সুনামগঞ্জ :::: দেশব্যাপি শোকের আবহে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করলেও তা পালনের প্রয়োজন বোধ করেনি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ আগস্ট থেকে সকল ইউনিয়ন পরিষদে জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকীর ড্রপডাউন ব্যানার টানানোর নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ড্রপডাউন ব্যানার টানাননি তিনি। জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি ইউনিয়ন পরিষদে। সদর ইউনিয়ন পরিষদে ড্রপডাউন ব্যানার টানানো হয়নি এবং জাতীয় শোক দিবসেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি ; প্রাথমিক তদন্তে এমন সত্যতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
রবিবার জাতীয় শোক দিবসে সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের এমন কর্মকা-ের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের আর্দশের লোকজন। ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেছেন, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদারের দাদা আবুল মনসুর আহমেদ তালুকদার (লাল মিয়া) ছিলেন জেলার কুখ্যাত রাজাকার। তার বাবা শামছুল আলম তালুকদার ঝুনু মিয়াও ছিলেন রাজাকার। সুতরাং রাজাকারের ছেলে ও নাতির কাছ থেকে এমনটা পাওয়াই স্বাভাবি! তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারি আদেশ কেন লঙ্গন করেছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদারের সাথে কথা বলতে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বেশ কয়েক বার চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি। অবশ্য সদর ইউপি সচিব অশেষ কুমার তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেছেন,‘ড্রপডাউন ব্যানার ১ আগস্ট তারিখে টানানো হয়েছিল। গত দুইদিন আগে ঝড়-তুফানে ব্যানারটা পড়ে গিয়েছিল। আরেকটি ব্যানার অফিসে লাগানো হয়েছে। রবিবার সকালে পতাকা লাগানো হয়েছিল। আবহাওয়া খারাপ থাকায় পতাকাটি খুলে রাখা হয়েছে।’ মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র জামালগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক আকবর হোসেন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন,‘ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স্বাধীনতা বিরোধী মতাদর্শের দাদা ও বাবার পথ অনুসরণ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদে ব্যানার ও জাতীয় পতাকা অর্ধনির্মিত না রাখায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আমরা বিষয়টির নিন্দা জানাই।’ জেলা যুবলীগের সদস্য আবুল আজাদ বলেন,‘ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাবা ও দাদা রাজাকার ছিল। এই চেয়ারম্যান কিভাবে জাতির পিতার শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করবে ?
জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাইকোবাদ টিপু বলেন,‘সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদে ব্যানার ও জাতীয় পতাকা অর্ধনির্মিত না রাখায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ’ জামালগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম (কলমদর) বলেন,‘ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য শোকের দিন। পুরো মাসই শোকের মাস। সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ড্রপডাউন ব্যানার টানানোর কথা থাকলেও চেয়ারম্যান এবং সচিব সেটা উপেক্ষা করেছেন। এমনকি জাতীয় শোক দিবসেও পতাকা অর্ধ নিমিত রাখা হয়নি। চেয়ারম্যানের দাদা আবুল মনসুর আহমেদ তালুকদার (লাল মিয়া) ছিলেন রাজাকার। লাল মিয়ার নাতি সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার রাষ্ট্রীয় আদেশ অমান্য করে জাতীয় শোক দিবসে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’
জামালগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার বিশ^জিৎ দেব বলেন,‘খবর পাওয়ার পরপরই পতাকা কমিটির সভাপতি থানার ওসি সাহেবকে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পরিষদে ড্রপডাউন ব্যানার ও জাতীয় পতাকা দেখতে পাননি। এই বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখা চাওয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। ’ জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন,‘ মাসিক সমন্বয় সভায় জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরকে ড্রপডাউন ব্যানার ও শোক দিবস পালনের জন্য বলা হয়েছে। ড্রপডাউন ব্যানার না টানানো ও জাতীয় শোক দিবসেও জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখা না হলে সরকারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকীর ড্রপডাউন ব্যানার টানানো ও জাতীয় পতাকা অর্ধনির্মিত রাখা হয়নি বলে অভিযোগ পেয়েছি। এজন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে জবাবদিহী করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার দাদা আবুল মনসুর আহমেদ তালুকদার (লাল মিয়া) ছিলেন রাজাকার। অভিযোগ রয়েছে, তার বাবা শামছুল আলম তালুকদার ঝুনু মিয়াও ছিলেন রাজাকার। দুই জনই মারা গেছেন।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২৪৮ বার