জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ঝুনু মিয়া সহ ৩ যুদ্ধপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম ঝুনু মিয়াসহ ৩ জনকে আসামী করে যুদ্ধাপরাধ আইনে মামলা দায়ের করেছেন জামালগঞ্জের সদরকান্দি গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি আব্দুল গনি’র ছেলে মো. আব্দুল জলিল। মামলার অপর আসামীরা হলেন জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষীপুর ইউনিয়নের মফিজ আলী’র ছেলে মো. মজনু মিয়া (৬৬) এবং একই গ্রামের আবুল খয়েরের ছেলে এনাম উদ্দিন (৬২)। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু আমর এই মামলা গ্রহণ করেন এবং তদন্তের জন্য যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুানালে প্রেরণের আদেশ দেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়- সামছুল আলম ঝুনু মিয়ার পিতা মৃত আবুল মনসুর আহমদ লাল মিয়া ছিলেন পাক হানাদার বাহিনীর দোসর, দুর্দান্ত ও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার বাহিনীর প্রধান এবং শান্তি কমিটি, আল বদর, আল সামস বাহিনীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। অপরাধ কর্মের সময় আসামী মো. সামছুল আলম ঝুনু মিয়াকে সঙ্গে রাখতেন। দুজন মিলেই সব অপকর্ম করেছেন। আবুল মনসুর আহমদ লাল মিয়া মারা যাওয়ায় তাকে আসামী করা গেল না। মামলার বাদী উল্লেখ করেন ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সকাল ৮ টায় মামলার ৩ আসামীসহ তাদের সহযোগী ১২-১৪ জন রাজাকার অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের বাড়িতে ওঠে এবং তার বাবাকে খুঁজে। বাবাকে না পেয়ে বাড়ির অন্যান্যদের বেঁধে অমানসিকভাবে মারপিট ও লুটতরাজ চালায়। পরে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। মামলায় এধরনের আরো কয়েকটি অমানবিক ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়।১৮ সেপ্টেম্বর জামালগঞ্জ থানাধীন কালীপুর গ্রামের মৃত. মহরম আলীর পুত্র আলতাব আলীর বাড়ীতে দুপুরে আসামীসহ ১৫/১৬ জন রাজাকারের দল ও পাকসেনা আব্দুল গফুর, আলতাব আলী ও আব্দুস সামাদকে বেঁধে বাড়ীঘর লুটপাট, ধর্ষণ ও ৪টি ঘর পুড়িয়ে দেয়।
২৯ সেপ্টেম্বর রাজাকার বাহিনী প্রধান লাল মিয়ার নেতৃত্বে আসামীরা মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আল আজাদের বাড়ী ঘেরাও করে লোকজনকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। এছাড়াও স্বর্ণালংকার, গরু-বাছুর, ধান, চাউল লুট করে নিয়ে ১০টি ঘর পুড়িয়ে দেয়। ১০ অক্টোবর সকাল ৮ টায় আসামী ও পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মিয়া, নূরু মিয়া, সিকান্দার আলী, শফিকুল ইসলাম কলমদর, সুরুজ মিয়ার বাড়ীঘর ঘেরাও করে বহু নারীকে ধর্ষণ, লুটতরাজ এবং বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়। ১৩ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল গফুর’র বাড়ী ঘেরাও করে পাক সেনাসেনাদের নিয়ে আসামীরা তাঁকে খুঁজে না পেয়ে বাড়ীর লোকজনকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। পরে লুটপাট শেষে বাড়ী পুড়িয়ে দেয়। ১৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক আব্দুল হাসিম শরণার্থীদের নিয়ে বালাটে যাওয়ার পথে কাজিরগাঁও গ্রামের পাশে রাজাকার লাল মিয়াসহ আসামীরা পাকসেনাদের খবর দিয়ে নিয়ে তাদের আটক করে। মেয়েদের ধর্ষণ করে লাশ হাওরের পানিতে ফেলে দেয় এরা। আসামীরা বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করে।
২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী জামালগঞ্জ থানার কালীপুর গ্রামের মাফু মিয়াকে পাকসেনাসহ আসামীরা বাড়ীর পেছনে ডুবার কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পরে তার বাড়ীও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। জামালগঞ্জ থানার লম্বাবাঁক গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক নাগর আলী আসামী ও পাকসেনারা নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। এসময় তারা লোকজনকে মারপিট করে জখম করে। জামালগঞ্জ থানার মফিজনগরের বাসিন্দা নানু মিয়াকে ২৫ অক্টোবর ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে বালাটে যাওয়ার পথে আসামী রাজাকার ও পাকসেনারা আটক করে। ২জন মুক্তিযোদ্ধা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও নানু মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। এছাড়াও বাকী ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাজাকার লাল মিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও নেতৃত্বে আসামীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ করেছে। বাদী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন- অ্যাড. শফিকুল আলম ও আব্দুল কাদির জিলান।