বে প্রায় ২০ শতাংশ; যা আমাদের দেশের জন্য বিশাল পাওয়া। সেই পরিমাণটা হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে আমরা রপ্তানি করছি ৪০০ মিলিয়ন ডলার।

বিকেএমইএ পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রতি বছর জাপানে নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েই চলেছে। তবে দেশটিতে গত ছয় বছরের মধ্যে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে জাপানে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১৬ কোটি ৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলার। যার প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ৭৪ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৩৯ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যার প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশ। অর্থাৎ অর্থের পরিমাণে রপ্তানি বাড়লেও প্রবৃদ্ধি কমেছে।এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে জাপানে নিট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৯ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৫ কোটি ৩ লাখ ৩৫ হাজার ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাপানে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৭ কোটি ৯ লাখ ৭৮ হাজার ডলার। যার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নিট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৮ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ডলার। যার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ শতাংশ। বছর বছর প্রবৃদ্ধি কমলেও এবার গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেম সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছে বিকেএমইএ। এবারের এই খেলায় ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানির আদেশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সংগঠনটি।

এদিকে গত ৪ই এপ্রিল জাপানের টোকিও’র ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড টোকিও মেলায় বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এমপি’র নেতৃত্বে ৮১ জনের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। মেলায় ৩০টি স্টল ছিল বিকেএমইএ‘র। বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অতি নির্ভরতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত সম্ভাবনাময় জাপানের নিটওয়্যার বাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চীনের ক্যাপিট্যাল-ইনটেনসিভ শিল্পে অধিক মনোযোগ এবং জাপানের চীন পলিসি গ্রহণের কারণে জাপানের বিশাল নিটওয়্যার বাজারে বাংলাদেশের নিটপণ্য রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও জাপান ভিয়েতনামসহ ৯টি দেশের সঙ্গে সিপিটিপিপি স্বাক্ষরের কারণে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক জাপানের বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। তবুও বাংলাদেশের নিট শিল্প খাতের ধারাবাহিক ক্রমবিকাশ, বিশাল ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প এবং পোশাকের গুণগতমানের কারণে ভিয়েতনামকে পিছনে ফেলে জাপানের বাজারে বাংলাদেশ এক নম্বর নিটওয়্যার রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান তৈরি করে নিতে পারে বলে আশা করেন তিনি।

বিকেএমইএ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলভ চৌধুরী বলেন, গত ৬ই এপ্রিল জাপানের মিনিস্ট্রি অব ইকোনমি, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (মেটি) সঙ্গে বিকেএমইএ’র আলোচনা সভায় মেটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নিটওয়্যার পণ্যের জন্য বিদ্যমান ওয়ান স্টেজ জিএসপি সুবিধা বহাল রাখার নিশ্চয়তা দেন, যা সিপিটিপিপি স্বাক্ষরের কারণে তৈরি হওয়া সংশয়কে (জাপানের বাজারে বাংলাদেশের নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি কমে যাবে কি না) সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে জাপানের বাজারে প্রায় ২৫ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আর মেলায় অংশগ্রহণ করে ২৫ মিলিয়ন ডলার স্পট রপ্তানির অর্ডার পাওয়া গেছে, যা বেশ সম্ভাবনার।

এছাড়া মেলা চলাকালে ‘নিটওয়্যার পণ্যের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। যেখানে জাপানের ১১৩ জন টেক্সটাইল বিষয়ক প্রতিনিধি অংশ নেন। সেখানে তারা সবাই জাপানের বাজারে বাংলাদেশের নিটওয়্যার পণ্যের বিপুল সম্ভাবনার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই), টোকিও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (টিসিসিআই), জাপান টেক্সটাইলস ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (জেটিআইএ) এবং জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)-এর সঙ্গে বিকেএমইএ’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নারায়ণগঞ্জে প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনে জাপানি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং জাপানের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল আগামী নভেম্বরে বাংলাদেশ সফর করবে এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিকেএমইএ’র জয়েন্ট ভেনচার ইভেন্টে বিনিয়োগের প্রস্তাবে তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এমনকি চলমান ফ্যাক্টরিতেও তারা বিনিয়োগে আগ্রহী।সূত্র: মানবজমিন

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn