তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে গ্রাম যেভাবে হবে শহর
গ্রামকে শহর করা হবে, নাকি শহরের সব সুবিধা গ্রামেও পৌঁছানো হবে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইশতেহারেই বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছানো হবে। আর এই সেবা পৌঁছাতে গেলে প্রয়োজন মাধ্যম। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডিজিটাল মাধ্যমই হলো একমাত্র মাধ্যম—সহজে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে এছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ নেই।
শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি দেশের সব জায়গায় সুষমভাবে পৌঁছাতে হলে, এসব ডিজিটাল মাধ্যমেই নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় দূরশিক্ষণ বা অনলাইন স্কুল, চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যে টেলিমেডিসিন সেবা হতে পারে উত্তম বিকল্প। এজন্য প্রয়োজন কানেক্টিভিটি তথা ইন্টারনেট। ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাতে পারলে গ্রাম বা প্রান্তিক অঞ্চলে বসেই মানুষ শহরের সব সেবা ভোগ করতে পারবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমরা ঠিক করেছি জমির পর্চা, জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে সরকারের যত সেবা আছে. তা সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও একজন মানুষ যেন এসব সেবা সুবিধা পায়,তা নিশ্চিত করতে হবে।’ সেবার সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘আমরা সরকারের ২ হাজার ৭৬০টি সেবা খুঁজে বের করেছি। এর মধ্যে ৯০০ সেবা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক আছে। এগুলো পৌঁছাতে হলে অ্যাপস বা ওয়েব সাইট—যা করার প্রয়োজন সরকার তা করবে।’ মন্ত্রী আরও বলেন,‘আমরা এ-ও ঠিক করেছি যে, এসব সেবা শুধু চিহ্নিত করলেই হবে না, তা যেন জনগণের কাছে পৌঁছে। আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জনগণ যেন এসব সেবা স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে পায়। স্মার্ট ডিভাইস মানেই যে কম্পিউটার হতে হবে তা নয়। জনগণ যেন হাতের স্মার্টফোনের মাধ্যমেই তা পায়।’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য স্মার্টফোন সহজলভ্য করতে হবে এবং আমাদের জন্য স্মার্টফোন সহজলভ্য করা অনেক সহজ।’
তিনি জানান, দেশে বর্তমানে ৯ কোটি মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার হচ্ছে, এর মধ্যে ৩০ ভাগ হলো স্মার্টফোন। থ্রিজি ও ফোরজি জনপ্রিয় করতে হলে স্মার্টফোনের ব্যবহারের হার বাড়াতে হবে। কারণ, সরকারের এসব সেবা পেতে হলে থ্রিজি, ফোরজি এমকি ফাইভজিও প্রয়োজন হবে। স্থানীয়ভাবে মোবাইল উৎপাদন করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য বৈধ সেট দেশে প্রবেশ করাতে আইএমইআই ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, মোবাইলে নতুন ধরনের প্যাকেজের পরিকল্পনা করা হয়েছে, এমন কোনও উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা যে, সংশ্লিষ্ট মোবাইল উৎপাদনকারীদের অল্প কিছু টাকা দিয়ে ব্যক্তি ব্যবহারকারী তার হাতের ফিচার ফোনটি স্মার্টফোনে আপডেটেড করে নিতে পারেন। এটা করা সম্ভব হলে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানো যাবে অল্প সময়ের মধ্যে।
জানা গেলো, সরকারের এই সেবাগুলো (৯০০টি) রেডি হলে অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে স্মার্টফোনের জন্য্। সরকারের এসব সেবা পেতে হলে তখন তা অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে। সেবাগুলো রেডি হতে দুই বছরের মতো সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্র আরও জানায়,দেশীয় মোবাইল সেট উৎপাদকদের যদি মার্কেট শেয়ার তখন বেড়ে যায়, তাহলে বিশেষ বিশেষ অ্যাপস মোবাইলে বিল্ট-ইন (প্রি-ইন্সটলেশন) করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ আরও যা কিছু আছে, সব মিলিয়ে সেবাগুলো ডিজিটাল ফরম্যাটে আনতে দুই বছর বা তারও কিছু বেশি সময় লেগে যেতে পারে। যেহেতু ৯০০ অ্যাপ স্মার্টফোনে একসঙ্গে ব্যবহারের সুযোগ নেই, ফলে সবগুলো মিলিয়ে একটি কম্বাইন্ড অ্যাপ তৈরি করা হতে পারে। সেই অ্যাপ স্মার্টফোনে ব্যবহার করলে একটি থেকেই সব ধরনের সেবা সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। ফলে গ্রাম বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও একজন মানুষ শহরের অনেক সুবিধা পাবেন। শহরের সব সুবিধা গ্রামে নিশ্চিত করা গেলেই সরকারের এই উদ্যোগ সফল হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। আর এই উদ্যোগ সফল হলে দেশে কর্মসংস্থানও বাড়বে। ৯০০ সেবা ডিজিটাল করা গেলে সরকারের ঘোষিত এক কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশই তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে পূরণ করা সম্ভব হবে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।