বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী এতে ইতিবাচক সাড়া দেবেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) আইএমএফ সদরদপ্তরে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিটসুহিরো ফুরুসাওয়ার সঙ্গে এক বৈঠকের পর মুহিত সাংবাদিকদের সামনে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে কথা বলেন। গতবছরের শেষ দিকেও অর্থমন্ত্রী দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ২০১২ সালে যে তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১০৫ ডলার, দফায় দফায় কমে এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে তা ৩৩ ডলারে নেমে আসে।

এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের দাবির মধ্যে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ শতাংশ এবং অকটেন ও পেট্রোলের দাম ১০ শতাংশের মতো কমানো হয়। তার কয়েকদিন আগে ফার্নেস অয়েলের দাম প্রতি লিটার ৬০ টাকা থেকে ৪২ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। তেলের দাম যে পরিমাণ কমেছে, তাতে যানবাহনের ভাড়ায় তেমন কোনো পরিবর্তন না আসায় আরও কমানোর দাবি ছিল ভোক্তাদের। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মুহিত তাদের আশার কথা শুনিয়ে বলেন, তেলের দাম আরেক দফা কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তা জানুয়ারিতেই কার্যকর হতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানান- বিশ্ব বাজারে তেলের দাম আবার খানিকটা বেড়ে যাওয়ায় আপাতত জ্বালানি তেলের দাম কমছে না।

আইএমএফ এর উপ মহা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মুহিত বলেন- “আইএমএফ কর্মকর্তাদের আমি বলেছি আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি (সাবসিডি) অব্যাহত রাখতে চাই। এই মুহূর্তে আমি জ্বালানি তেলের দাম একটু কমাতে চাই। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে কমানোর ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে সে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তিনি সায় দিলেই তেলের দাম কমানো হবে।” অর্থমন্ত্রী বলছেন- অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য দেশের অর্থনীতিবিদরা তেলের দাম কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন এবং তিনি নিজেও এর সঙ্গে একমত। “সে কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। আমি আশাবাদী, প্রধানমন্ত্রী সায় দেবেন।” আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান মুহিত।

“আমি তাদের বলেছি, আগামী জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আমি কার্যকর করব। প্রথম দুই বছর ভ্যাট ১৫ শতাংশেই হবে। পরে দেখা যাবে কি করা যায়।” তবে ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে আভাস দেন অর্থমন্ত্রী। ২০১২ সালের এই ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ কার্যকর করার কথা ছিল গত বছরের ১ জুলাই থেকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পিছিয়ে দেয় সরকার। তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘আইএমএফ খুশি’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “রেমিটেন্স ছাড়া আমাদের অর্থনীতির অন্য সব সূচকই ভালো।” বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ) আওতায় আইএমএফ বাংলাদেশকে তিনবছর মেয়াদে ৯০ কোটি ৪২ লাখ ডলার ঋণ দিতে ২০১২ সালে চুক্তি করে। ২০১৫ সালে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আপাতত নতুন করে ওই ঋণ নেওয়ার আর পরিকল্পনা নেই বলে জানান মুহিত। “আমাদের রিজার্ভ ভালো, ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপরে। এই মুহূর্তে আইএমএফের ঋণের দরকার নেই। ব্যালান্স অব পেমেন্টে যখন অভাব পড়বে তখন নেব।”

বৃহস্পতিবার আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক বৈঠকের প্রথম দিনে ব্যস্ত সময় কাটান অর্থমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম ও বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশের বিকল্প পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া রয়েছেন এই প্রতিনিধি দলে ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn