ঢাকায় ঈদ কলকাতায় শপিং
ঈদের কেনাকাটা করতে প্রতিবেশী দেশ ভারত যাচ্ছেন বিত্তশালী ক্রেতারা। এজন্য রাজধানীর ঈদের বাজারে দামি পোশাকের ক্রেতা কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। পহেলা জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ভারতীয় ভিসায় ই-টোকেন পদ্ধতি তোলার কারণে সহজ হয়ে গেছে ভারতের ভিসা পাওয়া। চিকিৎসা, কেনাকাটা, ব্যবসার জন্য এখন দেশ থেকে ভারতে যাওয়ার হার অনেক বেড়েছে। আর ঈদকে সামনে রেখে শুধু কেনাকাটা করার জন্য এখন ভারতে যাচ্ছেন এমন লোকের সংখ্যা বেশি। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর শরীফ জানান, ১২ থেকে ১৮ই জুন বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে কলকাতায় গেছেন ৩১৩০০ জন। এবং ২৬,৬০০ জন একই সময়ে কলকাতা থেকে দেশে এসেছেন। যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে এখন কলকাতায় যারাই যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই কেনাকাটা করে ফিরছেন। এখনো কলকাতায় ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। শুধু বেনাপোল বর্ডার নয় আরো কয়েক হাজার লোক গত এক সপ্তাহে বিমানে করে কলকাতা গেছেন।
অভিজাত শপিংমল বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে শুরু করে ইস্টার্ন প্লাজা, চাঁদনি চক, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, মালিবাগের মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, সেন্টার পয়েন্ট, আনারকলি মার্কেট, কনকর্ড টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস, নাভানা বেইলি স্টার, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, মগবাজারের বিশাল সেন্টার, গুলশান পিংক সিটি, নাভানা টাওয়ার, কনকর্ড পুলিশ প্লাজা, বঙ্গবাজার, রাজধানী সুপার মার্কেট, মাসকট প্লাজা, নর্থ টাওয়ার, বেলি কমপ্লেক্স, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, আলাউদ্দিন টাওয়ার, আমির কমপ্লেক্স, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, রাফা প্লাজার কাপড়ের ব্যবসায়ীরা এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ধনী ক্রেতাদের। লাখ লাখ টাকা তারা বিনিয়োগ করে বসে আছেন ভারতীয় বিভিন্ন সিনেমা, নাটকের অভিনেতা অভিনেত্রীদের নামীয় কাপড়ে। প্রতি বছরই দেশীয় বাজারে ভারতীয় কাপড়ের কদর থাকে। বিক্রি ভালো ও ক্রেতাদের আগ্রহ থাকার কারণে ব্যবসায়ীরাও এসব কাপড়ে বিনিয়োগ করেন টাকা। কিন্তু এ বছর আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ার কারণে তারা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। ভারতীয় কাপড়ে লাভের পরিমাণও অনেক বেশি। ঈদ শেষ হয়ে গেলে এই দামি কাপড়গুলো দোকানের জন্য বোঝা হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী। বসুন্ধরা শপিং মলের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি বছর ভারতীয় পোশাকের ছড়াছড়ি থাকে। এ বছরও তার কমতি নাই। কিন্তু দামি কাপড়ের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয় ভিসা সহজ করে দেয়ার কারণে এখন সবাই খুব সহজেই ভারতের বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে শপিং করছেন। আগে যেখানে ভারতীয় কাপড়ের জন্য আমাদের কাছে ক্রেতারা ভিড় করতেন। এখন কাপড়ই তারা ভারত থেকে কিনছেন। এতে করে ব্যবসায়ীদের দামি কাপড়ের পেছনে যে বিনিয়োগ হয়েছে সেটা বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। অভিজাত শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কের অবস্থা একই। ব্যবসায়ীরা জানান, মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা আসছেন। তাদের সাধ্যমত কাপড় কিনছেন। কিন্তু ধনী ক্রেতাদের আনাগোনা কম। এমনিতে সব ধরনের পোশাকই কমবেশি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমরা যে ধরনের ক্রেতার অপেক্ষা করছি তারা আসছেন না। এজন্য আমাদের বিনিয়োগের সিংহভাগ টাকা আটকে আছে। মৌচাক মার্কেটের ফাতেমা শাড়ি কালেকশনের ব্যবস্থাপক জহির জানান, প্রতিবছর তারা নরমাল কাপড়ের সঙ্গে বিদেশি কিছু কালেকশন রাখেন। কিন্তু এ বছর যে ক্রেতারা আসছেন তারা দামি শাড়ির প্রতি তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ১ হাজার থেকে তিন হাজার টাকার শাড়িই বেশি কিনছেন। তিনি বলেন, বড় ব্যবসায়ীদের কাছে শুনেছি ঢাকার ধনী ক্রেতারা এখন ভারত থেকে কেনাকাটা করছেন। দুই-একদিন সময় নিয়ে তারা কলকাতায় গিয়ে কেনাকাটা সেরে আবার চলে আসছেন। চাঁদনীচকের কাপড়ের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় কাপড়ে বিনিয়োগ লাখ লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে কম দামের কাপড়। যে টার্গেট করে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা এখন পূর্ণ হবে না। কারণ সম্ভাব্য ক্রেতারা এখন দেশের বাহিরে। একই কাপড় ভারত থেকে কম দামে নিয়ে আসছেন। ধানমন্ডির নুর মোহাম্মদ নামের এক ব্যবসায়ী জানান, পাঁচ মাস আগে তিনি ভারতের ভিসা পেয়েছেন। এখনো মেয়াদ আছে। ব্যস্ততার কারণে এখনো কেনাকাটা করা হয়নি। এই বৃহস্পতিবার রাতে তিনি কলকাতার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিবেন। কেনাকাটা করে আবার শনিবারে ঢাকা আসবেন। তিনি বলেন, দেশের বাজারে এখন ভারতীয় পোশাকে ছড়াছড়ি। ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে এসব পণ্য এনে দ্বীগুণ দামে বিক্রি করছে। তাই ভাবলাম এই কাপড় ভারতে থেকে অনেক কমে কেনা যাবে। তিনি আরো বলেন, আমার পরিচিত অনেকেই ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে কেনাকাটা করে ফিরেছে। তাদের কাছ থেকে শুনেছি কলকাতার বিভিন্ন মার্কেটে এখন বাংলাদেশিদের আনাগোনাই বেশি। এবং দেশের থেকে অনেক কমদামে ভালো কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। গুলশানের একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ভারতে যাওয়া এখন খুব সহজ। আর দেশের বাজারে ভারতীয় কাপড়ই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তাই উচ্চবিত্তরা এখন কলকাতামুখী। প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজও সারা যাচ্ছে আবার ঈদ সামনে তাই কেনাকাটা করা যাচ্ছে।