বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে গণ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই ভিশনে অনেক অসম্পূর্ণতা থাকলেও বিএনপির জন্য একটা বড় সুখবর হলো- খালেদা জিয়া বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ আছেন। এক গ্লাস পানি না খেয়েও একটানা দুই ঘন্টা বক্তব্য রাখতে পেরেছেন। এটা দলের জন্য খুবই ভালো একটা খবর। রাজনৈতিক পরিবর্তন আনয়নের মাধ্যমে বিএনপি ভবিষ্যতে দেশের জন্য কি করতে চায়। জনগণ তাদের কাছ থেকে কি উপকার পাবে। তারা জনগণের জন্যে কি করতে পারবে তা স্বচ্ছভাবে দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার না করার বিষয়েও ঘোষণা থাকতে হবে। তবে আশা করা যায়- রাজনীতিতে একটা বড় পরিবর্তন আসতে পারে।এমন বক্তব্য নিয়েই দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার ছিলেন গণ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, সেমিনার ও মানববন্ধনে গিয়েও তিনি এ কথা বারবার তুলে ধরেছেন। এমন কী বিভিন্ন সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেও তিনি এসব কথা বলেছেন।

অবশেষে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা রাখলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বুধবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে ‘ভিশন ২০৩০’ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদী রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজেও উপস্থিত থেকে সরাসরি খালেদা জিয়ার পুরো বক্তব্য শুনেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত ‘ভিশন ২০৩০’ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও বিএনপি জাতির সামনে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে একটি ডকুমেন্টারি রূপরেখা উপস্থাপন করতে পেরেছে। এটা একটা ভাল কাজ হয়েছে। কিন্তু এটি অসম্পূর্ণ রূপরেখা বলে মনে করি। কেননা, এর মধ্যে অনেক কিছুই বাদ থেকে গেছে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেগম জিয়া সুশাসনের কথা বলেছেন, কিন্তু কিভাবে দেশে সুশাসন আসবে সেটার বিষয়ে কিছুই বলেননি। তিনি বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া অর্থাৎ স্টেট কিংবা প্রদেশ গঠন ছাড়া কোনোভাবেই দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের চেয়ে ছোট রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ৪৯টি প্রদেশে এবং ভিয়েতনামে ৭০টিরও বেশি প্রদেশ রয়েছে। ফলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া বর্তমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় কোনোভাবেই সুশাসন আসতে পারে না। আর সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে যেকোনো শাসনব্যবস্থা ব্যর্থ। এসব বিষয়ে খালেদার ‘ভিশন ২০৩০’ এ কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই।

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্বজননীন মানবাধিকার সনদ বাস্তবায়ন এবং নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। কিন্তু র‍্যাব বিলুপ্ত করার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এর আগে অনেকবার তিনি র‍্যাব বিলুপ্তের কথা বললেও আজকের বক্তব্যে সেটা নেই। ফলে কীভাবে মানবাধিকার নিশ্চিত হবে আমার বোধগম্য নয়। তিনি কুইকরেন্টাল ব্যবস্থা বাতিলের কথা বললেও এর মাধ্যমে যারা দুর্নীতি করে হাজার হাজার টাকা বিদেশে পাচার করেছে সেসব টাকা পুনরুদ্ধার করা এবং জড়িতদের বিচার করা হবে কীনা সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। কওমী মাদ্রাসাগুলো এমএ ডিগ্রীর সমমান দেয়ার বিষয়ে বিএনপি আগেই পদক্ষেপ নিয়েছিল এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি মূলত প্রধানমন্ত্রীকেই সমর্থন করে গেছেন। এটা বলা তার ঠিক হয়নি। তিনি বলতে পারতেন, সব ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করে যুগোপযোগী করা হবে। সেখানে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। যদিও এক পর্যায়ে তিনি আধুনিকায়নের কথা বলেছেন কিন্তু তার বক্তব্য অস্পষ্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকেই সমর্থন করে গেছেন।

খালেদা জিয়া ন্যায়পালের কথা বলেছেন, এক্ষেত্রে আমি বলবো- একটি ন্যায়পাল দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং বিভিন্ন সেক্টরে বা বিভাগে ন্যায় পাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ন্যায় পাল নিয়োগ করা যেতে পারে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত বছর ধরেই বলে আসছেন গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা, কিন্তু তিনি আজো চিকিৎসকদের গ্রামে পাঠাতে পারেননি। তাই খালেদা জিয়ার উচিত ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা পারেননি আমি তা করবো, গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি কমিউনিটি হাসপাতালে দুইজন করে চিকিৎসক থাকা নিশ্চিত করবো। কিন্তু খালেদা জিয়া এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি। জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, খালেদা জিয়া শিল্প ও শিল্পায়নের বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন, কিন্তু যারা এর চালিকা শক্তি তাদের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। অর্থাৎ শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নে তিনি কী ধরনের পদক্ষেপ নিবেন তা উল্লেখ করেননি। ফলে আমি মনে করি এটা তার ভিশনের বড় ধরনের একটা অসম্পূর্ণতা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn