জয়ের বিরুদ্ধে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা খারিজ
এনআরবি নিউজ: : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জাতিরজনকের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলাটি নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। মাননীয় জজ মার্গো কে ব্রুডি খারিজের এ আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ৩০ মার্চ। ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী জ্যাকব মিল্টন এই মামলা দায়ের করেছিলেন ব্রুকলীনে অবস্থিত নিউইয়র্ক ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে। এর আগে জয়ের ইমেজ তথা বঙ্গবন্ধু পরিবারের ভাবমূর্তি ধ্বংসের অভিপ্রায়ে এফবিআইকে ঘুষ কেলেংকারির আরেকটি মামলায় বিএনপির সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদসহ এফবিআইয়ের ঐ কর্মকর্তার জেল-জরিমানা হয়। উল্লেখ্য, মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন ও তার ছেলে রিজভী বসবাস করেন নিউইয়র্কের পার্শ্ববর্তী কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে। সর্বশেষ এ মামলার বিবরণে প্রকাশ, উপরোক্ত জ্যাকব মিল্টন নিউইয়র্ক হতে প্রচারিত একটি স্যাটেলাইট টিভির ভাড়া করা স্লোটে ‘উই আর দ্য পিপল উইথ জ্যাকব মিল্টন’ শীর্ষক একটি টক শো করেন। সেই টক শো-তে ইসরাইলি নাগরিক মেন্দি এ সাফাদিকে হাজির করে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে তার বৈঠক এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে বিরত হবার শর্তে (জয়) ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন-এমন মন্তব্য প্রকাশ করা হয়। যদিও তা পুরোপুরি অসত্য বলে জয় পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন। সাফাদির সাথে তার বৈঠক দূরের কথা কখনো সাক্ষাতও ঘটেনি বলে জয় চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সাফাদি আর কখনোই গণমাধ্যমে কিছু বলেননি। কথিত ঐ টক শো বিভিন্নভাবে প্রচারের পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারেই শুধু নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিতদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। তবে তা সহিংস হয়নি কিংবা মারদাঙ্গা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে নিউইয়র্কে কেউ জানে না। এমনকি নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টেও কোন অভিযোগ করা হয়নি বলে মাননীয় আদালতে উপস্থাপন করা হয়। জ্যাকব মিল্টন তার মামলায় অভিযোগ করেছিলেন যে, জয় এবং তার সমর্থকরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে, বাংলাদেশে এবং নিউইয়র্কে তার আত্মীয়-স্বজনকে গুম করার হুমকি, তাকেও নানাভাবে হয়রানি, এমনকি নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের নিকটে তার বাসায় অগ্নি সংযোগ এবং বাসার সামনে রাখা গাড়ি ভাংচুর করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জয় এবং তার দল আওয়ামী লীগের অপপ্রচারে তার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেছিলেন। তার মক্কেলরা ভয়ে আসছেন না আইনগত সেবা নিতে-এ তথ্যও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে ঐ ক্ষতিপূরণের মামলায়। দায়েরকৃত ঐ মামলায় আরো উল্লেখ করা হয় যে, ঐ টক শো বন্ধ করায় তার কাজকর্মের তথ্য সর্বসাধারণ জানতে পারছে না। ফলে তার মক্কেলরা সেবা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, একইসাথে তার আয় কমেছে। এসব ঘটনা বিবৃত করে ৫০০ মিলিয়ন ডলার (৪ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয় এই মামলায়। এর নম্বর ছিল ১: ১৬-সিভি-০৪৫৪২-এমকেবি-জেও।
এই মামলায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকেও বিবাদি করা হয়েছিল। এজন্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানও পৃথক আইনজীবী নিয়োগ করেছিলেন মামলায় লড়ার জন্যে। নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কোয়ারে প্রখ্যাত একটি ল’ ফার্ম ভাড়া করেছিলেন জয়। এই ল’ ফার্মের মাধ্যমে তিনি উপরোক্ত মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে প্রচলিত আইনে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করেন এবং ন্যায়ের স্বার্থে তা খারিজের আবেদন জানিয়েছিলেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট জজ জেমস ওরেস্টাইন ১ মার্চ সুপারিশ করেছিলেন এ মামলাটি খারিজের। ইউএস এটর্নী অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে এ সম্পর্কে ৬ এপ্রিল শুক্রবার বাজারে আসা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন-উত্তর আমেরিকা সংস্করণ’-এ বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ফেডারেল কোর্টের নথি অনুযায়ী, মিল্টন এই মামলা দায়ের করার ৫ মাস পর গত বছরের ২৫ জানুয়ারি জয়ের আবেদনে অভিযোগগুলো খারিজের প্রাক-শুনানীর দিনই মাননীয় আদালত সবগুলো অভিযোগ নাকচের সিদ্ধান্ত নিলে মিল্টন পুনরায় সংশোধিত আকারে অভিযোগ পেশ করার অনুমতি নেয়। এর ৮ সপ্তাহ পর পেশ করা অভিযোগে দেখা যায় যে, প্রথম অভিযোগনামার ৭টি একেবারেই নেই। যদিও সেগুলো সংশোধন করার অনুমতি নেয়া হয়।
এ মামলায় জয়ের আইনজীবী অত্যন্ত সুন্দরভাবে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। এটিই তার একমাত্র অপরাধ। তাহলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির অজ্ঞাত সমর্থকরা যদি কাউকে আক্রমণ করে কিংবা গালি দেয়, সে দায় কী ইভাঙ্কা ট্রাম্পের ওপর বর্তাবে? এই মামলায় জ্যাকব মিল্টন নিজেকে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন বলে দাবি করলেও কয়েক মাস আগে নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে আরেকটি মামলা করেছিলেন বিএনপির মালিকানা দাবিতে। সেই মামলাও মাননীয় আদালত নাকচ করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাদের আবেদনের পর। জয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলায় পিলখানা বিদ্রোহ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিলিয়ন ডলার চুরি, বাংলাদেশে গুম-খুন, সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার-নির্যাতনের কথাও বিবৃত করা হয় এবং নানাভাবে সবকিছুর দায় জয়ের ওপর চাপানোর চেষ্টা সক্রিয় ছিল। মামলাটি খারিজের সংবাদে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী। ‘এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’র স্বপ্নদ্রস্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ক্লিন ইমেজের স্পষ্ট প্রমাণ মিললো মার্কিন আদালতে’-মন্তব্য জাকারিয়ার। তিনি আওয়ামী পরিবারের সকলকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার আহবানও জানিয়েছেন।