ট্রাম্পের পক্ষের ‘সেভ আমেরিকা’ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুজনের মধ্যে খুব ভালো ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ট্রাম্প এখন শক্তিশালী। অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে তাঁর সমর্থন পাওয়া অনেক বেশি তাৎপর্যের। ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর ম্যাককার্থি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, একটি ঐক্যবদ্ধ রক্ষণশীল আন্দোলনই দেশের নাগরিকদের বন্ধন বৃদ্ধি করবে, স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখবে। বিবৃতিতে বলা হয়, গত নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করায় প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের ১৫টি আসন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। যদিও নির্বাচনের আগে উল্টো ঘটনা ঘটবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ শুরু হয়ে গেছে। ওই নির্বাচনে রিপাবলিকান দলকে সাহায্য করার জন্য ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফলাফলে জো বাইডেনের বিজয় বাতিল ঘোষণার পক্ষে কংগ্রেসে ভোট দিয়েছিলেন ম্যাককার্থি। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সহিংস ঘটনার পর দেওয়া এক বক্তৃতায় অবশ্য তিনি বলেছিলেন, সমর্থকদের উসকানি ও সহিংসতায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ট্রাম্পের কিছুটা দায় রয়েছে। ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার জেরে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ১০ জন রিপাবলিকান ভোট দিয়েছিলেন। ম্যাককার্থি ভোট দিয়েছিলেন বিপক্ষে।

প্রতিনিধি পরিষদে দলের নেতা হিসেবে রিপাবলিকানদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে ম্যাককার্থিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে দলের বেশ কিছু আইনপ্রণেতার নির্বাচিত হয়ে আসাটা এখনই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এসব দুর্বল প্রার্থীর জয়ের জন্য ট্রাম্পের সমর্থন প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। নানা নাটকীয়তার পর গত ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়েন ট্রাম্প। তারপর থেকে তিনি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে অবস্থান করছেন। সেখানে গলফ খেলে তাঁর সময় কাটছে। ক্ষমতার পুরোটা সময় যুক্তরাষ্ট্র মাতিয়ে রেখেছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতা ছাড়ার পর তিনি অনেকটাই চুপচাপ ও একা হয়ে যান। কিন্তু এখন ট্রাম্পের ফের সক্রিয় হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ মুহূর্তে প্রতিনিধি পরিষদ তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ করে। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর এখন তাঁর অভিশংসন দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া মার্কিন সিনেটে শুরু হয়েছে। এই বিচারপ্রক্রিয়া মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে ক্ষমতাহীন অবস্থায়ও রাজনীতির অঙ্গনে আলোচনায় থাকতে তৎপরতা শুরু করেছেন তিনি।

ক্ষমতা ছাড়ার পর রক্ষণশীলদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, আমেরিকার ৬২ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের ওপর বিরক্ত। কিন্তু রিপাবলিকান ও রক্ষণশীলদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। রিপাবলিকান দলের ৮১ শতাংশ মানুষের মধ্যে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ইতিবাচক অনুমোদন রয়েছে। অথচ, মধ্য জানুয়ারিতে রিপাবলিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ছিল ৭৬ শতাংশ।বহু রিপাবলিকান মনে করছেন, ট্রাম্পের সমর্থন ছাড়া ডেমোক্র্যাটদের মোকাবিলার সামর্থ্য তাঁদের নেই। উদার রক্ষণশীলেরা ট্রাম্পের সঙ্গ ছাড়ার চেষ্টা করলেও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাঁকে পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়ার অবস্থা তাঁদের নেই। ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর রিপাবলিকান দলে তাঁকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তবে রিপাবলিকান দলে এখনো ট্রাম্পের ভালোই সমর্থন রয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদে ১০ ও সিনেটে ৫ জন রিপাবলিকান ছাড়া আর কাউকে সরাসরি ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। ট্রাম্প সরাসরি না বললেও তাঁর পক্ষের লোকজন প্রচার করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট পৃথক রাজনৈতিক দল করতে পারেন। অথবা তিনি নিজস্ব রক্ষণশীল প্ল্যাটফর্ম গঠন করবেন। এমন কথাবার্তায় রিপাবলিকান নেতৃত্ব ট্রাম্পকে চটাতে চাচ্ছে না।

এদিকে, অভিশংসন মোকাবিলাসহ ক্ষমতা-পরবর্তী ঘটনাবলি মোকাবিলার জন্য রিপাবলিকানদের হাতে রাখার প্রয়োজন বোধ করছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, তাঁর নির্বাচনে জালিয়াতির ভুয়া দাবির সঙ্গে যাঁরা একমত হননি, ক্ষমতার শেষ সময়ে যাঁদের সহযোগিতা পাননি, তাঁদের শায়েস্তাও করতে চান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn