তালেবানের আক্রমণের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দাবি করেছেন, তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই তিনি দেশত্যাগ করেছেন। বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) অজ্ঞাত স্থান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই দাবি করেছেন। ভিডিও বার্তায় গনি বলেন, তিনি দেশত্যাগ করার পর তালেবান যোদ্ধারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে তার সন্ধানে প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে। এছাড়া আমি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আফগান সংকটের কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে না বলে আগেই জানিয়েছিল তালেবান।

গত রোববার তালেবান যখন কাবুলের প্রবেশ পথগুলোতে পৌঁছে যায় তখন আশরাফ গনি নগরীর বিমানবন্দর ব্যবহার করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। অনেক জল্পনা শেষে বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাত জানায়, মানবিক কারণে গনি ও তার পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ভিডিও বার্তায় আশরাফ গনি তার আগের দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন, রক্তপাত ও বিপর্যয় এড়াতে তিনি আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন। তা না হলে তার ভাষায় আফগানিস্তানের পরিণতি হতো সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় চার গাড়ি ও একটি হেলিকপ্টার বোঝাই করে টাকা নিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে তা অস্বীকার করেন সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট। তিনি দাবি করেন, পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ব্যক্তিগত জিনিসপত্রই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি। এমনকি নিজের স্লিপারটি পরিবর্তন করে জুতা পায়ে দেওয়ার সুযোগই পাননি!

পলাতক সাবেক এই আফগান প্রেসিডেন্টর দাবি, আফগানিস্তানে অবস্থান করলে তালেবান যোদ্ধারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করতো না হলে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর মতো ল্যাম্পপোস্টে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হতো। তবে পরিস্থিতির কারণে দেশ ছেড়ে পালালেও তিনি ফের আফগানিস্তানে ফিরবেন বলে দাবি করেছেন। ফেসবুকে নয় মিনিটের ওই ভিডিও বার্তায় আশরাফ গনি বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে কাবুলকে সিরিয়া বা ইয়েমেন হতে দেওয়া যাবে না। আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ওখানে থাকলে রক্তপাত ঘটতোই।’

উল্লেখ্য, তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি রোববার বিকেলে কাবুল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাথে প্রায় ১৭ কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন তাজিকিস্তানে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত। তাজিকিস্তানে আফগান রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ জহির আগবার অভিযোগ করেছেন, গনি রোববার যখন দেশ ছাড়েন তখন তার সাথে করে তিনি ১৬ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার নিয়ে যান। গনির আফগানিস্তান ত্যাগকে ‌‘দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে বর্ণনা করেন।

কাবুলে রাশিয়া দূতাবাসের মুখপাত্র নিকিতা ইশচেঙ্কো বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তি ছিল চারটি গাড়ি, তাছাড়া একটি হেলিকপ্টারেও অর্থের একটি অংশ তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জায়গা না হওয়ায় অনেক অর্থ টারমার্কে ফেলে যায়।’ প্রথম শোনা যায় তিনি তাজিকিস্তানে গেছেন। পরে জানা যায় উজবেকিস্তানে। এর পর দিন খবর আসে তাজিকিস্তান কিংবা উজবেকিস্তান নয় গনি চলে গেছেন ওমানে। তবে ওমান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত না করায় গনি কোথায় গেছেন তা নিয়ে ধোয়াঁশা তৈরি হয়। পরে ক্ষমতাচ্যুত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বর্তমানে আবু ধাবিতে রয়েছেন বলে বুধবার নিশ্চিত করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে পালানোর সময় বিপুল পরিমাণ টাকা সঙ্গে করে নেওয়ার পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট গনির এমন পলায়ন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা পালিয়ে যাওয়ার জন্য তার সমালোচনা করেছেন। অনেকে বলছেন, ওইদিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের কথা বলে গনি পালিয়ে যান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn