ডলুরা শহীদ সমাধির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন
সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী ডলুরা এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সমাধিস্থলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন হয়েছে। এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। সমাধিস্থলের ফটকসহ ভেতরের শহীদ সমাধিগুলোর পাশে নতুনভাবে ফলক নির্মাণ করে তাতে শহীদদের নাম-ঠিকানা লাগানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে এই উন্নয়নকাজের উদ্বোধন হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, ধরমপাশা ও জামালগঞ্জ) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ শামীমা শাহরিয়ার, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, সুনামগঞ্জ মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল কবির রুমেন, মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ ও আবু সুফিয়ান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসমিন নাহার রুমা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন। অতিথিরা ডলুরা পৌঁছে প্রথমে শহীদ সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের যুদ্ধদিনে যাঁরা এই এলাকায় শহীদ হন তাঁদের মৃতদেহগুলো এক জায়গায় এনে রাখতেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়া। তিনি লেখাপড়া জানতেন না। তাঁর একটি ছোট্ট নোটবুক ছিল। এই নোটবুকেই ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করার আগে নাম-ঠিকানা লিখে রাখতেন। এভাবে তিনি ডলুরায় ৪২ জন মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত এবং একই স্থানে ছয়জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ দাহ করেন। এই শহীদদের মধ্যে সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা রয়েছেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে এই গণকবরকে ঘিরে শহীদ স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়। শুরুতে স্মৃতিসৌধের চারদিকে পাঁচ ফুট উঁচু সীমানা দেয়াল এবং ৪৮ শহীদের একটি নাম ফলক নির্মাণ করে দেন ৫ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এ এস হেলাল উদ্দিন। পরবর্তীতে তাঁর অর্থায়নেই এখানে দর্শনার্থীদের জন্য রেস্ট হাউস নির্মাণ হয়। ২০০৮ সালে জেলা পরিষদ এখানে ‘ছায়াকুঞ্জ’ নির্মাণ করে। ২০১১ সালে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য। সম্প্রতি প্রশাসন ও সুনামগঞ্জ মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের উদ্যোগে আবার স্মৃতিসৌধের উন্নয়ন কাজ হয়েছে।